এক পাশে ক্রিস গেইল থাকলে অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যান থাকেন অনেকটাই নির্ভার। বরিশালের হয়ে ঢাকার বিপক্ষে ওপেন করতে এসে রনি তালুকদার ছয় হাঁকাতে গিয়ে শুরুতে আউট। এরপরই মাঠে নামলেন সাব্বির রহমান রুম্মান। তাকে ওয়ানডাউনে নামতে দেখে অনেকই একটু বিস্মিত হলেন। জাতীয় দলের হয়ে সাব্বিরের পজিশনটা ৬ থেকে ৮-এর মধ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যে গেইল ঝড় দেখতে আসা দর্শকরা দেখতে পেলেন সাব্বির ঝড়। ৩৯ বলে ৩টি চার ৩টি ছয়ের মারে খেললেন ৪১ রানের ইনিংস। কিন্তু আগের ১০টি ম্যাচে সর্বোচ্চ ১৭ রানই দেখতে পেয়েছে বিপিএলের দর্শকরা। মোট ১১ ম্যাচে ১১০ রান করেছেন তিনি। দলের জন্য তার এই অবদান শেষ পর্যন্ত বেশ কাজেই এসেছে। কারণ তার ঝড়ের মাঝে ক্রিস গেইল ছিলেন নীরব। সাব্বিরের রানে ফেরা নিয়ে ব্যাকুল ছিল সবাই। প্রায় প্রতিদিনই জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফিকে সাব্বির, লিটন, সৌম্যদের নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলতে হতো। কিন্তু অধিনায়কের বিশ্বাস ছিল তারা সুযোগ পেলেই রানে ফিরেন। হয়তো কাল মাশরাফির মন থেকেও পাথরটি নেমে গেছে সাব্বির রানে ফেরায়। কিছুদিন পরেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেই দলের অন্যতম সদস্য সাব্বির। তাই নিজের মাঝেও রানে ফেরার বিশাল চাপ নিয়ে মাঠে নামতে হচ্ছিল। শেষের দিকে নেমে তেমন সুযোগটা হচ্ছিল না। তাই জোর করেই নেমে পড়ে ওয়ানডাউনে। মূলত লক্ষ্য একটাই ভয়কে জয় করা। এই বিষয়ে সাব্বির বলেন, ‘ওয়ানডাউনে নামা এটা আমার নিজের সিদ্ধান্ত ছিল। আগে থেকেই চাচ্ছিলাম কিন্তু নিজের আত্মবিশ্বাস না থাকায় দল অন্যদের চাচ্ছিল। নিজে জোর করে চেয়েছি। মনে হচ্ছিল পেস বোলারদের আমার ফেস করা উচিত। প্রথম ছয় ওভার আমার ব্যবহার করা উচিত। আমি নিজে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম তাই ভালো হয়েছে।’
আগের ম্যাচে জয় পাওয়া কুমিল্লা ও জাতীয় দলের সহ-অধিনায়ক মাশরাফি উইকেট নিয়ে বেশ ভয়ের কথাই বলেছেন। যেমন উইকেট ছিল সেখানে ১৩০ এর পর রান হলেই প্রতিপক্ষের জন্য কঠিন হয়ে যায়। সাব্বির মনে করে কঠিন উইকেটে তার রান করতে পারাটাও দলের জন্য বড় উপকার হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘সে ঠিকই বলছে, ১৩০-১৪০ এখানে ফাইটিং স্কোর। আজকের দিনে আমার ব্যাটে লেগে গেছে তাই রান করেছি। কিন্তু এটা খুব কঠিন একটা উইকেট। চেজিং করা আরও কঠিন। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ছয় ওভার অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। প্রথম ছয় ওভারে যে ভালো করবে সে হয়তো অনেক কিছুতেই ভালো করবে। এমন ম্যাচ যদি জিততে পারি বা এমন ম্যাচ যদি সবসময় জিতি তাহলে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়, দলের জন্যও।’
অন্যদিকে ক্রিস গেইল মাঠে দাঁড়িয়ে আসলে সাব্বিরের ব্যাটিংটাই দেখছিলেন। গেইলকে চমকে দিয়ে এমন ব্যাটিং করে সাব্বিরের অনুভূতিটাই বেশ আনন্দের। যেন ব্যাটেই বলতে চাইছিলেন আমরাও পারি। গেইলের সঙ্গে ব্যাট করার নিয়ে সাব্বির বলেন, ‘গেইলের সঙ্গে ব্যাটিং আসলে খুবই আনন্দদায়ক আসলে বলে বুঝানো যাবে না। আমি যখন ব্যাটিং করি ক্রিস গেইল যখন মারে তখন আমি দেখি ও যেভাবে মারছে আমি কিভাবে এটা চেষ্টা করবো। আমি চেষ্টা করেছি ভালো খেলার। ক্রিস গেইল আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছে যে তুমি থাকো। আমি যখন ১০ বলে ১ রান করেছি তখন সে আমাকে অনেক উৎসাহ জুগিয়েছে।’
জাতীয় দলের হয়ে সাব্বির রহমান রুম্মানের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অভিষেকটা ২১৪ সালে। এরপর থেকে ২৪ ওয়ানডে ও ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলে ফেলেছেন। বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে শুরু করে দেশের মাটিতে নিজেকে প্রমাণ করেছেন দলের প্রয়োজনে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি জয়টি আসে সাব্বির সাকিবের হাত ধরেই। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন ফর্মের বাইরে চলে যান। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তার ব্যাট থেকে ৪ ইনিংসে আসে মাত্র ৪০টি রান। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৮ রান তাও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেখান থেকেই তাকে নিয়ে শুরু হয় দুশ্চিন্তা। যা বিপিএলেও অব্যাহত থাকে। নিজের ফর্মহীনতা নিয়ে সাব্বির বলেন, ‘আসলে একটা ব্যাটসম্যানের খারাপ সময় যায়। আমিও চেষ্টা করেছি সেখান থেকে বের হতে।, নিয়মিত অনুশীলন করেছি। কখনো বিশ্রাম নেয়নি নিজের ব্যাটিং আরও ভালো করার চেষ্টা করছি। শনিবার ব্যাটে লেগেছে হয়তো আমার দিন ছিল। অন্যদিন ব্যাটে লেগে আউট হচ্ছিলাম, আত্মবিশ্বাস ছিল না। বিশ্বাস ছিল ভালো কিছু করবো ইনশাআল্লাহ।’