ভোজ্যতেলের ঘোষণা দিয়ে তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় মাদক আইনের মামলায় পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রে ‘ত্রুটি’ থাকায় তা গ্রহণ করেনি আদালত। একইসঙ্গে র্যাবকে দিয়ে অধিকতর তদন্ত করার জন্য আদালত আদেশ দিয়েছেন। সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম রহমত আলী এ আদেশ দেন। গত ১১ই নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেছিলেন। এতে আটক ৬ জন ও তদন্তে আসা দুই বৃটিশ নাগরিক ফজলু মিয়া ও বকুল মিয়াসহ মোট আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মাদকের এই মামলায় মোট ৫৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলায় খান জাহান আলী লিমিটেডের মালিকের নাম থাকলেও তদন্তে তার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ১০ পৃষ্ঠার এই অভিযোগপত্রে তাকে অভিযুক্ত করা হয়নি। তবে এখনো একই ঘটনায় দায়ের করা চোরাচালান মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়নি। উল্লেখ্য, নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তরল কোকেন সন্দেহে গত ৬ই জুন রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার বন্দরে সিলগালা করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ৮ই জুন এটি খুলে প্রাথমিক পরীক্ষায় ১০৭টি ড্রামের কোনটিতেই কোন কোকেন না পেলেও পরবর্তীতে ২৭শে জুন ঢাকার দুই ল্যাবে ৯৬ নম্বর ড্রামে কোকেনের অস্তিত্ব পায় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। পরবর্তীতে গত ৮ই জুলাই আদালতের নির্দেশে বন্দরে গিয়ে আবারও মামলার আলামত সংগ্রহ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। সেখান থেকে তিনটি করে নমুনা সংগ্রহ করে ৩২১টি কোটায় করে আদালতের নির্দেশে সেই আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় আর্মড ফোর্সেস ফুড অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং সিআইডিতে। সেখান থেকেও ৯৬ নম্বর ড্রামে তরল কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়ার কথা জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
ফের আদালতের নির্দেশে পুনঃপরীক্ষা করে গত ৭ই সেপ্টেম্বর ৫৯ নম্বর ড্রামেও কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়ার কথা জানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ৯ই সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যদিয়ে ১০৭ ড্রাম তেলের মধ্যে ২টিতে তরল কোকেনের অস্তিত্ব মিলেছে। কোকেন পাচারের ঘটনায় গত ২৮ জুন আদালতের নির্দেশে নগরীর বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওসমান গনি বাদি হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ এর ১(খ) ধারায় জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ও সোহেলকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ওই মামলায় সোহেল ও আরো তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই মামলায় এ পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ছয় আসামির কাছ থেকে রিমান্ডে প্রাপ্ত তথ্য ও তিন জনের ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে তিন দেশের যে সাত জনের নাম উঠে এসেছে তাদের তথ্য ও অবস্থান নিশ্চিত হতে আন্তর্জাতিক পুলিশ তদন্ত সংস্থা-ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়ে গত ৩০শে আগস্ট একটি চিঠি দেয় তদন্ত সংস্থা ডিবি। পুলিশ সদপ্তরের মাধ্যমে দেয়া সেই চিঠির কোন জবাব এখনো পায়নি ডিবি। এছাড়া গত আগস্টে কোকেন কাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক বকুল মিয়ার গ্রামের বাড়ী সিলেটে গিয়েও তথ্য বিহীন খালি হাতে ফেরত এসেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান।