গোষ্ঠী কোন্দল নতুন নয়, পাড়ার দখল নিয়েও সাসক দলের দুই মেজ-নেতার আকচাআকচির ঘটনার সাক্ষীও বহু বার থেকেছেন গ্রামের বাসিন্দারা। এ বার পাড়ার মেয়ে, বেপাড়ায় বাড়ির অমতে বিয়ে করায় ‘দাদাগিরি’র নজিরও গড়লেন ফুলিয়া পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল উপপ্রধান। শুক্রাবার সকালে সেই ঘটনার সাক্ষী থাকল পূর্ব ফুলিয়া পাড়ার বাসিন্দারা।
১৯ জানুয়ারি ফুলিয়া নতুন মাঠ পাড়ার বাসিন্দা প্রভাস রাজবংশীর মেয়ে ঝুমা এবং পূর্ব ফুলিয়া পাড়ার বাসিন্দা মনোরঞ্জন সরকারের ছেলে শ্রীবাস পালিয়ে গিয়ে সেরে ফেলেছিলেন তাঁদের বিয়েটা। তাঁদের এই বিয়েতে মত ছিল না ঝুমার বাপের বাড়ির।
বিয়ের পরে তারা ঠাঁই নিয়েছিল শ্রীবাসের এক বন্ধুর বাড়িতে। পর দিন ঝুমার পরিবার খোঁজ পেয়ে সেই বন্ধুর বাড়িতে চড়াও হয়। সেখান থেকে তাঁরা কোনও রকমে পালিয়ে হবিবপুরে শ্রীবাসের দিদির বাড়িতে আশ্রয় নিলে দলবল নিয়ে সেখানেও পৌঁছে গিয়েছিলেন ঝুমার বাপের বাড়ির দতঙ্গল। অভিযোগ, সে ব্যাপারে স্থানীয় পঞ্চায়েতের এক উপ-পুরপ্রধানের ভূমিকাই ছিল মুখ্য।
ঝুমার বাপের বাড়ির এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য বেলগড়িয়ে-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান তৃণমূলের সুনীল বসাক। ঝুমার বাপের বাড়ির লোকজন সুনীলবাবুর কাছে গিয়ে মেয়েকে ‘উদ্ধার’ করার আবদার জানান। সেই মতো শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ সুনীলবাবু শ্রীবাসের বাড়িতে হাজির হন। বাড়িতে ঢুকে সুনীলবাবু ঝুমাকে তাঁর সঙ্গে বাড়ি চলে যেতে বলেন। কিন্তু ঝুমা রাজি না হওয়ার তিনি নানা ভাবে ভয় দেখান বলে অভিযোগ। শনিবার সকালেও চোখেমুখে একরাশ আতঙ্ক নিয়ে ঝুমা বলেন, ‘‘সুনীলবাবু আমাকে বাবার কাছে চলে যাওয়ার জন্য নানা ভাবে ভয় দেখাতে থাকেন। প্রশ্ন করেন, বাড়ির অমতে বিয়ে করলি কেন?’’ আর তাতেই সঙ্গে নিয়ে আসা ‘গুন্ডা’ দের গুলিও চালাতে বলেন তিনি বলে অভিযোগ। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন তাঁদের গ্রামের তৃণমূলের প্রধান শ্রীদাম প্রামাণিকও।
শ্রীবাসের কথায়, ‘‘সুনীলবাবুরা চাইছিলেন যে আমার স্ত্রীকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে। আমার প্রতিবেশী ও বন্ধুরা সেটা হতে দেননি।’’
অভিযোগ ঝুমার বাপের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আসা লোকজন লোহার রড, বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারতে থাকে বলে অভিযোগ। সঙ্গে ছিলেন সুলীল বসাকের দাদা সুশীলও। তাঁর চোকের ইশারায় ওই বহিরাগতরা শীবাসের পরিবারের উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ।
তাদের মারে শ্রীবাসের কাকিমা ডলি সরকার জখম হন। তাঁকে ফুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘‘চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে দেখি উপপ্রধানের সামনেই আমাদের বউমাকে ধরে মারছে। জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমি ছুটে গিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করতে একটা ছেলে আমাকে লাঠি দিয়ে মারে।’’ শ্রীবাসের বাবা তাঁতশ্রমিক মনোরঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘উপপ্রধানের সামনেই ওরা যেন আমার বাড়ির উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। কাউকেই বাদ দিল না। বৌমার বাড়ির লোকজন আমাকেও মারতে এল। সেই সময় আবশ্য প্রধান এসে ঠেকিয়েছেন তাঁদের।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রথমেই বলেছিলাম বৌমা যদি স্বেচ্ছায় চলে যেতে চায় তা হলে নিয়ে যাক। কিন্তু জোর করে নিয়ে যেতে দেব না।’’ যদিও ঝুমার বাপের বাড়ির লোকেদের দাবি, উল্টে তাঁরাই নাকি মার খেয়ে এসেছেন। বাবা প্রভাস রাজবংশী বলেন, ‘আমরা দিয়েছিলাম মেয়েকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু ওরাই তো আমাদের ধরে মারল। তবে উপপ্রধান প্রথম থেকেই আমাদের পাশে ছিলেন।’’
সুনীলবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘মেয়েটার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। তারপর এমনটা করতে পারে না। তাই আমি সমঝোতা করাতে এসেছিলাম। তবে গুলি চালানো বা ভয় দেখানোর কথা সম্পর্ণ মিথ্যে।’’
শ্রীবাসের পরিবারে দাবি, শুক্রবার রাতেই তারা শান্তিপুর থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে এসেছেন। কিন্তু শনিবারও তারা থানায় গিয়ে এফআইআর নম্বর পান নি। এত কিছুর পরে পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিল না?
জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগের বিষয়টি আমি খোঁজ নিচ্ছি। তবে তবে যা অভিযোগ হবে তেমনই তো ব্যবস্থা নিতে হবে!’’ তাঁর উত্তরেই স্পষ্ট সাসক দলের নেতাদের জন্য নিয়ম ভিন্ন!