1. ccadminrafi@gmail.com : Writer Admin : Writer Admin
  2. 123junayedahmed@gmail.com : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর
  3. swadesh.tv24@gmail.com : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম
  4. swadeshnews24@gmail.com : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর: : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর:
  5. hamim_ovi@gmail.com : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  6. skhshadi@gmail.com : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান: : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান:
  7. srahmanbd@gmail.com : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  8. sumaiyaislamtisha19@gmail.com : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান
ফেসবুকের মেয়েটি - Swadeshnews24.com
শিরোনাম
সোনার দাম আরও কমল রাজধানীতে পানি, স্যালাইন ও শরবত বিতরণ বিএনপির জায়েদ খানের এফডিসিতে ফেরা হবে কিনা, জানালেন ডিপজল কক্সবাজার জেলায় কত রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট সিনেমা হলে দেওয়া হচ্ছে টিকিটের সঙ্গে ফ্রি বিরিয়ানি ঢাকায় বড় জমায়েত করতে চায় বিএনপি ১৫ বছর পর নতুন গানে জেনস সুমন যশোরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেলের জয়লাভ গোবিন্দগঞ্জে অটোচালক দুলা হত্যার মূল আসামি আটক চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু পলাশবাড়ীতে উপজেলা নির্বাচনে অনলাইন মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেই বিএনপি বলে বিরোধীদল দমন’ এবার বুবলী-শাকিবের ‘কোয়ালিটি টাইম’ নিয়ে মুখ খুললেন অপু বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মতো: সিপিডির রেহমান সোবহান

ফেসবুকের মেয়েটি

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৬
  • ৪৭৫ Time View

আজ প্রিয় পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হলো সোলায়মান সুমনের গল্প ‘ফেসবুকের মেয়েটি’।

 

সী ফুডের এমন অভিজাত রেস্তোঁরা ঢাকায় আছে আমি সত্যি জানতাম না।এত সুন্দর ভিউ- সামনে সারি সারি নারকেলের গাছ।

সুইমিং পুলটাও কী সুন্দর। ভরাট চাঁদটা পুলের স্বচ্ছ জ্বলে সাঁতার কাটছে। রেস্তোরার সেন্ট্রাল রুমের স্বচ্ছ কাঁচের দেয়াল দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল ওরা। এখানেই বসা যাক। কী সুন্দর ভিউ!
নাহ আনিস, আমরা ঐ পাসটাই বসব। অনিতা আপত্তি জানায়।
ভিউটা দেখ বেবি, সো নাইস। এখানে বসলে হৃদয়ে ভালোবাসা এমনিতেই জেগে উঠবে। গুলশানে নয় সুইজারল্যান্ডের কোনো সী বিচ কটেজে এসেছি মনে হচ্ছে। অনিতা বেবি তোমার পছন্দের প্রশংসা না করে পারছি না। ডেটিং-এর জন্য জায়গাটা পার্ফেক্ট।

আনিস প্লিজ, একটা বিশেষ কারণে এখানে বসতে পারছি না। অনিতার সুন্দর নীল চোখ দুটোতে সামান্য রাগ আর বিরক্তি।

এবার আনিস নরম হল। আগে বল কেন? তারপর যাচ্ছি।
নো নেভার। আগে চলো ঐ কোণায় গিয়ে বসি তারপর বলছি।
ওকে বেবি। আনিসকে হার মানতেই হল।

কোণার একটা টেবিলে গিয়ে বসল তারা। হোটেলের টেবিলগুলো প্রায় ফাঁকা। দুয়েকটি টেবিলে ছড়ানো ছিটানো কিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে বসে আছে। তাদের বেশিরভাগ প্রেমিক জুটি অথবা নবদম্পতি। আনিসদের টেবিলের মাঝ বরাবর একটা সিরামিকের বিশাল ফুলদানি। তাতে লাল হলুদ নীল সাদা… গোলাপ। ওখান থেকে আনিস একটা লাল গোলাপ নিয়ে অনিতার সামনে বেশ কায়দা করে ধরল। বিউটি ফুল লেডির জন্য বিউটি ফুল রোজ।

থ্যাংক ইউ। প্রথমেই লাল গোলাপ। অনিতা গোলাপটা নাকের কাছে আনতেই তার ভেতর থেকে- হাঃ ছিঃ! একটা হাচি বেরিয়ে এলো।
তুমি রাগলে যেমন সুন্দর দেখায়- হাঁচি দিলেও ঠিক তেমনি সুন্দর দেখায়। আনিস মন্ত্রমুগ্ধের মত অনিতার দিকে তাকিয়ে থাকে।

হরিণের মতো টানা টানা চোখ দুটো অনিতা টেবিলের কোণায় স্থির করে রাখে- যেন আনিসের কথায় লজ্জা পেয়েছে।
সেদিন ডিজে পার্টির নিবু নিবু লাল-নীলবাতির আলোতে তোমার প্রাণ খোলা হাসি দেখে আমি তো দু’রাত ঘুমুতে পারিনি। আনিস বলে।
এখন ঘুম হচ্ছে তো? জানো তো মানুষ না খেয়েও দশ দিনের বেশি বাঁচতে পারে কিন্তু না ঘুমিয়ে নয়।
সেই ভয়েই তো আছি। ফেসবুকের প্রোফাইলে তোমার ছবিটা যখন দেখি, আমি তো একেবারে টাসকি খেয়ে গেছিলাম। আমার ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠেছিল, ইউ আর ইন লাভ!
সে তো আমার ছবি ছিল না।
ঐ তো তোমার নূপুর পরা দুটি পা। শাড়িটা হাঁটুর সামান্য নিচ পর্যন্ত তোলা। আমি ভাবলাম, যার চরণ দুটো এত সুন্দর সে না জানি কত সুন্দর! আর টাইমলাইনে ঢুকে যেদিন তোমার ছবির খোঁজ পেলাম, আমি সেদিন থেকে আমি পুরাই ম্যাড। ও বেবি তুমি যে কত সুন্দর। ইউ আর মোস্ট বিউটিফুল গার্ল আই ইভার সিন! এই কথাগুলো অনেক বার অনিতাকে বলেছে আনিস। ফেসবুকে, স্কাইপিতে আর সেদিনের ডিজে পার্টিতে। তবুও বার বার বলতে ইচ্ছে করে- অনিতাও বেশ আনন্দের সাথে শোনে।
সত্যি, অনিতা দেখতে একটা নিখুঁত বার্বি ডল। মৃগনয়ন দুটো হৃদের জলের মত স্বচ্ছ- কী যে মায়া ভরা! চোখের পলক দুটো প্রতি পলকে পলকে যেন প্রেমের কবিতা পড়ে। গায়ের রঙে গোলাপি আভা- আধা কাঁচা পেঁপের মত। সিল্কি চুলগুলো ঝলমল করে কাঁধের উপর। ঠোঁট দুটো স্টবেরির মতো লাল চকচকে। সেদিন ডিজে পার্টিতে টি শার্ট আর জিন্স পরে এসেছিল অনিতা। আজ পড়েছে সবুজ জর্জেট শাড়ি সাথে ম্যাচ করে স্লিভলেস ব্লাউজ। ঐদিন ডিজে পার্টিতে তাকে দেখে আনিসের এক ধরনের উগ্র মুগ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল- অবশ্য সেটা কয়েক পেগ হুইস্কি খাবার কারণেও হতে পারে। আজ একধরনের রোমান্টিক অনুভূতি জাগছে আনিসের ভেতরে। যদি সমুদ্রের কিনারে বসে আঙুলের খাঁজে আঙুল রেখে, ওর মসৃণ গালের জমিনে নিজের খসখসে গাল মিশিয়ে সূর্যাস্ত দেখা যেত তবে আনিস হত পৃথিবীর সেরা সুখী মানুষ। অনিতাকে নিয়ে সত্যি কি তার বাসর গড়ার স্বপ্ন সত্যি হবে না?

ওয়েটার এসে আনিসের পাশে দাঁড়িয়েছে বেশ কিছুক্ষণ। সেদিকে খেয়াল ছিল না আনিসের- সে তো অনিতায় মুগ্ধ। এই অনিতা তুমি বল কী খাবে। আমি তো এখানে আগে আসিনি, এখানকার কোনটা বেস্ট আমি বলতে পারব না। তাছাড়া আমি তো হোস্ট।
জানো এখানকার টুনা মাছের সালাদ ভীষণ ডেলিসিয়াস।অনিতা সামান্য এগিয়ে এসে ফিস ফিস করে বলে, সী শেলের অনেক ধরনের মেন্যু আছে এখানে? খাবে?
তুমি খাও? আনিসের চোখে বিস্ময়।
তাতে কী? আমার তো ভীষণ পছন্দ।
তোমার যখন এত পছন্দ আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি। ওয়েটার ওয়েট করতে করতে বিরক্ত।
এখানকার স্পেশাল কী অনিতা? আনিস জিজ্ঞেস করে।
ওয়েটার আগ বাড়িয়ে নিজেই বলে, আমাদের সিচুয়ানের স্পেশাল আইটেমগুলো কাস্টোমারদের ভেরি ফেভারিট।
আজ আর সিচুয়ান না। অনিতা বলে, বার বার আপনাদের এই সিচুয়ান খেয়ে খেয় বোর হয়ে গেছি।
তবে ম্যাডাম, আপনার পছন্দের লবস্টারের স্পেশাল স্যুপ আনি?
ওকে। সাথে টুনা সালাদ। ড্রিংক্সটা পরে অর্ডার করছি। আর শুনুন- ওয়েটার চলে যেতে উদ্যত হলে অনিতা বলে, দুটো ক্রিম কেরামেল।
ওয়েটার যাবার পর আনিস বলে, আজ তোমাকে একটু অস্থির মনে হচ্ছে বেবি?
কেন সোনা?…
আজ আনিসের অনিতার সাথে সেকেন্ড ডেটিং। প্রথমটা ছিল একটি ফাইভ স্টার হোটেলের ডিজে পার্টিতে। অবশ্য অনিতার পিছনে লেগে আছে আনিস সাত মাস, চৌদ্দ দিন, আট ঘণ্টা ধরে। ফেসবুকে হঠাৎ অনিতার প্রফাইল চোখে পড়ে তার- আনিসের বন্ধু তারেক মিউচুয়্যাল ফ্রেন্ড ছিল তাদের। রীতিমত সে অনিতার জন্য পাগল হয়ে যায়। অবশ্য আনিসের মেয়ে পটানোর এক্সপেরিয়েন্স অনেক পুরনো। মেডিক্যাল কলেজর প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত টিস্যু পেপারের মতো সে গার্লফ্রেন্ড বদলেছে। দুবছর হল ইন্টার্নি শেষ করে ঢাকার একটি নামিদামি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করছে। এখন সে এক মেয়েতে থিতু হতে চায়- আদর্শ স্বামী হিসেবে সংসার জীবন শুরু করতে চায়। সকালে যদি অনিতার মতো একটা শুভ্র কুসুম মিষ্টি বউ রাতের দুষ্টুমি ধুয়ে ভেজা চুলে হাতে এককাপ গরম চা নিয়ে গুডমর্নিং বলে তার ঘুম ভাঙায় তবে জীবনে চাওয়া পাওয়ার ষোল আনা পূর্ণ হয়। ‘অহ সোনা! তোমার সাথে আগে কেন যে পরিচয় হলো না?’ উচ্ছ্বসিত আনিস টেবিলের উপর গুছিয়ে রাখা অনিতার হাতটা আলত করে ধরতে গেলে সে খানিকটা চমকে যায়। সে আনমনে বারান্দার পাশে বসে থাকা উস্কখুস্ক লোকটির দিকে বার বার তাকাচ্ছিল। ‘সোনা কী হয়েছে তোমার বলো তো? আমি বার বার লক্ষ করেছি, ইউ আর নট উইথ ইউ? আনিস এবার জোর দিয়ে জিজ্ঞেস করে।
ব্যাপারটা তেমন কিছু না।
নাহ, সামথিং রঙ।
আসলে আমি যে এনজিওতে চাকরি করি সেখানে তিন মাস ধরে স্যালারি দিচ্ছে না।
টাকা দরকার? সেটা আমাকে বল। এর জন্য তুমি মন খারাপ করে বসে আছো। আমাদের সুন্দর সন্ধ্যাটা নষ্ট করছ? দিস ইজ আনফেয়ার অনিতা।
টাকা তো দরকার হলে তোমার কাছে চেয়ে নিব কিন্তু কাজ করব, স্যালারি পাব না এটা কি ঠিক?
সমস্যাটা কোথায় সেখানে?
আমাদের সব চেয়ে বড় ফান্ডটা আসে ইউএসএ’র একটা সোর্স থেকে। কিন্তু ওরা হঠাৎ করে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে।

-কেন?
-অফিস তো বলছে বাংলাদেশে পলিটিক্যাল সিচুয়েশন, ফান্ডামেন্টালিস্টদের হঠাৎ তৎপরতা বেড়ে যাওয়া… এসবে বিদেশী ডোনাররা বিরক্ত। কিন্তু আমি জানি আসল খবর- বার্ষিক অডিটে এসে ওরা ফান্ড তসরুপ করার বিষয়টা আঁচ করতে পেরেছে।
সব সেক্টর অসৎ লোকে ভরে আছে। বাঙালির মোরালিটি একেবারে কোণায় গিয়ে পৌঁছেছে। তারপরও যে দেশটা কীভাবে টিকে আছে সেটাই ভাবি।

আসলে কি জানো আমরা পাশ্চাত্যের খারাপটা নেই আর ভালটা বর্জন করি।
ডার্লিং ওসব কথা বাদ দাও। খাবার খেয়ে চলো আমার বাসায় সারা রাত চুটিয়ে গল্প করব।
বাসায় কেউ নেই?
আমি ঢাকায় একেবারে একা থাকি। বাবা-মা চট্টগ্রামের কুলসিতে। সেখানে আমাদের বাড়ি আছে। এখানে গ্রিন রোডে আমার ফ্লাট।
সে না হয় বুঝলাম। দ্বিতীয় ডেটিংএ গার্লফ্রেন্ডকে একেবারে বাড়িতে নিতে চাইছো। তাও আবার ফাঁকা বাড়ি!
-ওহ অনিতা। কী যে বল না। কোথায় তুমি সারাজীবন থাকবে একবার দেখে নিবে না।
যাব এক দিন।
এরই মধ্যে খাবার চলে এসেছে। সীফুডের গরম ভাপের মৌ মৌ গন্ধ আনিসের নাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। অনিতা টুনামাছে কামড় দিয়ে গরম স্যুপে আলতোভাবে চামুচ নাড়তে নাড়তে বলে, তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। সেদিন ফেবুতে চ্যাট করতে করতে তোমাকে একটা কথা বলেছিলাম মনে আছে?
সেদিন মানে গত শুক্রবার?
নাহ, তারও আগে, দিনটা মনে নেই।
কী বলেছিলে? গরম.. . স্যুপটা ঠোঁট গড়িয়ে আনিসের ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়িতে স্থির হয়। সে টিস্যু পেপার দিয়ে সেটা মুছে ফেলে। মনে পড়ছে না। বাট, এখন বল।
তুমি দেখছি সব ভুলে যাও। অনিতা কৃত্রিম অভিমান তার চোখে-মুখে ছড়িয়ে দেয়।

-ও সোনা তোমাকে দেখার পর কিছু মনে থাকে না। আনিস স্যুপ গিলে উচ্ছাসের সাথে বলে।
শোনা আমি বলেছিলাম… বলেছিলাম আমার একজন বয়ফ্রেন্ড আছে মনে ছিল।
কিছুটা স্যুপ আনিসের গলায় আটকে আবার মুখের দিকে ফিরে আসে। সে টিস্যু দিয়ে ঠোঁট দুটো চেপে ধরে। অতঃপর মুখের স্যুপগুলো খুব সাবধানে গিলে ফেলে। এমন কথা বলেছিলে নাকি?

-ঠিক ওভাবে বলিনি। তুমি বলেছিলে তুমি বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসো। আমার সাথে একদিন বৃষ্টিতে ভিজবে।
হ্যাঁ, নিশ্চয় বলে থাকব। কারণ সত্যি আমার বৃষ্টি ভীষণ পছন্দ।
আমি উত্তরে কী বলেছিলাম তোমার মনে আছে?
কী?
বৃষ্টির শব্দ পুরনো বেদনার গান আমার বুকে জাগিয়ে তোলে- এমন কিছু বলেছিলাম। আসলে আমি একথাটাই বলতে চেয়েছিলাম।
কোন কথাটা?
সত্যি কি তুমি বোকা না বোকার ভান কর?
কেন এমন কথা বলছ সোনা।
আই এম ড্যাম সিরিয়াস! অনিতা রেগে গেছে যেন।
আমিও। বলো শুনছি। আনিসে খাবারে মনোযোগ নেই সে অনিতার কণ্ঠে যেন তার ফাঁসির রায় শুনতে চলেছে।
তুমি ঐ টেবিলে বসতে চেয়েছিলে। আমি বসিনি ক্যান জানো?
কেন? আনিসের চোখ দুটো যেন বেরিয়ে আসবে। তা দেখে অনিতা একটু বিব্রত হয়।
টেবিলটার কোণার টেবিলে যে ছেলেটি বসা সে আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড।
বলো কী!
আগে বললে তো অন্য কোনো হোটেলে গিয়ে বসতাম। এখানেই বসতে হবে এমন তো নয়।
সত্য থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেয়ে সত্যের সামনাসামনি হওয়া আমি বেশি পছন্দ করি। এতে নিজের কাছে নিজের সম্মান সুরক্ষিত থাকে।
সেটাই। খুব ভাল বলেছ। আনিসের গাল রক্তিম হয়ে যায়।
কী খবর সোনা মন খারাপ করলে মনে হচ্ছে। অনিতা আনিসের গোমড়া মুখ দেখে বলে।
না।
আমি চাইলে কিন্তু লুকোতে পারতাম- তা আমি করিনি। কারণ মিথ্যা দিয়ে একটা সম্পর্কের শুরু আমি চাই না।
ঠিক, একদম ঠিক। আসলে যত তোমার সাথে মিশছি, যত জানছি ‘আই এম সারপ্রাইজড’। তা তোমাদের সম্পর্ক ভাঙল কেন?
আসলে সে কখনো আমার কথা ভাবত না। তার কী পছন্দ, সে কী চায়- সেটাই আমার উপর জোর করে চাপিয়ে দিত। আমার ভাল-মন্দ পছন্দ-অপছন্দে তার খেয়াল ছিল না।
আর কিছু?
একটি সম্পর্ক নষ্ট হবার জন্য ‘দ্যাট ইজ নট এ্যানাফ?’
নিশ্চয় নিশ্চয়। আনিস আড় চোখে লোকটির দিকে তাকায়। লোকটি বিষণ্ন চোখে অনিতার দিকে তাকিয়ে আছে- চোখ দুটো ছল্ ছল্। আনিসের তেমনই মনে হয়।
ঐ ছলছল চোখ দুটোতে নিজের ভবিষ্যত দেখে আনিস শিউরে ওঠে। অহ!
কী হল? অনিতা অবাক হয়।
ঐ লোকটাকে দেখতে আমার ভাল লাগছে না। আনিস বলে।
আরে ওকে ভয় করার কিছু নাই। ও একটা কেঁচোর মত মানুষ।
চলো খাবারটা শেষ করে আমরা উঠি।
হুম। বাইরে নারিকেল গাছের পাতার আড়ালে মেঘ চমকে চমকে উঠছে। সুইমিং পুলের সাঁতাররত ভরাট চাঁদটা কোথায় হারিয়ে গেছে। বৃষ্টি হবে মনে হয়। দেরি করা যাবে না হোস্টেলে ফিরতে হবে।
ও কী করে জানল আজ তুমি এখানে আসবে? আনিস না চাইলেও তার চোখ বার বার লোকটির দিকে চলে যাচ্ছে।
আমি আসতে বলেছি? দুষ্টুমি ভরা হাসি অনিতার ঠোঁটের জোড়ায় আটকে আছে। অনিতার এবারের হাসিটা আনিসের ভালোলাগে না। ও জানে আমি শুক্রবার বিকেলে এখানে সময় কাটাতে পছন্দ করি, তাই হয়ত এসে থাকবে।
সে কি তোমার কাছে ক্ষমা চায়তে এসেছে?
হয়ত তাই। সে আমাদের টেবিলের এখানে এলে তুমি কিন্তু তার সাথে কোনো কথা বলবে না।
তুমি তাকে ক্ষমা করবে?
এসব কেন তুমি আমাকে বলছ? তেমনটি ইচ্ছে থাকলে তোমার সাথে জড়ালাম কেন? সম্পর্কটা কাঁচের আয়না। একবার ভাঙলে জোড়া লাগে না।
অনিতা তুমি কি আমার সাথে সুখি হবে? আর ইউ হ্যাপি উইথ মি?
এখনই কেন এ প্রশ্ন?
না এমনি। আনিস লোকটির দিকে চায়। কদিনের না কামানো দাঁড়ি-গোঁফ। ভাঁজ ভেঙে যাওয়া কদিনের এলোমেলো পোষাক। ব্লু শার্ট ব্লাক প্যান্ট। আনিস জানে ব্লু শার্ট আর ব্ল্যাক প্যান্ট অনিতার পছন্দের।
ওরা খাবার শেষ করে বেরিয়ে আসে। আনিস ভাবে, কীভাবে একটা উষ্ণ বিকেল হঠাৎ শীতল হয়ে গেল। ওরা রেস্টুরেন্টের লনে এসে দেখে ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অনিতা থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলে, উহ! শীতের মধ্যে বৃষ্টি কী ভয়ানক। আনিস রেস্টুরেন্টের সিকিউরিটিকে একটা ট্যাক্সি আনতে বলে।
আনিস বার বার পেছন ফিরে চায়ছিল- সেই লোকটি তার মগজ থেকে এক মুহূর্তের জন্য সরছে না। আনিস ভাবে, তাদের অনুসরণ করে লোকটিও হয়ত ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে- অনিতার কাছে ক্ষমা চাইবে, কিন্তু লোকটি আর আসে না। আনিস লোকটির সিচুয়েশনে পড়লে কী করত? সেও কি অনিতাকে এক পলক দেখার জন্য এভাবে হোটেলে এসে বসে থাকত? সে কি অনিতার কাছে ক্ষমা চাইত? সে এসব প্রশ্নের কোনো কূল-কিনারা করতে পারে না। ট্যাক্সি চলে এলে অনিতাকে উঠে বসতে সাহায্য করে আনিস। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে মাথা উচিয়ে অনিতা বলে, এই বৃষ্টি গায়ে লাগিও না। জ্বরে পড়ে যাবে।
ওকে বাই। আনিস হাত তুলে বিদায় জানায়। হঠাৎ করে কী হল আনিসের? তার গাড়ির চাবিটা পকেট থেকে একবার বের করে আবার পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে। রেস্টুরেন্টের বেসমেন্টে তার গাড়ি রাখা আছে। সে নিজে ড্রাইভ করেই অনিতাকে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে পৌঁছে দেয়ার কথা। কিন্তু হঠাৎ যে তার কী হলো- ওকে ট্যাক্সি করে পাঠাল। সে কি সঙ্কীর্ণ মনের মানুষ? ঐ লোকটার প্রতি জেলাস- নাকি লোকটির মাঝে ঘটে চলা মানসিক পীড়নের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এখন চাইছে না সে। ভাল লাগছে না ওসব ভাবতে। সে একবার ভাবে, লোকটির সাথে ফিরে গিয়ে দেখা করবে কি না? কেন আপনাদের মাঝে ব্রেকাপ হলো? অনিতার কি আরো কারো সাথে প্রেম ছিল- আমি আপনি ছাড়া…? না এসব জিজ্ঞেস করা অভদ্রতা।আনিস নিজেও তো কত মেয়ের সাথে প্রেম করেছে, ডেটিং করেছে…এমন কি…। তারপরও এমনটা ফিল হচ্ছে কেন তার?

আনিস গাড়ি না নিয়েই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে বৃষ্টির মধ্যে হাঁটতে শুরু করে। বরফের মত হিম বৃষ্টিরজল। গাছের পাতায় বৃষ্টির ছোপ ছোপ শব্দে তার কানে অনিতার শেষ কথাটা বেজে ওঠে, এই বৃষ্টি গায়ে লাগিও না…আনিস শুধু হাসে। প্রেমিকার সামান্য অবাধ্য হওয়াটা উপভোগ করছে সে।শিশিরের মত ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি জমেছে ওর কপালে, চোখের পাপড়িতে- কোণায় কোণায়। সে হাঁটতে থাকে বাড়ির পথে। যতক্ষণ ভাল লাগবে সে হাঁটবে। তারপর ট্যাকসি, রিক্সা একটা কিছু নিয়ে বাড়ি ফিরবে।
বৃষ্টিতে একা একা হাঁটার মাঝে কত যে আনন্দ আজকের আগে আনিস সেটা অনুভব করেনি। আরো অনেকটা পথ সে একা হাঁটতে চায়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 SwadeshNews24
Site Customized By NewsTech.Com