রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে বিপুল পরিমাণ জাল মুদ্রা ও পাসপোর্টসহ ছয়জনকে আটক করেছে র্যাব। আটককৃতরা মুদ্রা জালিয়াতি ও মানব পাচারে জড়িত চক্রের সদস্য। এই চক্রটি পাকিস্তান থেকে জাল রুপি এনে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে পাচার করে আসছিল। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, আবদুল্লাহ সেলিম (৪২), মো. জাহাঙ্গীর (৪৫), আবদুল খালেক (৫৫), কামরুল ইসলাম (২৮), আবু সুফিয়ান (৪৮) ও মামুনুর রশিদ (৪৫)। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহকে ‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পাকিস্তানি নাগরিক’ বলে দাবি করেছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে এক কোটি ভারতীয় জাল রুপি, ছয় লাখ ২৪ হাজার টাকা, বিপুল পরিমাণ মার্কিন ডলার, পাকিস্তানি রুপি, দিরহাম, সৌদি রিয়াল, ২১টি পাকিস্তানি পাসপোর্ট ও মানব পাচারের কাজে ব্যবহৃত জাল সিল উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে র্যাব হেড কোয়ার্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আবদুল্লাহ ১৯৭৯ সালে পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানে যায়। ২০০২ সাল পর্যন্ত করাচিতে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি ও ফার্মেসির দোকানে কাজ করেছে। পাকিস্তানে থাকাকালীন কর্মরত অবস্থায় জাল মুদ্রা তৈরি এবং মানব পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সে। আবদুল্লাহ, জাহাঙ্গীর ও খালেক বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানব পাচার ও মুদ্রা পাচারকারী চক্রের প্রধান সমন্বয়ক বলে জানান মুফতি মাহমুদ। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ও খালেক বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে পাকিস্তান থেকে আগত যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। তারা ভারতীয় জালমুদ্রা ঢাকার কাজীপাড়া, মিরপুর, গাবতলী ও গুলিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানে আরেকটি চক্রের কাছে হস্তান্তর করে। ওই চক্রের অন্যতম সদস্য মামুনুর রশিদ। পরবর্তীতে ওই জালমুদ্রার একটি বড় অংশ আরেকটি চক্রের মাধ্যমে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় পাচার করা হয়। এর একটি অংশ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে প্রবেশ করে। এই জালমুদ্রা ক্রয় করে বাংলাদেশি নাগরিকদের অনেকে ভারতে গিয়ে প্রতারিত হন। তিনি বলেন আটককৃতরা জানিয়েছে, এই চক্রের সক্রিয় সদস্যরা দেশে অবস্থান করছে। তাদের প্রত্যেকের বাড়ি চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানায়। চক্রটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বাসিন্দা জামাল, নিস্ফল মণ্ডল, প্রশান্ত মণ্ডল ও উত্তম কুমার সিনহাসহ আরও অনেকের কাছে ভারতীয় প্রতি লাখ জালমুদ্রা ৪০ থেকে ৪৫ হাজার ভারতীয় মুদ্রার বিনিময়ে বিক্রি করতো। এ ছাড়া ভারতীয় চক্রটি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী চক্রটিকে জালমুদ্রার বিনিময়ে ভারতীয় গরু সরবরাহ করতো। ওই গরুগুলো অর্থের বিনিময়ে গাবতলীর গরু ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করা হতো। এভাবে বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে অর্থ পাকিস্তানে অবস্থানরত চক্রটির হাতে পৌঁছে যেত বলে জানান মুফতি মাহমুদ। মুফতি মাহমুদ জানান, এই চক্রটি মানব পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা জালসিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে বিভিন্ন ডকুমেন্ট তৈরি করে মানব পাচার করে আসছিল। এ ছাড়া যে সব পাকিস্তানি নাগরিক বাংলাদেশে এসে অবৈধ হয়ে যান তাদের পক্ষে জাল অনুমতিপত্র তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থান করারও সুযোগ করে দিতো চক্রটি।