মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সঠিক সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রলীগ ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশন। গতকাল সকালে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে বনানী মাঠ থেকে রওনা দিলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে সেখানেই তারা একটি পথসভা করে। সভা থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার বিভিন্ন সময় বিতর্কিত বক্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনি ব্যবস্থা ও জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল ১০টায় সুচিন্তা ফাউন্ডেশন, মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সন্তান, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগসহ আরও কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বনানী মাঠে জড়ো হন। পরে তারা সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে খালেদা জিয়ার বাড়ির উদ্দেশে যেতে চাইলে তাদের মাঠের পাশের মেজর জেনারেল (অব.) মইনুল হোসেন চৌধুরী বীর বিক্রম সড়কে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে দেয় পুলিশ। এরপর তারা সেখানেই বসে পড়েন। পুলিশের ঘেরাওয়ের কারণে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সেখানে পথসভা করেন। পথসভায় সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘বাংলাদেশে যে অপরাজনীতি শুরু হয়েছে তার প্রধান নেত্রী খালেদা জিয়া। দেশের সকল সমস্যার মূলে আছেন ওই অপরাজনীতির নেত্রী। তাকে উৎখাত করলে সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বিভিন্ন সময় দাবি করে মুক্তিযুদ্ধে এতো লোক মরেনি। ওই আইএসআইকে খুশি করার জন্য খালেদা জিয়া স্বাধীনতার এত বছর পর শহীদদের সংখ্যা নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন। চট্টগ্রামে ১১৬টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। একটি কবর থেকে দেড় হাজার গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এসব তথ্য কী প্রমাণ করে না মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছে। তিনি সুশীল সমাজের সমালোচনা করে বলেন, সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তি আছেন, যারা নিরপেক্ষতার নামে বিভিন্ন সময় পাকিস্তানপন্থি অপরাজনীতিকে সমর্থন করে থাকেন। তাদের বলছি, ওই অপরাজনীতিকে আর সমর্থন না করে দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দল ও মতে অংশ নেন। মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘২০০১ সালে আইএসআইয়ের টাকায় খালেদা নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। এজন্য তার পক্ষে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অসম্ভবের কিছু নয়। যারা আজকে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা দুদিন পর বলবেন, মেডিকেল টেস্ট ছাড়া বীরঙ্গনা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে যারা শরণার্থী ছিলেন তাদের নতুনভাবে আবার পাসপোর্ট নবায়ন করতে হবে। তাদের পক্ষে এ কথা বলাও অসম্ভবের কিছু না। কারণ, যে নেত্রী পাকিস্তানি জানজুয়ার মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠাতে পারেন তার পক্ষে সবকিছুই বলা সম্ভব। ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে কেউ যেন মুক্তিযুদ্ধ, জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু ও শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে এজন্য মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকারে আইন প্রণয়ন করে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশারফের মেয়ে মেহজাবিন খালেদ বলেন, জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধী এবং খালেদা জিয়া পাকিস্তানিপন্থিদের নেত্রী কি না তার বিচারের ভার আমি জনগণের কাছে দিলাম। গুলশান জোনের পুলিশের ডিসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, গুলশান কূটনৈতিক পাড়া হওয়ার কারণে যেন কোনো রকমের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় এজন্য পুলিশ সতর্ক ছিল।