লন্ডনে দুই দিনব্যাপী ইউকে-বাংলাদেশ ই-কমার্স ফেয়ারের উদ্বোধন করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। শুক্রবার মেলার উদ্বোধনী বক্তব্যে তোফায়েল আহমদ বাংলাদেশকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ আখ্যা দিয়ে বলেন, তথ্য প্রযুক্তি খাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাইওনিয়ার হবে বাংলাদেশ।
এ সময় তিনি বৃটেন প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ, পাট ও এগ্রো প্রসেসিং শিল্পকে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও লাভজনক বিনিয়োগের খাত হিসেবে উল্লেখ করেন তোফায়েল আহমেদ। বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধি হার আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসনীয় হচ্ছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, একটি সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশে বিদেশী বিনিয়োগের সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে জানান তিনি। মন্ত্রী ইউরোপে শুল্কমুক্ত ওষুধ রপ্তানির ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগের কথা জানান। যা আগামী ৭ বছরের জন্য কার্যকর থাকবে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলক বাংলাদেশের হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ সম্ভাবনার দিক তুলে ধরে বলেন, দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরকে ডিজিটাল রূপ দিতে আগামী ২ বছরে ১ লাখ তরুণকে আইসিটি ট্রেনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি দেশের সকল বিভাগে হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার সরকারি উদ্যোগের কথা জানান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান, বৃটেনের অল পার্টি পার্লামেন্টারি কারি গ্রুপের চেয়ার পল স্কেলি এমপি, জন রেডউড এমপি, সেকেন্ড ই-কমার্স ফেয়ারের অন্যতম স্পন্সর এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ ওবিই, প্রধান আয়োজক কম্পিউটার জগৎ-এর চিফ এক্সিকিউটিভ আব্দুল ওয়াহিদ তমাল, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট আবদুল মতলুব আহমদ ও ইভেন্ট ডাইরেক্টর রহিমা মিয়া।
বৃটিশ এমপি পল স্কেলি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভুয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে বৃটেনে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। এখানে বসবাসরত বাংলাদেশীরা চাইলে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন। বাংলাদেশীদের হাতে গড়া কারি শিল্প বৃটিশ অর্থনীতিতে প্রতিবছর যোগ করছে প্রায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড জানিয়ে পল স্কেলি বাংলাদেশের আইসিটি খাতে বৃটিশ বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
মেলার উদ্বোধনের আগে লন্ডনের অভিজাত ক্রিস্টাল ভেন্যুতে আয়োজিত নৈশ্যভোজে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, হাউজ অব লর্ডস সদস্য ব্যারোনেস পলা মঞ্জিলা উদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট আব্দুল মতলুব আহমদ, বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মাশিয়াল কন্সোলার শরিফা খান, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিবিসএ)‘র প্রেসিডেন্ট পাশা খন্দকার, ইউকেবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট বজলুর রশীদ এমবিই, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ, বৃটিশ কারি এওয়ার্ডের ফাউন্ডার এনাম আলী এমবিই, মেলার অন্যতম আয়োজক টেকশেড-এর চিফ এক্সিকিউটিভ সুশান্ত দাশগুপ্তসহ শতাধিক ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ।
আইসিটি মন্ত্রণালয়, হাইটেক অথোরিটি ও কম্পিউটার জগতের উদ্যোগে আয়োজিত দ্বিতীয় ই-কর্মাস ফেয়ারে বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের তথ্যপ্রযুত্তি বিষয়ক অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
আগামী ১৪ই নভেম্বর পর্যন্ত এই মেলা চলবে । বৃটেনের আইটি ও টেলিকমিউনিকেশ সেক্টরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে দুই দিনব্যাপী ই-কমার্স ফেয়ারের মোট ৬টি পৃথক সেমিনার ছাড়াও আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতিতে বিটুবি সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ই-কর্মাস ফেয়ারের উদ্বোধনী দিনে চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথোরিটির মোট ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মোট চারটি প্রতিষ্ঠান আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এই বিনিয়োগের ব্যপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।