২০১৪ সালের ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। তাই স্বাগতিক হিসেবে প্রথম বিশ্ব আসরে খেলার সুযোগ মহিলা ক্রিকেটারদের। সালমা বাহিনী শেষ পর্যন্ত ৯ম স্থানে থেকে মান রক্ষা করেছিল দেশের। এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খুব একটা খেলা হয়নি ২০১৫ সালে। বছরের শেষ দিকে এসে পাকিস্তান সফরে যায়। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে দেশে ফিরে মহিলা দল। এরপরই পরিবর্তন আসে অধিনায়কত্বে। সালমা খাতুনকে ওয়ানডে অধিনায়ক রাখা হলেও দলের সেরা ব্যাটসম্যান জাহানারা আলমকে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক করা হয়। দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি জিতে নয়া অধিনায়ক জয় যাত্রা শুরু করেন। এরপর ব্যাংককে আইসিসির টি-টোয়েন্টি কোয়ালিফায়ারে তার নেতৃত্বে প্রথমবার মাঠের লড়াইয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৬ সালে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ অর্জন করে বাংলাদেশ মহিলা দল। সারা বছর তেমন কিছু করে দেখাতে না পারলেও শেষ দিকে মহিলা দলের জন্য এটিই সেরা অর্জন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বিশ্বকাপকে লক্ষ্য করে ক্যাম্প। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সুখতারা, লতা মণ্ডলরা। নিজেদের বছরের অর্জন আর নতুন বছরের এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মানবজমিন স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলেছেন অধিনায়ক জাহানারা। তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: ২০১৫ সালটা কেমন গেল?
জাহানারা: খুবই ভালো। অনেক ভালো অর্জন ছিল। যেমন আমরা জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলাম। আমরা বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করলাম। এবার বছরে আমরা বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি। তো খুব বেশি টুর্নামেন্ট না পেলেও আমি মনে করি এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন।
প্রশ্ন: ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পাওয়াতে কতটা আত্মবিশ্বাস বাড়লো?
জাহানারা: জয় মানেই আত্মবিশ্বাস বাড়া। আর আমরা ভালোভাবেই জিতেছি। যে কোনো কারণে হয়তো আমরা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। তারপরও আমি মনে করি আমরা অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছি। এই জয়ের রেশ আমাদের পরবর্তী টুর্নামেন্টে অনেক কাজে আসবে।
প্রশ্ন: সারা বছর তেমন খেলা থাকে না। অবসরে নিজেদের প্রস্তুত রাখেন কিভাবে?
জাহানারা: আমরা আলাদাভাবে কাজ করি। আমরা বসে থাকি না। যেহেতু আমরা এখন অনেক পেশাদার। হয়তো একটা সময় ছিল যখন আমরা বসে থাকতাম। ক্যাম্পের জন্য অপেক্ষা করতাম। অনুশীলনের জন্য মাঠ ছিল না। কিন্তু এখন আমরা অনেক অ্যাকটিভ, প্রায় সবাই। সবাই কঠোর পরিশ্রম করে, ফিটনেসের সঙ্গে সঙ্গে স্কিলটা উন্নত করছে। ক্যাম্প ছাড়া প্রধান কোচ, সহকারী কোচ, ট্রেইনার, ফিজিও সবাই আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। তারা আসছেন আমরা বোর্ডের মাঠ ব্যবহার করছি একাডেমিতে থেকে বা একাডেমির মাঠটা ব্যবহার করছি। তারা আমাদের ক্যাম্পের মতোই সময় দিচ্ছে। এটা হয়তো ক্যাম্প বলা হচ্ছে না কিন্তু আমরা যার যার মতো কাজ করছি।
প্রশ্ন: আপনার দলের মূল শক্তি কি মনে করেন?
জাহানারা: আমার দলের শক্তি বরাবরের মতো বোলিং এবং ফিল্ডিং। এটা এখনও পর্যন্ত অটুট আছে। এবং আমি মনে করছি আরো বেড়েছে। এ ছাড়া ব্যাটিংয়েও আমরা অনেক উন্নতি করেছি। আগে আমাদের দলে চার-পাঁচটা ব্যাটসম্যান ছিল। একজন দুইজন খারাপ করলে আমরা মনে করতাম হয়তো আমরা ৫০ রানও করতে পারবো না। এখন এমন একটা অবস্থা এসেছে আমরা অনেক উন্নতি করেছি ব্যাটিংয়ে। একজন দুজন ব্যাটসম্যান না পারলেও শেষের দিকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট নাম বলার মতো কিছু নেই। বলা যায় না কে ওপেনিং করছে। যেমন শেষ ম্যাচে আমাদের ওপেনার অসুস্থ থাকায় ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান ওপেনিং করেছে। আমাদের যদি এমন শক্তি থাকে সেই দলের আর কি লাগে। ব্যাটিংয়ে তারপরও আমাদের অনেক সমস্যা আছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করবো। আমরা সবাই ক্যাম্প শুরু করেছি ফিটনেসের স্কিল দিয়ে। আমাদের হাতে এখনো দুই মাসের মতো সময় আছে। আশা করছি ব্যাটিং, শক্তির ওপর কাজ করবো। ইতিমধ্যে ফিটনেসের ওপর কাজ করছি। আমরা ভালো কিছু করতে পারবো।
প্রশ্ন: সাবেক অধিনায়ক সালমা দলের জন্য কতটা স্বস্তির?
জাহানারা: সালমা আপু অনেক সাহায্য করছে। উনি যেহেতু অনেক অভিজ্ঞ। শুধুমাত্র সালমা আপু নয়, দলের সবাই অভিজ্ঞ। দলের সবাই অধিনায়ক। তারা প্রায় আট নয় বছর ক্রিকেট খেলে ফেলেছে জাতীয় দলে। প্রত্যেকেই অধিনায়ক হওয়ার যোগ্যতা রাখে। শুধুমাত্র দলের জন্য একজন লিডার দরকার তাই আমি হয়তো এসেছি। শুধু সালমা আপু নয়, দলের প্রত্যেকেই ভালো সাপোর্ট করছে। ভালো একাত্মতা আছে আমাদের। আমরা এটা নিয়েই ভালো কিছু করেছি এবং ভবিষ্যতেও করবো।
প্রশ্ন: দলের সদস্যদের জন্য অধিনায়ক হিসেবে বার্তা কি?
জাহানারা: আমরা একাত্ম হয়ে থাকবো সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। এবং যার যতটুকু সামর্থ্য আছে শুধু ওই টুকুই যদি আমরা দিতে পারি বাংলাদেশকে দিতে পারবো।
প্রশ্ন: ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে প্রতিপক্ষ নিয়ে কি ভাবছেন?
জাহানারা: আমাদের এমনিতে খেলার সুযোগ কম থাকে। যত খেলবো ততই আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়বে। বিশেষ করে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সঙ্গে খেলা মানে অনেক কিছুই শেখা। তাই চেষ্টা থাকবে ভালো খেলার সঙ্গে কঠিন প্রতিপক্ষের কাছ থেকে শেখারও।