৩ ডাক্তারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। গত বুধবার এই ঘটনার প্রতিবাদে সব বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা রোগী দেখা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। এতে বিপাকে পড়ে সবাই ভিড় করতে থাকেন সরকারি চমেক হাসপাতালে। সরজমিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা বন্ধ থাকায় সবাই সেবা নিতে ভিড় করছেন সেখানে। কেউবা আসছেন দূর-দূরান্ত থেকেও। বেসরকারি ডাক্তাররা জানিয়েছেন, ওই ৩ ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা তুলে না হলে তারা সেবা বন্ধ রাখবেন। অন্যদিকে নিহত দুই রোগীর আত্মীয় স্বজনদের সমর্থনে গতকালও নগরীতে অভিযুক্ত ডাক্তারদের শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ মানুষ। নিহত দুই রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা জানান, অপারেশনের পর এক রোগীর পেটে ব্যান্ডেজ রেখে দেয়া হয় সম্প্রতি চমেক হাসপাতালে। আরেক মহিলা বিয়ের এক বছরের মাথায় সুস্থ সন্তান জন্ম দেয়ার পর কেবল ডাক্তারদের অবহেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান। এই অভিযোগে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একই দিনে দু’টি মামলা দায়ের করেন দুই পরিবার। মামলা দু’টি আমলে নিয়ে মহানগর হাকিম মোহাম্মদ ফরিদ আলম পাঁচলাইশ থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ দিয়েছেন। এই ঘটনার পরপরই গত বুধবার থেকে সব ধরনের চিকিৎসা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয় বেসরকারি ক্লিনিকে। গতকাল বৃহস্পতিবারও এই দুর্ভেগ অব্যাহত থাকে। রোগীরা শহরের বিভিন্ন ডায়াগনেস্টিক হাসপাতালে গিয়েও কোন ধরনের সেবা না পেয়ে ভিড় করতে থাকেন চমেকে। অত্যাধিক চাপ বেড়ে যাওয়ায় মেডিকেল চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সব ধরনের ছুটি বাতিল করে পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত সেবা দেবেন। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ড. সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, এখন কথা বলার সুযোগ খুব কম। দেখতেই তো পারছেন প্রচুর রোগী আসছে। বেসরকারি সব হাসপাতাল বন্ধ। এই অবস্থায় তারা কোথায় যাবে। তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি পরিস্থিতি শান্ত হবে। সমঝোতা হবে। তবে বিষয়টি বাড়তে থাকলে রোগীদের ক্ষতি হবে। ডাক্তারদেরও ভালো মানের সেবা দেয়া সম্ভব হবে না। এদিকে আদালত থেকে কোনোভাবেই মামলা প্রত্যাহার করবেন না বলে জানিয়েছেন ওই দুই রোগীর আত্মীয় স্বজনরা। এর মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র ছোটভাই খাইরুল বশর নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছেন সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তার মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায়। এতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুল আলম ও তার স্ত্রী শামীমা রোজীকে আসামি করা হয়েছে। আরেক ঘটনায় অপারেশনের সময় নূর আবছার নামে এক কিশোরের পেটে ব্যান্ডেজ রেখে দেয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. রানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে একই আদালতে মামলা হয়েছে। ছেলের অঙ্গহানির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন ওই কিশোরের পিতা জেবল হোসেন।