রেকর্ডের খেলা ক্রিকেট। নিরন্তর চলে রেকর্ড ভাঙা-গড়ার পালা। তবে রোববার আলো-আঁধারের মধ্যে ধর্মশালায় যে রাজসিক ভঙ্গিমায় অনন্য দুই রেকর্ড গড়লেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের রাজপুত্র তামিম ইকবাল তা অসাধারণ। কখনও কখনও তার সমালোচনা হয়েছে। রীতি মেনে সমালোচনার ক্ষেত্রেও সীমাও অতিক্রম করে গেছে বাঙালি। দাঁতে দাঁত চেপে তিনি সহ্য করে গেছেন। যখনই ব্যাট হাতে পেয়েছেন জবাব দিয়েছেন। ফিফটি বা সেঞ্চুরি করার পর কখনও কখনও শরীরী ভাষাতেও বুঝিয়ে দিয়েছেন মনের ক্ষোভ। রোববার ধর্মশালায় অসাধারণ সেঞ্চুরির পরও শরীরী ভাষায় কথা বলেছেন তিনি। বাঘের মতো লাফিয়ে ওঠার পর কৃতজ্ঞতার অঙ্গুলি উঠিয়েছেন ড্রেসিং রুমের দিকে। পরে জানা গেছে, কোচ হাথুরুসিংহকে লক্ষ্য করেই তার এ উদযাপন। গুরুকে যে কথা দিয়েছিলেন, বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করবেন। কথা রাখতে পেরে খুশি তামিম ইকবাল সে কথা না লিখলেও চলে।
ক্রিকেট নিয়তি আরেকটা মজার খেলাও হয়তো খেলেছে। তামিমের সেঞ্চুরির সময় উইকেটের অন্য পাশে ছিলেন সাকিব আল হাসান। তামিমের প্রিয় বন্ধু। একইসঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীও। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম কে এক হাজার রান করবেন তা নিয়ে জোর লড়াই ছিল দুই জনের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত তামিমের কাছে হেরে গেলেন সাকিব। কিন্তু যেভাবে তামিমকে বুকে টেনে নিলেন তাতে পরিষ্কার বুঝা যায়, প্রিয় বন্ধুর কাছে হেরে কত খুশি তিনি।
সাকিব-তামিম এমনিতেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের আলাদা ব্র্যান্ড। কখনও তাদের আমরা ভুল বুঝেছি। হয়তো স্টার দেখার অভিজ্ঞতা না থাকার কারণেই আমাদের এ ভুল। হয়তো বা তাদেরও কিছু ভুল ছিল। সবকিছু পেরিয়ে তামিম-সাকিব নিজেদের নিয়ে গেছেন আলাদা উচ্চতায়। বিশ্বসেরাদের খাতায় নিজেদের নাম লিখিয়েছেন তারা। এখন হয়তো অনেকেই ভেবে আশ্চার্য হবেনÑ তিন ধরনের ক্রিকেটেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের নাম তামিম ইকবাল। আর সাকিব তো বেশির ভাগ ক্রিকেট বোদ্ধার বিবেচনাতেই সমকালের সেরা অলরাউন্ডার।
গণমাধ্যমের ইতিহাসই আসলে বদলে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সাংবাদিকরা গণমাধ্যমে অনেক কিছুই লিখতে বা প্রচার করতে পারেন না। বিবেচনায় নিতে হয় নানা বিষয়। আমজনতার অতো সময় নেই। তাদের হাত বাঁধা নেই, তাদের চোখ খোলা। তারা মুক্ত করেন সত্যের ভা-ার। যেমন রোববার ধর্মশালায় তামিম ইকবালের অতিমানবীয় ইনিংসটি দেখার পর ফেসবুকে অনেকেই মজা করে লিখেছেন, এখন আইসিসি বলতে পারে তামিমের ব্যাটিং অ্যাকশনে ত্রুটি রয়েছে। বলাই বাহুল্য, তাসকিন ও সানির বোলিং নিয়ে আইসিসির দুই আম্পায়ারের প্রশ্ন উত্থানের বিরুদ্ধে এ এক প্রতিবাদ।
গণমাধ্যমে অনেক কিছু লেখা যায় না, আবার অনেক কিছু লেখা যায়ও। যেমন এটা আপনি নিশ্চিত করেই বলতে পারেন, কাল তামিম এমন দুটি রেকর্ড গড়েছেন যা বাংলাদেশের কেউ কোনদিন ভাঙতে পারবেন না। বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে হয়তো অনেকেই সেঞ্চুরি করবেন। কিন্তু প্রথম সেঞ্চুরিটি তামিমের এ ইতিহাস কেউ মুছে দিতে পারবেন না। যেমন মুছা যাবে না তার প্রথম হাজার রানের রেকর্ডও।
প্রথম চাঁদে পা রাখা নীল আর্মস্ট্রংয়ের কথা নিশ্চয়ই পাঠকদের মনে আছে। ৪৫ বছর আগে চাঁদে প্রথম পা রাখার অনুভূতি প্রসঙ্গে বহুপরে এক সাক্ষাৎকারে আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, পৃথিবীতে ফিরে আসার ব্যাপারে ৯০ ভাগ আশাবাদ আমার ছিল। কিন্তু চাঁদে প্রথমবার অবতরণের সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি ধরে নিয়েছিলাম।
চন্দ্র বিজয়ের সঙ্গে একটি দেশের হয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কখনও তুলনা হয় না। তবে আর্মস্ট্রংয়ের রেকর্ড যেমন অক্ষয়, তামিমের রেকর্ডও তাই। অভিবাদন তামিম ইকবাল।