পৌর নির্বাচনে সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপিরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছে দলটি। গতকাল রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা। সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, প্রতিদিনই আমাদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এই নির্বাচনে বিধিমালা ভঙ্গের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সেই সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের কোন মাথাব্যথা নেই। তিনি বলেন, পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে না। এতে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে না। ওই ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের মতো আরেকটা প্রহসনের নির্বাচন তারা করছে। তবে ভোট সুষ্ঠু হলে শতকরা ৮০ ভাগ পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হবেন। বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আইযুব, ইয়াহিয়ার সরকার, আওয়ামী লীগের সরকার অতীতে জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে আজকে শোষণ-শাসনের আধিপত্য বিস্তার করে চলছে। তারাও টিকে থাকতে পারবে না। এরশাদ নয় বছর শোষণ-শাসন করেছে। তাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এখন এই সরকার জোর করে ক্ষমতায় আছে। তারাও পালাবার পথ পাবে না। রাজনৈতিক মতবিরোধ নিরসনে সরকারকে দ্রুত আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, জনগণের জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এই জাগরণে তারা উচ্ছেদ হয়ে যাবে। যদি অবিলম্বে একটা জাতীয় বৈঠক করে আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা না হয়, তাহলে আমরা দেখব, দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেটা আমরা চাই না। গণতন্ত্র ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে না আসবে, বুলেটের চেয়ে শক্তিশালী ব্যালট প্রয়োগ করে মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত তার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চলবে। বিচ্ছিন্নভাবে কোন রাজনৈতিক দল তা দমাতে পারবে না। দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেন, একজন এমপিকে ছয় মাসের সাজা দিলে অন্যরা এমনিতেই পালিয়ে যেতো। ছয় মাসের সাজা দেয়ার বিধানও আছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে হাফিজউদ্দিন বলেন, এটা কিসের নির্বাচন হবে? বর্তমান নির্বাচন কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এরা নতজানু। ইতিমধ্যে বিএনপির প্রার্থীদের হাইজ্যাক করে আওয়ামী লীগের ৩৩ জন কাউন্সিলর বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আর ঘরে বসে থাকা নয়। এবার বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাজপথে নামতে হবে। অবৈধ, বিনাভোটে নির্বাচিত স্বৈরাচারী সরকারকে হটাতে হবে। দেশনেত্রী আন্দোলনের ডাক দিবেন। আপনারা প্রস্তুত হোন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে হাফিজউদ্দিন আহমদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কৃতিত্ব আজকে রাজনীতিবিদরা হাইজ্যাক করে নিয়েছে। তিনি বলেন, যে গণতন্ত্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তা আজ ফিকে হয়ে গেছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। আইনের শাসন নেই। মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, বঙ্গভবনে দাওয়াত দিয়ে প্রবেশ করতে না দেয়ায় একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরপ্রতীক হিসেবে আমি বিব্রত। আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের সঞ্চালনায় আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।