পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকালও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হামলা হয়েছে প্রার্থীর বাড়ি ও নির্বাচনী প্রচারণায়। রাজনৈতিক দলের কার্যালয় ও নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর করা হয়েছে।
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর এলাকার রূপপুর, ডাকবাংলাপাড়া, কান্দাপাড়া ও দারিয়াপুর মহল্লা সহ কয়েকটি স্থানে উপর্যুপরি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীর কর্মীসহ কমপক্ষে ৬ জন আহত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় রূপপুর মহল্লার বিএনপি কর্মী ইয়াছিন আলী (৫০)কে এনায়েতপুর হাসপাতাল ও দারিয়াপুর মহল্লার একই দলের টুটুল (২২)কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ভর্তি করা হয়েছে। গত শনিবার রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে একের পর এক এ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কে বা কারা এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারেনি। থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল হক জানান, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় তার কাছে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ করেননি।
মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম. এমদাদুল হকের বাড়িতে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা এ হামলা করে। থানার ওসি মো. রাশেদুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্র্শন করেছেন। পুলিশ জানায়, অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা ৪টি ককটেল নিক্ষেপ করেছে এমদাদুল হকের বাড়ির দিকে। এর একটি ককটেল দেয়ালের সঙ্গে বিস্ফোরিত হয়েছে। অপরগুলো বিস্ফোরিত হয়নি। পুলিশ অপর ৩টি ককটেল উদ্ধার করেছে। এমদাদুল হক বলেন, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বিকট শব্দ শুনে তিনি ও তার পরিবারের সকলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে থানায় জানানো হলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি জানান, কেশবপুর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী আব্দুস সামাদ বিশ্বাসের ধানের শীষ প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরসহ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের চেয়ার, টেবিল, টেলিভিশনসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। ২৬শে ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পৌর এলাকার হাবাসপোল, ভোগতি, কালাবাসার মোড়সহ বিভিন্ন স্থানের ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ বিশ্বাস ২৭শে ডিসেম্বর বেলা ১২টায় ভাঙচুরকৃত নির্বাচনী অফিস ও দলীয় কার্যালয়ের পাশেই এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলন করেন।
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনার বেতাগী পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. হুমায়ূন কবিরের বাড়িতে শনিবার রাত ১২টার দিকে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। বেতাগী উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে হুমায়ূন কবির অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে বেতাগী থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ছাত্রলীগের কিছু দুষ্ট ছেলে বিএনপি প্রার্থীর বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাশের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দরজা ভাঙচুর করেছে। খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর গণসংযোগকালে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে পৌরসভার আরামনগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয়পক্ষের ১৯ কর্মী-সমর্থক আহত হয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, কুয়াকাটা পৌর নির্বাচনী প্রচারণায় পৃথক দুটি ঘটনায় ছাত্রলীগের ৭ ও বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীসহ মোট ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এমন খবর পেয়ে কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা পৌর নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
কুয়াকাটা হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিল প্রার্থী আলী আক্কাস তার নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় নামলে বাধা দেয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও তার সমর্থকরা।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং সহিংসতায় যুক্ত রয়েছে এমন অভিযোগে কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও শানুকে ভ্রাম্যমাণ আদালত আটক দেখিয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মঈন উদ্দিন খন্দকার বলেন, সহিংসতায় যুক্ত ছিল এমন কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ত্রিশাল পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বর্তমান মেয়র স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এবিএম আনিছুজ্জামান (জগ)-এর সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর বেশ কয়েকজন সমর্থক আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডে সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি রুহুল আমিন মাদানীর সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও তরফদারবাড়ী এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে আকরামের পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আকরামকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি এবং অন্য আহতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাট বিএনপি প্রার্থীর ১৪টি মাইক ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপির ১১ জন কর্মীকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় ৪ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই দিন সন্ধ্যায় মোরেলগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজে পৌর মহিলা দলের আহ্বায়িকা সাবিনা সুলতানাকে তার বাড়িতে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়েছে। বাগেরহাট পৌরসভার ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি কর্মীদের পোলিং এজেন্ট হতে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাই সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি করেন।
ভোলা প্রতিনিধি জানান, ভোলায় বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আকবর আকনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সন্ধ্যায় ভোলা পৌর ৬ নং ওয়ার্ডের আদর্শ একাডেমি রোডে পাঞ্জাবি প্রতীকের প্রার্থী আকবর আকন নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে প্রতিপক্ষের কাউন্সিলর প্রার্থী ওমর ফারুকসহ তার নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এসময় বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীসহ অন্তত ৭ জন আহত হন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।