আগামী ৯-১০ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রথমবারের মতো প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিপিও সামিট ২০১৫। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ কলসেন্টার এন্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) এর যৌথ উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী এই সামিট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় ‘বিপিও সামিট ২০১৫’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ব্যবসায় পরিচালনা, উন্নয়ন ও বিনিয়োগে বিশ্বের আদর্শ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ব্রান্ডিংয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সম্মেলন। ‘ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে থাকা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়ন যে বিশ্বের বড় বড় কর্পোরেট ও ব্যক্তি মালিকানার প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা, গ্রাহকসেবা এবং ব্যবসায়িক স্থাপনার জন্য প্রস্তুত-তারই দৃশ্যায়ন হবে এই সম্মেলনে। ‘বিপিও সামিট ২০১৫’ এর বিস্তারিত জানাতে ৭ ডিসেম্বর সোমবার রাজধানীর আগারগাঁয়ের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিস) অডিটরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশকে এগিয়ে নেওয়া জন্য তথ্য প্রযুক্তির বিকল্প নেই। আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশে প্রযুক্তি বিভিন্ন দিক তুলে ধরার জন্য আগামী ৯-১০ ডিসেম্বর দেশে প্রথম বারের মতো বিপিও সামিটের আয়োজন করা হয়েছে। দুই দিনের এই আয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে তথ্য প্রযুক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বিপিও ক্ষেত্রে অনেক ভালো করছে বাংলাদেশ। আগামী দিনের বিপিও খাতকে তরুণদের মাঝে তুলে ধরার জন্য দুই দিনের এই আয়োজনে রয়েছে তরুণদের জন্য বেশ কিছু কর্মসূচী। সারা দেশে ৫৫৪টি বিপিও সেন্টার স্থাপন করা হবে। প্রতি বছর বাংলাদেশে ২ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা শেষ করে। এদের মধ্য থেকে উল্লেখ্যযোগ্য অংশকে বিপিও খাতে কাজ করার উপযোগী করতে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে সরকার বলেন জানান তিনি। তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সরকার তথ্য প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। তরুণ ও বেকারদের তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে আরও স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিপিও সামিটে তরুণদের এই সেক্টর সম্পর্কে একটি ভালো ধারনা দিতে সক্ষম হবে। আয়োজন সম্পর্কে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ কলসেন্টার এন্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) এর সভাপতি আহমাদুল হক ববি, দুই দিনের এই আয়োজনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদের বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে তুল ধরা হবে। সেমিনারে বিপিও সেক্টরের সাফল্যও তুলে ধরতে হবে। সংবাদ সম্মেলনের আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ কলসেন্টার এন্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) সহ-সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আমিনুল হক, ফাইন্যান্স সেক্রেটারী তানভীর ইব্রাহীম, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হারুনুর রশীদ প্রমুখ। দুই দিনের এই আয়োজনে সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিপিওকে মূল মাধ্যমে নিয়ে আসা, দেশের তরুন তরুনীদের বেশি করে এই খাতে আগ্রহী করে তোলা এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের বিপিও সেক্টরের অবস্থানকে তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। বিপিও খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় খাত। বাংলাদেশের বিপিও ব্যবসার প্রবৃদ্ধি বছরে শতকরা ১০০ ভাগের বেশি, যার বর্তমান বাজারমূল্য ১৩০ মিলিয়ন ডলার। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শুধু বিপিও খাতের কার্যকর প্রতিফলনের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশ অর্থনীতিতে বিপুল উন্নতি সাধন করেছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার অনেক দেশ এই খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বের সর্বোচ্চ অথনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশে পরিনত হয়েছে। সারা বিশ্বে বিপিও খাত অনেক ভালো করছে। আমাদের পাশের দেশ ভারত, শ্রীলংকা ও ফিলিপাইনে বিপিও সেক্টরে সবচেয়ে ভালো করেছে। বিপিও সেক্টরে সারা বিশ্বের ৫০০ বিলিয়ান ডলারের মধ্যে ভারত ৮০ বিলিয়ান, ফিলিপাইন ১৬ বিলিয়ান এবং শ্রীলংকা ২ বিলিয়ান ডলার আয় করছে। বর্তমানে বাংলাদেশও দিন দিন এই খাতে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩০ মিলিয়ান ডলারে বিপিও সেক্টরে কাজ করছে। বাংলাদেশে বিপিও খাতে ভালো করা বা এগিয়ে যাওয়া বিপুল সম্ভবনা আছে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে কাজ করার খরচ তুলনামুলক অনেক কম। সরকার ও বেসরকারি খাতে এই খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। কিন্তু এখন বাংলাদেশ এই খাতে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় পিছয়ে আছে। বর্তমানে বাংলাদেশে মাত্র ২৫ হাজার লোক এই সেক্টরে যুক্ত আছে। সম্মেলনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতনামা ৪০ জনেরও বেশি বক্তাগণ বিভিন্ন সেশনে স্পিকার থাকবেন। স্পিকারদের মধ্যে রয়েছেন, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাকউন্টস এর সিইও ফায়েজুল চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট আবদুল মাতলুব আহমেদ, অস্ট্রেলিয়ান বিপিও অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্টিন এন কনবয়, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং এশিয়ান-ওশেনিয়ান কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অর্গানাইজেশনের (অ্যাসোসিও) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ এইচ কাফী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন(এটুআই) প্রোগ্রামের পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ইনফোসিস এর এমডি ও সিইও ড. বিশাল সিক্কা, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার, বেসিস সভাপতি শামীম আহসান, মাইক্রোসফটের এমডি এবং টাই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সোনিয়া বশির কবির, আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ও টেকনোলজি ব্যবসায় বিশেষজ্ঞ স্যানটিয়াগো গুটায়ারেজ, ডাটাবেইজ মার্কেটিং এবং কাস্টমার রিলেশন ম্যানেজমেন্ট সলিউশন বিশেষজ্ঞ রাজমোহন ভি, বিনোদ হ্যামপাপুর র্যাঙ্গাদোর, শ্রী দয়া খালসা। এছাড়া তথ্যপ্রয্কু্িত ব্যবসায় সেক্টরের অনেক বিশেষজ্ঞগণও এই সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। সম্মেলনে বিভিন্ন সেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে, স্টার্ট আপস, বাংলাদেশ ইয়ুথ টু ড্রাইভ বিপিও ইন্ডাস্ট্রি, অপরচুনেটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ইন ব্যাংকিং আউটসোর্সিং, কানেক্টিং দ্যা আনট্যাপড স্কিল : পলিটেকটিক, ভোকেশনাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল, ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল অ্যান্ড অপারেশনাল রেডিনেস, ফিউচার চ্যালেঞ্জেস অব বিপিও ট্রান্সফরমেশন, ইনোভেশন ইকোসিস্টেম-অ্যাক্সিলারেশন অ্যান্ড ইনকিউবিটরস, রোল অব হায়ার এডুকেশন ইন্সিটিউশনস ফর বিপিও ইন্ডাস্ট্রি, এন্টারপ্রেইনারশিপ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, দ্যা অপরচুনেটিজ অব আউটসোর্সি ক্লায়েন্ট সার্ভিসেস ফ্রম আইটি পার্সপেক্টিভ, গ্লোবাল বিপিও ইন্ডাস্ট্রি বেস্ট প্রাক্টিসেস, দ্যা অপরচুনেটিজ ইন দ্যা ডোমেস্টিক মার্কেট ফর দ্যা বিপিও। এসব সেশন ছাড়াও সম্মেলনে বিপিও সেক্টরের বহুমাত্রিক সম্ভাবনার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকছে। সম্মেলনে চাকরি প্রার্থীদের জন্য থাকছে স্পট ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা। এর মধ্যে ২০০ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন কল সেন্টারে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। সম্মেলনের সহযোগী হিসাবে আছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) ও এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি)। আয়োজনে গোল্ড স্পন্সর হিসাবে আছে এডিএন গ্রুপ, জিনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড। সিলভার স্পন্সর সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড, সিসকো সিস্টেমস, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, টেলিটক, এয়ারটেল এবং আইটি পার্টনার আমরা কোম্পানীজ ও নেটওয়ার্ক পার্টনার ফাইবার এট হোম। দেশের প্রথম এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনে অংশীদার হিসেবে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ), বাংলাদেশ ওমেন ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি), সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বারস অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ)। আয়োজনে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন www.bposummit.org.bd ঠিকানায়।