সকালে মাঠে অনুশীলন সেরে দলকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মনে মনে হয়তো রণ কৌশল আঁকছিলেন কিভাবে হারানো যায় অদম্য মাশরাফির কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে। বিআর বিপিএলে শীর্ষে থাকা দুই দল মুখোমুখি লড়াইয়ে হারলেও সুযোগ থাকবে ফাইনাল খেলা। জয়ী দল সরাসরি চলে যাবে ফাইনালে। প্রথম সেমি ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে আজ জাতীয় দলের মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তাই অধিনায়কের বিপক্ষে ডেপুটির লড়াইটা যে খুব প্রাণবন্ত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কাগজে-কলমেই নয়, সাকিবের দল মাঠের শক্তিতেও যে অন্যতম সেরা তার প্রমাণ রেখেছেন তারা। এই পর্যন্ত ১০ ম্যাচে ৭ জয়ে ১৪ পয়েন্ট পেয়েছেন। কিন্তু কাগজে-কলমে কিছুটা দুর্বল মনে হলেও মাশরাফির কুমিল্লা একই সমান পয়েন্ট নিয়ে তাদের রংপুরকে পিছনে ফেলে রয়েছে শীর্ষে। যে কারণে কোনভাবেই হালকা করে নেয়া যাবে না প্রতিপক্ষকে। রণ কৌশলটা মনে এঁটে অনুশীলন শেষ না হতে মাঠ ছেড়ে চলে যান সাকিব। কিন্তু রাইডার্স অধিনায়ক ফাইনালের জন্য যে দ্বিতীয় সুযোগ নিতে রাজি নয় তা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিলেন দলের অনত্যম ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার ড্যারেন স্যামি। তিনি বলেন, ‘টুর্নামেন্টটি আমরা দারুণ ভাবে শুরু করেছিলাম। এখন আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে সবার আগে ফাইনালে যাওয়ার। আমার মনে হয়, রংপুর এখনো তাদের সেরা ক্রিকেটটা খেলেনি। কালকে আমাদের সামনে সেটা করে দেখানোর সুযোগ এসে গেছে। ফাইনালে যাওয়ার জন্য সেটাই করবো আমরা।’ ম্যাচটি মিরপুর শেরে বাংলা মাঠে গড়াবে দুপুর দুইটায়।
অন্যদিকে অধিনায়ক থেকে শুরু করে ইনজুরিতে জর্জরিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সরাও কোন সুযোগ নিতে রাজি নয়। রংপুরের বিপক্ষে জয় দিয়েই শুরু করেছিল কুমিল্লা। কিন্তু সেই ম্যাচে সাকিব আল হাসান ছিলেন না। রংপুর ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারে সেই ম্যাচে। কিন্তু সাকিব এসেই দলের জন্য ২১ রানের জয় এনে দেন কুমিল্লার বিপক্ষে। তবে বল ও ব্যাট হাতে সাকিব খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারেনি সেই ম্যাচে। কিন্তু ভিক্টোরিয়ান্সদের প্রধান কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন মনে করেন সাকিবের মাঠে থাকাটাই অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টে রংপুর রাইডার্স মাঠের শক্তিতে অনেকটাই এগিয়ে আছে। এই দলে সারা বিশ্বে টি-টোয়েন্টি খেলে বেড়ানো অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন, যারা যে কোন মুহূর্তে দলের জন্য জয় এনে দেয়ার মতো অবদান রাখতে পারেন। এজন্য ওদের বিপক্ষে লড়াটাই আমাদের জন্য বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের।’ শুধু তাই নয়, সাকিব আল হাসানকে আলাদাভাবে প্রতিপক্ষ মনে করেন কোচ। তিনি বলেন, ‘সাকিবকে অবশ্যই অনেক বড় ফ্যাক্টর ধরেই আমাদের খেলতে হবে। ওর টি-টোয়েন্টি খেলার যে অভিজ্ঞতা সেটি তাকে অনেক এগিয়ে রাখবে।’
এছাড়াও নিজ দলের ইনজুরি নিয়ে বেশ আতঙ্কিত কোচ তিনি বলেন, ‘প্রথম থেকেই অনেক ক্রিকেটার ইনজুরিতে। তারপরও আমরা এই পর্যন্ত এসেছি। এখনও দলের ইনজুরি আমাদের জন্য বড় চিন্তার বিষয়। বিশেষ করে মাশরাফিকে নিয়ে। সে কাল (আজ) বল করতে পারবে কিনা তা আমি জানি না। তবে মাঠে থাকবে এটা বলতে পারি। এখনও আমাদের একাদশ কেমন হবে তা সাজানো হয়নি। উইকেট দেখেই সেটি নিয়ে চিন্তা করবো।’
কুমিল্লার দুর্বলতার পাশাপাশি নিজের সামর্থ্যের প্রতিই নজর রাইডার্সদের। এই বিষয়ে স্যামি বলেন, ‘কুমিল্লার দুর্বলতা কি সে বিষয়টি নিয়ে আমরা অবশ্যই আলোচনা করবো। তবে আমাদের পূর্ণ মনোযোগ নিজেদের সামর্থ্যে। একটা ভালো টি-টোয়েন্টি দল হিসেবে আমরা কী করার ক্ষমতা রাখি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। মৌলিক বিষয়গুলোতে আমাদের ভালো করতে হবে। স্পিনাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ব্যাটসম্যানদের অবশ্য আরও ভালো করার দরকার। আগামীকাল (আজ) আমরা আমাদের সামর্থ্যের পুরোটা স্পর্শ করতে চাই। সেটা করা গেলে আমার মনে হয় না ফাইনালে যেতে কোন সমস্যা হবে।