অসংখ্য ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের নায়ক ফেরদৌস। কলকাতা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ছবিতে এখনও টানা কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে ‘মেঘকন্যা’, ‘পুত্র’, ‘কৃষ্ণপক্ষ’, ‘পোস্টমাস্টার ৭১’ শিরোনামের চলচ্চিত্রগুলোতে কাজ করছেন। এছাড়া শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ‘শোভনের স্বাধীনতা’ চলচ্চিত্রটি। এটি একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। এদিকে তিনি চ্যানেল আইয়ের ‘সেরা নাচিয়ে’তে বিচারক হিসেবে কাজ করছেন। নিজের ক্যারিয়ার, পরিবারসহ নানা বিষয়ে আজকের ‘আলাপন’-এ কথা বলেছেন ফেরদৌস। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কামরুজ্জামান মিলু
কেমন আছেন ? এবারের বিবাহবার্ষিকী কিভাবে কাটালেন?
ধন্যবাদ, ভালো আছি। ৯ই ডিসেম্বর ছিল আমার ১১তম বিবাহবার্ষিকী। আমি সেদিন কক্সবাজারে ‘মেঘকন্যা’ ছবির শুটিং করছিলাম। দুপুরের পর পরিচালকের কাছে অনুমতি নিয়ে বিমানযোগে ঢাকা এসে পরিবারকে সময় দিয়েছি। আমার দুই সন্তান নুজহাত ও নামিরা ফেরদৌসসহ আমার স্ত্রী তানিয়া ঢাকায় অপেক্ষায় ছিল। তারাও কোনো কাজ বাইরে রাখেনি। অনেক ঘটা করে বিবাহবার্ষিকী পালন করতে আমার ভালো লাগে না। আমি পরিবারসহ রাতে ডিনারে গিয়েছিলাম। পরিবারকে সময় দিতেই আমি বেশি পছন্দ করি। এইতো এভাবেই কেটে গেল।
বেশ কয়েকদিন ধরে ‘মেঘকন্যা’ ও ‘পুত্র’ ছবির কাজ করছেন। এই কাজ দুটি নিয়ে বলুন ?
‘মেঘকন্যা’ ছবিটি পরিচালনা করছেন মিনহাজ অভি। এখানে একটি পরিপূর্ণ প্রেমের গল্প দেখানো হচ্ছে। আমরা কক্সবাজারে একটি গানের দৃশ্যধারনের কাজ শেষ করলাম। অনেকদিন পর সময় নিয়ে একটা ভালো গান করলাম। গানটির কোরিওগ্রাফি করেছেন হাবিব। অনেক প্রযোজক তো তাড়াহুড়া করে ছবির গান শেষ করে ফেলেন। এই ছবির প্রযোজককে ধন্যবাদ। কারণ তিনি আমাকে ও নিঝুম রুবিনাকে সময় দিয়েছেন। আর সাইফুল ইসলাম মান্নুর পরিচালনায় ‘পুত্র’ ছবিটির কাজ শেষ পর্যায়ে। এ ছবিতে আমাকে একজন অটিস্টিক বাচ্চার বাবার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে। এ বাচ্চাকে ঘিরে পরিবারের টানাপড়েন উঠে এসেছে ছবির গল্পে। পরিচালক, সহশিল্পী সবাই মিলে কাজটি ভালো হচ্ছে। ১৮ তারিখ ছবির বাকি কাজ করার কথা রয়েছে।
আর কি কি ছবি সামনে দেখতে পাবেন দর্শকরা?
সামনে মৌসুমীর ‘শূন্য হৃদয়’, দিলশাদুল হক শিমুলের ‘লিডার’, বিপ্লব হায়দারের ‘ফিল মাই লাভ’, মেহের আফরোজ শাওনের ‘কৃষ্ণপক্ষ’, আনোয়ার সিরাজীর ‘ভাবীর আদর’ ও আমার প্রযোজিত ‘পোস্টমাস্টার ৭১’সহ কলকাতার কিছু ছবির কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলো ডিসেম্বরে শেষ করতে চাই। ১৭ই ডিসেম্বর মৌসুমীর ‘শূন্য হৃদয়’ ছবির বাকি কাজ শুরু করার কথা রয়েছে।
কলকাতায় কি কি ছবির কাজ করছেন?
কলকাতায় নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল ও তপন ব্যানার্জীর ‘ছেড়ে যাস না’ নামের একটি ছবিতে কাজ করছি। এ ছবিতে আমার সহশিল্পীর নাম রূপসা। আর ঋতুপর্ণার সঙ্গে দুটি ছবির কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলোর কাজ শেষ করে ঢাকাতেই ২০১৬ সালে বেশি ছবির কাজ করব। কারণ কাজের পাশাপাশি বাচ্চাদের সময় দিতে চাই। বাচ্চারা বড় হয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে সময় দিতে চাই।
দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘৫২ থেকে ৭১’ এবং আপনার প্রোডাকশন থেকে নির্মিত হওয়া ‘পোস্টমাসটার ৭১’ এর খবর কি ?
ঝন্টু ভাইয়ের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করতে যাচ্ছি। এ ছবিতে আমাকে একজন মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে। আর আমার প্রযোজনা সংস্থা নুজহাত ফিল্মস থেকে করা ‘পোস্টমাস্টার ৭১’ ছবির ৫০ ভাগ কাজ শেষ। এ ছবিটি শেষ করে নতুন বছরের ২৬শে মার্চ মুক্তি দেবার পরিকল্পনা রয়েছে। ‘এক কাপ চা’, ‘হঠাৎ সেদিন’ এরপর আমার তৃতীয় প্রযোজনা ছবি হতে যাচ্ছে ‘পোস্টমাস্টার ৭১’। ছবিটি নিয়ে আমি বেশ আশাবাদী।
এবারের বিজয় দিবসকে সামনে রেখে আপনার অভিনীত মুক্তি পেয়েছে ‘শোভনের স্বাধীনতা’ ছবিটি, এ প্রসঙ্গে বলুন?
চলচ্চিত্রটি নিয়ে বলার আছে অনেক কিছু। তবে এটুকু বলতে চাই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র এটি। মানিক মানবিক পরিচালিত এ ছবিটি সবার দেখা উচিত। এখানে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। এ ছবিতে আমার সহশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন নিপুণ, জলি, খাইরুল আলম সবুজ, কিশোরসহ আরো অনেকে। এই ধরনের ছবি আমাদের দেশে নির্মাণ হয় কম, তাই এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে দেখা উচিত ছবিটি।
অনেক ছবি নিয়ে নির্মাতারা আশাবাদী হচ্ছেন, কিন্তু বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্রের সফলতা আসছে না-এর কারণ হিসেবে কি বলবেন?
চলচ্চিত্রের ক্ষরা সবসময়ই ছিল। আকালের পর সুদিন এসেছে। আবার চলচ্চিত্রে আকাল দেখা যাচ্ছে। মেধাবী অভিনেতা-অভিনেত্রী থাকলেও মেধাবী পরিচালকের অভাব রয়েছে আমাদের। এর কারণ হচ্ছে দর্শকরা কি গল্প দেখতে চান তা নির্মাতারা বুঝতে পারছেন না। মানুষের মনের কাছাকাছি যেতে পারছেন না তারা। আর ভাঙ্গাচুড়া সিনেমা হলে বসে তিনঘন্টার ছবি দেখতে নারাজ দর্শকরা। এখন উন্নত প্রযুক্তির টিভি, হোম থিয়েটার ঘরে প্রবেশ করেছে অনেক দর্শকের। তাহলে কেনো এসব সিনেমা হলে ছবি দেখবেন দর্শক। আমাদের রাজধানীতে যেমন উত্তরা, গুলশানে কোনো নতুন সিনেমা হল নেই। এদিকের দর্শকরা জ্যাম ঠেলে ব্লকবাস্টার বা সিনেপ্লেক্সে গিয়ে ছবি দেখতে চান না।