কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) থেকে সুবল চন্দ্র দাস ঃ কিশোরগঞ্জ সদর পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকলেও বিএনপির ঘরে জ্বলছে বিদ্রোহের আগুন। জেলার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রথম শ্রেণীর এ পৌরসভায় বর্তমান মেয়র রয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া কাঞ্চন। আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা ছাত্র লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ মিয়া। আর বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। তবে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়াও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ইসরাইল মিয়া সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তন করে তাকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি দাবী জানিয়েছেন। অন্যথায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। গত নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দিতা করে দ্বিতীয় হয়েছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। বর্তমান মেয়র পেয়েছিলেন ১৬ হাজার ৭৬২ ভোট, আর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম পেয়েছিলেন ১২ হাজার ৪৯২ ভোট। অবশ্য বিএনপি দলীয় অপর প্রার্থী আবু তাহের মিয়াও গতবার নির্বাচন করে ৬ হাজার ৪৯৫ ভোট পেয়েছিলেন। এবার বেশ কিছুদিন ধরেই সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণার মাঠ গরম করে রেখেছিলেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া। বিভিন্ন সময় দলীয় কর্মসূচিতে তার নেতৃত্বে ব্যাপক কর্মী সমাগমও হয়েছে। মনোনয়ন চূড়ান্ত হবার আগে কয়েকদিন একাধিক জাতীয় পত্রিকায় তাকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বলে খবরও প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন মাজহারুল ইসলাম। দলের এ সিদ্ধান্ত হাজী ইসরাইল মিয়া সহজে মেনে নিতে পারেননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়ে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জানান দিলেন। ফলে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকলেও বিএনপি থেকে দু’জন শক্তিশালী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতায় নামলেন।অন্যদিকে সিপিবি থেকে দলীয় মনোনয়নে এবার মেয়র পদে নির্বাচন করছেন জেলা সিপিবির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য মো. আবুল হাশেম। তিনি জেলা শহরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করছেন। এছাড়া বিকল্প ধারা পার্টি থেকে দলীয় মনোনয়নে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন ফারুক আহমেদ খান। রোববার মনোনয়ন পত্র বাছাই অনুষ্ঠানে জানা গেছে, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী ইসরাইল মিয়ার বিরুদ্ধে নাশকতাসহ তিনটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একটি এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুটি মামলা বিচারাধীন আছে। এসব মামলায় ইসরাইল মিয়া তিন দফা কারাভোগ করে কিছুদিন আগে জামিনে বেরিয়েছেন। এছাড়া বিএনপির দলীয় প্রার্থী মাজহারুল ইসলামের নামেও একটি মামলা ছিল। তবে এ মামলার অভিযোগপত্র থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে বাছাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সদর থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন। মনোনয়ন চূড়ান্ত হবার আগে আওয়ামী লীগ থেকে অর্ধডজন সম্ভাব্য প্রার্থী প্রচারণা চালালেও কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হবার ঝুঁকি নেননি। বরং মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় দলীয় প্রার্থী পারভেজ মিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যেও কেউ কেউ উপস্থিত ছিলেন। ফলে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলীয় সংহতির দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে এবার এখানে সিপিবি থেকেও মেয়র পদে প্রার্থী দেয়া হয়েছে। তারা নির্বাচনে ভোটযুদ্ধের ফলাফলের চেয়েও জনগণের মধ্যে দলের পরিচিতি বাড়িয়ে দলীয় শক্তিভিত তৈরি করার উদ্দেশ্যেই মূলত প্রার্থী দিয়েছে বলে দলের কয়েকজন নেতাকর্মী জানিয়েছেন। বিকল্প ধারা পার্টিরও এখানে তেমন শক্তিমত্তা নেই। ফলে তারাও দলের সাংগঠনিক প্রচারণার দিকটি বিবেচনায় রেখেই এখানে মেয়র প্রার্থী দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় মোট ভোটার আছেন ৬১ হাজার ৩১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৯ হাজার ৯৮৭ জন, আর মহিলা ভোটার ৩১ হাজার ৩২৩ জন।