স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার যে অনেক ফারাক, তা মালদ্বীপ ম্যাচে টের পেয়েছেন মারুফুল হক। নিজের পরিণতিও মেনে নিয়েছেন। সাফের ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে সরে যেতে প্রস্তুত এই কোচ। কিন্তু কোচ বিদায় হলেই কি সাফের লজ্জা কমে যাবে এ জাতির? মোটেও না। ঘরোয়া ফুটবলে কথিত দেশসেরা ফুটবলার মামুনুল ইসলাম চলতি মৌসুমেও অর্ধকোটি টাকা নিয়েছেন। নামিদামি প্লেয়ারদের ৪০-৪৫ লাখ টাকায় দলে নিচ্ছে বিভিন্ন ক্লাবগুলো। সে সব ফুটবলাররা কি তাদের দামের যথোপযুক্ত ফলাফল দিতে পেরেছে? তাদের কি দায় নেই এই ব্যর্থতার?
সাফের ২১ দিন আগে দায়িত্ব দিয়েই মারুফুলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন বাফুফের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। ট্রফি জিতো নইলে বিদায়। সালাউদ্দিনের কথাতেই সাফের পর মারুফের বিদায় নিশ্চিত। স্প্যানিশ ফুটবলে গত শতাব্দীর সেরা ক্লাব রিয়াল যেখানে একের পর এক হোঁচট খাচ্ছে সেখানে সমর্থকেরা সবচেয়ে বেশি দায়ী করছেন প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে। আর এ দেশে? একের পর এক ব্যর্থতার দায় কোচদের উপর চাপিয়ে বহাল তবিয়তেই আছেন স্বপ্ন বিলাস সালাউদ্দিন। অথচ মালদ্বীপের কোচ তো গতকাল বলেই ফেললেন যে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা ঘন ঘন কোচ বদলানো। এর দায়টা পুরোপুরিই বাফুফের। সিনিয়র কিছু খেলোয়াড় বাদ পড়বে এই ভয়ে তারা কোচকে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিতে চান না। অথচ সেই স্বাধীনতা পেলে আমাদের দেশে কাজ করে যাওয়া ক্রুইফ, ডিডোর মতো কোচেরা এতদিনে দেশের ফুটবলকে অনেক উপরে নিয়ে যেতে পারতো। মারুফও মানছেন স্বল্প সময়ে কোনো কোচের পক্ষেই বাংলাদেশের এ টিম নিয়ে রাতারাতি সফলতা এনে দেয়া সম্ভব না। চাই পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে দীর্ঘ সময়। তিনি স্বীকার করেছেন এসব ফুটবলারদের উপর আস্থা রেখে ২১ দিনের চ্যালেঞ্জ নেয়া টার ভুল হয়েছে। গতকাল হোটেল তাজে বিধ্বস্ত মারুফুল হক বলছিলেন এসব কথা। ঠিক এ সময়ে বারান্দায় ঘুরতে দেখা গেছে ফুটবলারদের। যাদের ব্যর্থতায় সাফ কভার করতে আসা সাংবাদিকরা লজ্জায় মুখ লুকাচ্ছেন, সে সময়ে তারা টিভিতে ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ আবার ব্যর্থতার দায় অন্যের ঘারে চাপিয়ে নিজেদের দায়মুক্তি করছেন। মালদ্বীপ ম্যাচে ছেলে মানুষের মতো পেনাল্টি খাওয়ানো ওয়ালি ফয়সালতো ভুটান ম্যাচে জয়ের নিশ্চয়তা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। মাঠে খেলতে না পারা জাহিদ, মামুনুলদের ভেতরেও এতটুকু পরিমাণে আত্মসমালোচনা লক্ষ্য করা যায়নি। এদের মধ্যে ব্যতিক্রম কেবল জামাল ভূঁইয়া। গত সাফ থেকে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে বাংলাদেশের হয়ে খেলা এই ফুটবলার আগের ম্যাচে ভুল ত্রুটি নিয়ে কোচের শরণাপন্ন হচ্ছেন। আলাপকালে নিজেদের ব্যর্থতার ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। অন্যদের মধ্যে এই কমিটমেন্টের অভাবই দেখছেন দলটির সহকারী কোচ জুলফিকার মাহামুদ মিন্টু।