আজ বিআরবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি-২০) ফাইনালে মুখোমুখি হবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও বরিশাল বুল। দেশের দুই জেলার দূরত্ব প্রায় ১৬৪ কিলোমিটার। বরিশাল দক্ষিণে আর কুমিল্লা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। কিন্তু আজ ক্রিকেট দেশের দুই জেলাকে করবে একত্রিত। উল্লাসে মাতবে দুই জেলার মানুষ। জয়-পরাজয় যে দলের হোক, শেষ পর্যন্ত যে দেশের ক্রিকেটের জয়ই হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মিরপুর শেরে বাংলা মাঠে ব্যাটে-বলে ‘কামাল কামাল’ সুর নিয়ে নামবে বরিশাল বুলস, অন্যদিকে ‘মাররে-ছক্কা মাররে চার কে আছে সামনে সাহস আছে কার’ এই সুরে মাতোয়ারে হয়ে লড়বে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বিপিএলের প্রথম আসরে বরিশাল বার্নাস ফাইনাল খেলেছিল। কিন্তু জয়ের দেখা মেলেনি। কিন্তু এবার তৃতীয় আসরে বরিশাল নতুন নামে ও নতুন রূপেই ফাইনাল খেলছে। প্রতিপক্ষ বিপিএলে নতুন দল কুমিল্লা। মাশরাফি বিন মুর্তজার কুমিল্লা ফাইনালে এসেছে চমকের পর চমক দেখিয়ে। সবার আগে সেমি ও সাবার আগে ফাইনাল নিশ্চিত করা দলটিকে যতই সাদামাটা বলা হোক না কেন, টিম কুমিল্লার মাঠের সুরটাই যে অন্যরকম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে বড় বড় তারকাদের নিয়ে বরিশাল যাত্রার শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত দেশের ক্রিকেটারই বরিশালের হাল ধরেছে। তাই লড়াইটা যে সমানে সমান হবে এটাই প্রত্যাশা। যে দল চ্যাম্পিয়ন হবে আজ তারা পাবে আড়াই কোটি টাকা। আর রানার্সআপ দল পাবে ৭৫ লাখ টাকা।
বিপিএলের ২০১২ ও ২০১৩ সালের ফাইনাল ছিল একপেশে। ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের কাছে বরিশাল বার্নার্স ৪৩ রানে হেরেছিল প্রথম আসরে। এরপর দ্বিতীয় আসরে চিটাগং কিংসরা হারে একই দলের কাছে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। কিন্তু এবার ঢাকা নতুনরূপে ও নতুন নামে এসেও বিপিএল থেকে বিদায় নিয়েছে বরিশালের কাছে হেরে। কিন্তু ঢাকা না থাকলেও দুইবার চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বরিশালের প্রতিপক্ষ হিসেবেই থাকছেন। মাশরাফির নেতৃত্বে কুমিল্লা একেবারেই সাদামাটা একটি দল নিয়ে বিপিএলের চলতি আসর শুরু করেছিল। প্রথম ম্যাচেই হার দিয়ে শুরু করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ৭ উইকেটে জয় পায়। এরপর একে একে ৭টি জয় নিয়ে সবার আগে নিশ্চিত করে শেষ চারের শীর্ষস্থান। প্রথম কোয়ালিফায়ারে সমান সংখ্যক জয় ও পয়েন্ট পাওয়া সাকিব আল হাসানের দলকে উড়িয়ে দিয়ে সবার আগে নিশ্চিত করে ফাইনালও। দলকে একের পর জয় এনে দেয়ার অধিনায়ক মাশরাফিকেই বলা হচ্ছে সাফল্যের রূপকার। কিন্তু অধিনায়ক বিশ্বাস করেন, টিম কুমিল্লার কারিশমাতেই দলের এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা। তিনি বলেন, ‘দল হিসেবে আমরা খুব ভালো খেলেছি। এটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি আইপিএলের দিকে তাকান, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর অন্যতম সেরা দল। প্রত্যেক বছরই কিন্তু ক্রিস গেইল থাকে, বিরাট কোহলি, এবিডি ভিলিয়ার্স থাকে। তো এটা আসলে ক্রিকেটারদের ব্যাপার না, পুরো দলের ব্যাপার। তারা কিভাবে মাঠে খেলছে, তাদের অ্যাপ্রোচ কি ক্রিকেট নিয়ে। আমি বলবো যে, সবাই খুব পেশাদারিত্বের সঙ্গে পারফর্ম করেছে। মাঠ ও মাঠের বাইরে পেশাদারিত্ব ছিল। শৃঙ্খলা ছিল। নিজস্ব পারফরম্যান্স যেন ঠিকভাবে করতে পারে সেদিকে সবার নজর ছিল। তো সবকিছু মিলিয়ে আমরা এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।’
কুমিল্লার ওপেনিংয়ে এ বছর দেশের টেস্টের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ইমরুল কায়েস নিজেকে টি-টোয়েন্টিতেও প্রমাণ করেছেন। ১১ ম্যাচে তার সংগ্রহ ২৬৯ রান। হাঁকিয়েছেন একটি ফিফটটিও। তার সঙ্গে আছেন তরুণ উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান লিটন দাস। অবশ্য এখনও এই তরুণের ব্যাট বিপিএলে তেমন কোনো ঝলক দেখাতে না পারলেও অধিনায়কের বিশ্বাস, তার জ্বলে ওঠার জন্য একটা ম্যাচই যথেষ্ট। সেটি ফাইনালে তো আশা করাই যেতে পারে। এছাড়াও দলের বিদেশি শক্তির মধ্যে আসহার জাইদি ও আহমেদ শেহজাদও আছেন ফর্মে। অন্যদিকে তরুণ পেসার আবু হায়দার রনি ১১ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়ে ফাইনালে শেষ চমক দেখাতে প্রস্তুত।
অন্যদিকে ক্রিস গেইল চলে গেলেও বরিশালকে ফাইনাল নিশ্চিত করে জাতীয় দলের তরুণ তারকা সাব্বির রহমান রুম্মানের ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীসের হাত ধরে। এছাড়াও রায়ন এম্রিট, কেভিন কুপারদের মতো বিদেশিরাও দলের জন্য অবদান রেখে নিজেদের প্রমাণ করেছেন। দেশি ও বিদেশি শক্তি মিলিয়ে বুলসের অধিনায়ক প্রস্তুত তার প্রতিশোধের মিশনের জন্য। কারণ, শেষবার ফাইনালে চিটাগং কিংসের অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির ঢাকার কাছে হারতে হয়েছিল। আর অধিনায়ক মাশরাফিও অপেক্ষায় হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হতে।