ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত অর্থসংরক্ষণে (প্রভিশন) ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি খাতের ৫ ব্যাংক। এতে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে এ ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। আর এ সময়ে ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে দুই হাজার ৩২৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিংয়ের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর ’১৫ শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক খাতের সোনালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৩৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। যা তিন মাস আগে ছিল এক হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। এ সময়ে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক খাতের বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭২৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। রাষ্ট্রীয় অপর বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ২৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের ৫৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকার প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর ’১৫ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা, যা তিন মাস আগে ছিল ৫২ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে দুই হাজার ১৯২ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোকে শ্রেণীকৃত ঋণ ও অন্যান্য সাধারণ ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্টহারে অর্থ সংরক্ষণ করতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র মতে, ব্যাংক ব্যবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে অর্থ সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৩০ হাজার ৮৪৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ সময়ে ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করেছে ২৮ হাজার ৫২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
সে হিসেবে সেপ্টেম্বর ’১৫ প্রান্তিক শেষে ব্যাংকগুলো প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩২৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। তিন মাস আগে তথা জুন’১৫ প্রান্তিক শেষে ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, ডাউটফুল বা সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা খারাপ ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, চলতি বছরের শুরুতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ছিল। এতে ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো বাণিজ্য করতে পারেনি। এতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ব্যাংকগুলোও তাদের ঝুঁকির বিপরীতে প্রয়োজনীয় অর্থসংরক্ষণ করতে পারেনি।