সিদ্ধিরগঞ্জে পারুল (২৫) নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন গৃহবধূ ২৩০ কেভি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের টাওয়ারের শীর্ষে উঠে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। গতকাল বিকাল ৪টায় সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে সিদ্ধিরগঞ্জ-মানিকনগর ২৩০ কেভি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের ৮নং টাওয়ারে সে উঠে পড়ে। ভূমি থেকে ওই টাওয়ারে উচ্চতা ২৩৩ ফুট। পরে দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা মইয়ের সাহায্যে সন্ধ্যা ৬টায় তাকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। তাকে নামিয়ে আনার সময় বিকাল পৌনে ৬টায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ করে দেয়া হয়। পারুলকে নামিয়ে আনার পর সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে পুনরায় বিদ্যুৎ চালু করা হয়। এ সময় তাকে দেখতে ঘটনাস্থলে ভিড় করে শত শত মানুষ। গৃহবধূ পারুল রাজশাহী জেলার বানেশ্বর গ্রামের পুটিয়া থানার ইয়াদ উদ্দিনের স্ত্রী। টাওয়ারে উঠার সময় ঘটনাস্থলে পারুলের স্বামী, শাশুড়ি ও তিন বছরের ছেলে আজিজুল হক উপস্থিত ছিল। তবে ঘটনার পর পারুলের স্বামী ইয়াদ উদ্দিন পালিয়ে যায়। উদ্ধারের শেষ পর্যায়ে পারুলকে নামিয়ে আনার সময় সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার জ্ঞান ফিরে আসে। হাসপাতালে তার সঙ্গে শাশুড়ি সাজেদা ও ছেলে আজিজুল রয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় রেন্ট-এ-কার স্ট্যান্ডে জাতীয় সঞ্চালন লাইনের ২৩০ কেভি (কিলো ভোল্ট) বৈদ্যুতিক লাইনের ২৩৩ ফুট উঁচু টাওয়ারের শীর্ষে ১৮০ ফুটেরও বেশি উঠে পড়েন পারুল। তাকে এত উঁচুতে দেখে শত শত উৎসুক মানুষ ভিড় জমায় টাওয়ারের নিচে। খবর দেয়া হয় পুলিশকে। কিছুক্ষণের মধ্যে ছুটে আসেন বিদ্যুৎ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু ২৩০ ফুট উঁচু টাওয়ারে ওঠার মতো কোনো মই সেখানকার বিদ্যুৎ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের কাছে না থাকায় তারা পারুলকে নামাতে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে খবর দেয়া হয় ঢাকায়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সিদ্দিকবাজার ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ দল এসে ১৫০ ফুট উঁচু মই ব্যবহার করে উদ্ধার কাজ শুরু করে। বিকাল ৬টার দিকে মইয়ের সাহায্যে কোমরে বেল্ট বেঁধে পারুলকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারকর্মীরা নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। উদ্ধারের শেষ পর্যায়ে পারুল জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পারুলের শাশুড়ি সাজেদা জানান, পারুল মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী। এক মাস আগে তারা পারুলের চিকিৎসা ও কাজের উদ্দেশ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ আসেন। ভালো কাজ না পেয়ে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে চিটাগাং রোডে আসে। সেখানে এসে জানতে পারে রাতের আগে রাজশাহীতে যাওয়ার কোনো গাড়ি নেই। এরপর তারা রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। সেখানেই পারুল অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় পারুলের স্বামী ইয়াদ পানি আনতে যায়। একপর্যায়ে পারুল ওই টাওয়ারে উঠে পড়ে। এ ঘটনার পর ইয়াদকে তিনি আর দেখতে পাননি। হাসপাতালে চিকিৎসক নিলুফার ইয়াসমিন জানান, পারুল মানসিক রোগী। বর্তমানে সে ভালো আছে। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের স্টেশন অফিসার ইব্রাহিম আহমেদ জানান, উদ্ধার হওয়া নারীর বয়স ২৪-২৫ হবে। সে মানসিক ভারসাম্যহীন। বিদ্যুতের মূল লাইন দূরে। সেটা স্পর্শ করতে না পারায় তার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে যথাসময়ে তাকে উদ্ধার করা না গেলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারতো। তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।