যুক্তরাজ্যের রপ্তানি করা অস্ত্র হয়তো এখন জঙ্গি সংগঠন আইসিসের হাতে। এসব অস্ত্র তারা ইরাক ও সিরিয়ায় ব্যবহার করছে। নতুন এক রিপোর্টে এসব কথা বলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা বলেছে, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য যখন ইরাক আগ্রাসনে যায় তখন যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত অস্ত্র ও ছোটখাটো অস্ত্রগুলো কট্টর ইসলামপন্থিদের হাতে গিয়ে পড়ে থাকতে পারে। গতকাল এ খবর দিয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাজ্য যেসব অস্ত্র রপ্তানি করেছে সেগুলোই হয়তো ব্যবহার করছে আইসিস। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ বিষয়ে কয়েক হাজার ভিডিও ও ছবি বিশ্লেষণ করিয়েছে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে। তারপর তারা নতুন এই রিপোর্ট তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, শুধু যুক্তরাজ্যই নয় আইসিস বা আইএস’র হাতে যেসব আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে তা ডিজাইন বা তৈরি হয়েছে ২৫টিরও বেশি দেশে। তাদের কাছে যেসব অস্ত্র রয়েছে তার মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনীর এম ১৬ রাইফেল, অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার সøাইপার রাইফেল, চীন ও বেলজিয়ান মেশিন গান। আইএসের হাতে যেসব অস্ত্র রয়েছে তার বেশির ভাগই ইরাকের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীকে ২০০৩ সাল থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে দিয়েছিল বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ। এসব অস্ত্রই এখন ঘুরেফিরে আইএসের হাতে এসেছে। অস্ত্র সরবরাহে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ছোটখাটো ও হালকা অস্ত্রগুলো ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, সার্বিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে সরবরাহ করা হয়েছিল। সেই অস্ত্রই ফের ইরাকে রপ্তানি করা হয়েছিল। ২০ হাজার চীনা যুদ্ধাস্ত্র যুক্তরাজ্য থেকে ইরাকে রপ্তানি করা হয়েছিল ২০০৭ সালের শুরুর দিকে। পরে অনেক অস্ত্র ময়লা আবর্জনায় পরিণত হয়। অ্যামনেস্টির যুক্তরাজ্য শাখা অস্ত্র কর্মসূচি বিষয়ক পরিচালক অলিভার স্প্রাগ বলেন, ইরাকে অবাধে অস্ত্র সরবরাহের অর্থ হলো যখন সেসব অস্ত্র আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে গিয়েছে তারা এটাকে শিশুদের কাছে মিষ্টির দোকানের মতো মনে হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে যুক্তরাজ্য সহ অনেক দেশই এখন অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করেছে। এর উদ্দেশ্য যাতে আইএস বর্তমান অস্ত্রের চালান থেকে বিচ্যুত হয়। তিনি বলেন, এ অবস্থায় আরও সতর্কতার সঙ্গে ঝুঁকি সম্পর্কে হিসাব নিকাশ করার দরকার। অ্যামনেস্টির রিপোর্টে বলা হয়েছে, আইএসের অস্ত্রগুলোর অনেকটাই আধুনিক মানের। আবার কিছু আছে কমপক্ষে ২৫ বছরের পুরনো। তাদের কাছে সবচেয়ে পুরনো যে অস্ত্র আছে বিশ্বাস করা হয় তা বৃটেনের ১৯১৪ সালের এনফিল্ড প্যাটার্ন বোল্ট-অ্যাকশন রাইফেল। এসব অস্ত্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, সরকার তার অস্ত্র রপ্তানি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।