কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) থেকে সুবল চন্দ্র দাস ঃ অগ্রহায়ণ মাস মানেই গ্রামীণ কৃষিজীবনে উৎসবের আমেজ। বর্ষায় রোপণ করা ‘আমন’ ধান কাটা হয় চলতি মাসেই। আর ধান কাটা শেষে গ্রামীণ জনজীবনে আনন্দ বয়ে আনে ‘নবান্ন উৎসব’। তবে পৌষ মাসের শুরু পর্যন্ত অঞ্চলভেদে এ বাড়ি ও বাড়ি চলে নবান্নের অনুষ্ঠানিকতা। রমেশচন্দ্র দত্তের ‘বাংলার কৃষক’ বইয়ে উল্লেখ্য করা হয়েছে আমন ধান রোপণ করা হয় ভরা বর্ষায়। ধান কাটা হয় বাংলা বর্ষের শেষের দিকে অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে। নবান্ন উৎসব ‘আমন পার্বন’ উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন আমন কাটা শেষে আনন্দ উল্লাসের সঙ্গে অনেক পরিবার জড়ো হয় এবং বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান ও উৎসব পালন করে, তবে এই উৎসবের প্রধান উৎসব মুখরতায় ‘শষ্য কর্তন’ উৎসব পালিত হয়। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিপুল উৎসাহ নিয়ে নবান্ন উৎসব পালন করে থাকেন কৃষিজীবী মানুষ। আমন ধান কাটা শেষেও আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন তারা। ঘরে ঘরে উপাদেয় খানপিনার আয়োজন করা হয়। এটি মূলত কৃষিভিত্তিক লোকোৎসব। কটিয়াদী উপজেলার চাতল গ্রামের বিত্তশালী কৃষক নজরুল ইসলাম সরকার জনান, নানান জাতের আমনধানের মধ্য কোন কোন ধানের চিকন চাল হয়। আগের রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখা চাল শেষে কিষাণিরা ঢেঁকিছাটা করে গুঁড়ি তৈরি করেন ঝুনো নারিকেল কুড়িয়ে সেই গুঁড়ি দিয়ে নানা ধরনের পিঠা তৈরি করা হয়। সেই সঙ্গে নতুন চালের মুড়ি-মুড়কি এবং পায়েস তো আছেই। এসব উপকরণ আত্মীস্বজনদের খাওয়ার জন্যও পরিবেশন করা হয়। শুধু খাওয়া-দাওয়াই নয়, এই উৎসবের বিনোদনের অনুষঙ্গ থাকে লাঠিখেলা, ষাড়ের লড়াই, আর গান-বাজনার আয়োজন। আচমিতার বাউল মোস্তফা বলেন রোপা (আমন) ধান কাটা শেষে কখনো কখনো গ্রামে আমাদের গান গাওয়ার জন্য ডাক পড়ে। কৃষক বাড়ির আঙিনায় সারারাত গান করি আর রাত জেগে তা উপভোগ করেন কৃষাণ কৃষাণি থেকে শুরু করে তরুণ বুড়ো সবাই। সরজমিনে কটিয়দী উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে খেত জুড়ে এখন পাকা ধানের সোনালি ঝলক। ধান কাটা মাড়াই ও শুকানোর স্থান ‘খলা’ তৈরিতে ব্যস্থ সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। চরপুক্ষিয়া গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের আনন্দ দ্বিগুণ বেড়েছে। কটিয়াদী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জানান এবার আমন আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি যা অতীতে হয়নি।
ছবি আছে।