বন্ধ থাকার পরও যারা বিকল্প উপায়ে ফেসবুক ব্যবহার করছেন তারা সরকারের নজরদারিতে রয়েছেন। তবে এ সংখ্যা অনেক কম। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সহসা খুলছে না ফেসবুকসহ ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপ ও ভাইবার। এ সেবাগুলো চালু হতে আর কতোদিন লাগতে পারে তাও সুনির্দিষ্ট নয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গতকাল এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, জনস্বার্থ ও জননিরাপত্তার স্বার্থে যতদিন বন্ধ থাকা প্রয়োজন, ততদিন বন্ধ থাকবে এসব মাধ্যম।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখন বলবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে, তখন এসব যোগাযোগ মাধ্যম খুলে দেয়া হবে। বিকল্প উপায়ে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন তারা সীমিত। এ জন্য তাদের ওপর নজর রাখা সরকারের পক্ষে সহজ হচ্ছে। এদিকে মোবাইল সিমের নম্বর নিবন্ধনের শেষে প্রতিটি মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নিবন্ধনের ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী বছরের এপ্রিলের পরপরই এ উদ্যোগ নেয়া হবে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মোবাইল ডিভাইসেস অ্যান্ড ইটস রোল ইন ন্যাশনাল সিকিউরিটি’ বিষয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি একথা বলেন। বৈঠকের আয়োজন করে টেলিকম সেক্টর নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি)।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, মানুষের নিরাপত্তা ও স্বস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে সিম রেজিস্ট্রেশন ও সেটের আইএমইআই নম্বর রেজিস্ট্রেশন জরুরি। সিম রেজিস্ট্রেশনের কাজটি একটি ভালো অবস্থায় আনা গেছে। এপ্রিলে সিম রেজিস্ট্রেশনের কাজ শেষ হবে। এরপর সেটের আইএমইআই নম্বর রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হবে। তা না হলে নিরাপত্তার দিকটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ফেসবুক প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খোলা হবে কবে- এমন প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া, কেউ কেউ বিকল্প পথে এসব ব্যবহার করছে জানিয়ে অন্যদের ভোগান্তিতে ফেলার কারণও জানতে চাচ্ছেন। কিন্তু তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে নিরাপত্তার খাতিরে সাময়িকভাবে মাধ্যমগুলো বন্ধ। কিন্তু যারা বিকল্প পথে এসব ব্যবহার করছেন, সেটি তারা নিরাপদভাবে ব্যবহার করছেন না। এছাড়া, নেটওয়ার্ক গতি স্লো পাচ্ছেন তারা। ধীরগতির নেটওয়ার্কের কারণে অপরাধীরা নেটওয়ার্ক গড়ার সুবিধা পাচ্ছে না। তারানা হালিম আরও বলেন, প্যারিসেও বন্ধ করা হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যম। কিন্তু তারা উষ্মা প্রকাশ করছে না। বড় কোন বিপদ ঘটে যাওয়ার পরে বন্ধ করে কী হবে? আগে থেকেই একটু প্রস্তুতি রাখা ভালো। দেশের স্বার্থে তরুণ শিক্ষার্থীরা আশা করি এ অসুবিধাটি মেনে নেবেন।
সিম ও আইএমই ট্যাগ করার সুপারিশ
মোবাইল সিম নিবন্ধনের পর মোবাইল হ্যান্ডসেট (আইএমই) নিবন্ধন করার উদ্যোগ নেবে সরকার। এরপর দুটির সমন্বয় করে তা ট্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, নকল ও অনিবন্ধিত আইএমই আছে এমন মোবাইল হ্যান্ডসেট দিয়েও নানা ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে ওই উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তারা বলেন, এর ফলে অবৈধ আইএমই নম্বরসহ হ্যান্ডসেট ব্যবহার করলে সিম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)-এর চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, হ্যান্ডসেটের আইএমই সমস্যার গুরুত্ব সংশ্লিষ্টরা সবাই জানেন। দুটি একসঙ্গে ট্যাগ করাটা আসলে চূড়ান্ত লক্ষ্য। তবে কাজটি খুব সহজ নয়।
আমি মনে করি ডিভাইস নিবন্ধনের জন্য বিটিআরসিতে আলাদা একটি ডিভাইস থাকা দরকার। ভবিষ্যতে সে চেষ্টা করা হবে। তবে বিটিআরসিতে কাজ করার জন্য যে পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন তার অর্ধেক নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বৈঠকে অংশ নেন কাস্টমস ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশনের ডিরেক্টর জেনারেল ড. মঈনুল খান, র্যাবের কমিউনিকেশন উইং পরিচালক কমান্ডার শাহেদ করিম, লার্ন এশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান, ইনভিকোর সিইও ফাওয়াদ গোরায়ের, বিটিআরসির স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মোল্লা মো. জুবায়ের, র্যাব-১০ এর কমান্ডিং অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে টিআরএনবি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম তার সূচনা বক্তব্যে জানান, দেশে এখন সক্রিয় মোবাইল সিমের সংখ্যা ১৩ কোটি ১৪ লাখ, এতে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে ৫ কোটি ৪১ লাখ গ্রাহকের কাছে। মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজার বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে হ্যান্ডসেটের সংখ্যা ছিলো ৬৪ দশমিক ৩৪ লাখ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫৩ দশমিক ১৬ লাখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টিআরএনবি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ মেহেদি।