পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত জেএমবি (জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) জঙ্গিদের লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা। ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইয়ের নথিতে তা বলা হয়েছে। এনআইয়ের বক্তব্য হত্যা ও নাশকতা ঘটিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশেই পশ্চিমবঙ্গে বহু জঙ্গি ডেরা ও বর্ধমানের খাগড়াগড়সহ একাধিক জায়গায় বোমা-বিস্ফোরকের কারখানা তৈরি করেছিল জেএমবি। বাংলাদেশে সাফল্য মিললে জেএমবি ধীরে ধীরে ভারতেও সেই লক্ষ্যে এগোতো বলে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি (অতিরিক্ত) চার্জশিটে এ কথা জানিয়েছে এনআইএ। গত সোমবার কলকাতার মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে প্রায় ৩৫০ পাতার ওই অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করেছে এনআইএ। এনআইএ সূত্রে জানা গেছে, এই দ্বিতীয় অতিরিক্ত চার্জশিটই খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার চূড়ান্ত বা ফাইনাল চার্জশিট। এই মামলায় এখনও পর্যন্ত ৬৬ হাজার ৭৫৩ পাতার নথি আদালতে জমা দিয়েছে এনআইএ। মামলায় ২৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে এনআইএ। তবে এর মধ্যে ৯ জন এখনও ফেরার। এবার চার্জশিটে সকলের বিরুদ্ধে নতুন কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রয়োগ করা হয়েছে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৫ ধারা। ভারত সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে বা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান রয়েছে এমন প্রতিবেশী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্ররোচনা দেয়া বা যুদ্ধ ঘোষণাই হলো এই ১২৫ ধারার মূল প্রতিপাদ্য। খুব কম ক্ষেত্রেই এই ধারা প্রয়োগ করা হয়। খাগড়াখড় কাণ্ডে এই ধারা প্রয়োগের ফলে এর আন্তর্জাতিক ব্যাপ্তি রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর আগে গত ৩০শে মার্চ এনআইএ এই মামলায় চার্জশিট দেয়। তার পর ২৩শে জুলাই গোয়েন্দারা প্রথম সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটটি জমা দেন। বর্ধমান শহরের খাগড়াগড়ের এক জঙ্গি ডেরায় ২০১৪-র ২রা অক্টোবর এক বিস্ফোরণে দুজনের প্রাণ যায়। ওই ডেরায় বিস্ফোরক এবং দেশি গ্রেনেড, সকেট বোমা ও বুলেটের মতো মারণাস্ত্র তৈরি হতো। এক সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে ওই ঘটনার তদন্তভার যায় এনআইএ-র হাতে। তদন্তে নেমে হদিস মেলে পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে জেএমবির জঙ্গি নেটওয়ার্কের, যার শাখা ছড়িয়ে ছিল অসম ও ঝাড়খণ্ডেও।