সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর: তনুকে আর লেখাপড়া করতে হবে না। তার স্বপ্ন ছিল শিক্ষকতা করার। কোনোদিন তার স্বপ্ন আর পূরণ হবে না। আমার আদরের বোনটাকে ওরা মেরে ফেলেছে। ছোট বোন সোহাগী জাহান তনুকে হারিয়ে নির্বাক বড় ভাই নাজমুল হোসেন এভাবেই বলছিলেন একটি পরিবারের স্বপ্নভঙ্গের কথা। এদিকে, ঘটনার আট দিন পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারীদের এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঘটনার আগে রহস্যজনক দু’টি কল এসেছিল তার ফোনে। সেই কলের সূত্র ধরেই এগুচ্ছে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সন্দেহভাজন এক তরুণকে দেখা যাচ্ছে না। আশপাশের লোকজনও জানেন না তিনি কোথায়। নিহতের স্বজন ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্রমতে, ঘটনার দিন নিজ বাসা থেকে ২শ’ গজ দক্ষিণে সার্জেন্ট জাহিদের সন্তানকে প্রাইভেট পড়াতে যান তনু। ওই বাসা থেকে ফেরার পর আর নিজেদের বাসায় ফেরা হয়নি তার। সার্জেন্ট জাহিদের স্ত্রীর বরাত দিয়ে তনুর মেজো ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেল জানিয়েছেন, ওই বাসা থেকে সন্ধ্যা ৭টায় বেরিয়ে যান তনু। তারপর থেকেই নিখোঁজ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত দু’টি ফোন নম্বরে কথা বলেছেন তনু। শেষ নম্বরের কল পেয়েই তিনি সার্জেন্ট জাহিদের বাসা থেকে বের হন। ওই ফোন নম্বরের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের কোনো যোগসূত্র আছে কি-না তা তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা।
সোহাগী জাহান তনুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ঘুমিয়েছিলেন তিনি। আগের দিন ১৯শে মার্চ থিয়েটারের সদস্যরা মিলে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে যান। ফিরেন রাতে। যে কারণে দীর্ঘসময় ঘুমান তিনি। ঘুম থেকে উঠেই প্রাইভেট পড়ানোর জন্য প্রস্তুত হন। গতকাল কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় কথা হয় তার স্বজনদের সঙ্গে। তারা জানান, প্রায় দেড়-দু’মাস আগে এক বান্ধবীকে তনু জানিয়েছিলেন এক যুবক তাকে উত্ত্যক্ত করে। প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে বারবার। সেই যুবকের নাম পিয়াল। ঘটনাস্থলের পাশে কালভার্টেই ছিল পিয়ালের আড্ডা। তনুর আসা-যওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করতো। ঘটনার পর থেকে পিয়ালকে দেখতে পাচ্ছেন না আশপাশের লোকজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তনুর বড়ভাই নাজমুল হোসেন জানান, তনুকে উত্ত্যক্ত করতো পিয়াল। ঘটনার পর থেকে তাকে দেখতে পাচ্ছি না। এছাড়া কয়েক বছর আগে থেকেই তনুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতো। কিন্তু তনু চাইতো লেখাপড়া শেষ করে বিয়ে করবেন। কয়েকটি প্রস্তাব আসার পর মেয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন বাবা ইয়ার হোসেন। বাবাকে তিনি বলেছিলেন, আব্বা আগে অনার্স শেষ করি। পরে বিয়ে। আমাকে লেখাপড়া শেষ করতে দিন।
তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। সেইসঙ্গে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি জানান, এ ঘটনায় সেনানিবাসের সিইও ও স্টেশন কমান্ডার তাদের সহযোতিা করছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কোনো চাপ দেয়া হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে নাজমুল কোন মন্তব্য করেননি। তিনি জানান, রোববারে তার মা-বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অতিথি কক্ষে ছিলেন। গতকাল থেকে তারা সেনানিবাসের বাসায় আছেন। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় সেখানে সবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারছেন না তারা।
নাজমুল হোসেন জানান, ২০১২ সাালে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে ঢাকায় যান তিনি। ওই সময়ে তার নিজের একটি টিউশনি ছোটবোন তনুকে দিয়ে যান। নিজ বাসায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কয়েক শিক্ষার্থীকে পড়াতেন তনু। সর্বশেষ তিনটি টিউশনি ছিল তার। সেনাপর্ষদ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন তনুদের টিনশেড কোয়ার্টারের পাশেই ওই তিনটি টিউশনি। ঘটনার দিন সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি শেষ করে বের হন তিনি। সেনানিবাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ, গান করতে গিয়েই সার্জেন্ট জাহিদসহ অন্যদের সঙ্গে পরিচয়। এভাবেই বিভিন্ন টিউশনি পান তনু।
সেনানিবাস নিয়ে গর্ব ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সারা দেশে যখন বিশৃঙ্খলা চলছিল। তখন দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে তিনি বন্ধুদের বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম ফুল প্রটেকটিভ’। সেনানিবাসে বড় হয়েছেন। ১৯ বছরের এই তরুণীর দীর্ঘ ১৮ বছরই কেটেছে এখানে। শেষ পর্যন্ত সেখানেই পাওয়া গেছে তার লাশ। কে তাকে হত্যা করেছে তা এখন শনাক্ত হয়নি। সংরক্ষিত এলাকায় সংঘটিত এ ঘটনা তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল দফায় দফায় বৈঠক করেছেন গোয়েন্দারা। সর্বশেষ বিকালে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তদন্তের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে আজ ডিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি’র পরিদর্শক একেএম মনজুর আহমদ জানান, সম্ভাব্য সকল ধরনের বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। নিহত তরুণীর ব্যক্তিগত বিষয়সহ সব বিষয়ই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনে তদন্তে গতি লাশ উত্তোলনের আদেশ
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা ও মুরাদনগর প্রতিনিধি জানান, সোহাগী জাহান (তনু) হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাগিদ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। যে বা যারাই জড়িত হোক তাদের কোনো ছাড়া দেয়া যাবে না। গতকাল কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাসিক সমন্বয় সভা চলাকালে জেলা পুলিশ সুপার মো. আবিদ হোসেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পুলিশ সুপার আবিদ হোসেন সভায় উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যদের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করে বলেছেন তনু হত্যাকাণ্ডে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। তনু হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনের পর ওই বৈঠক শেষে পুনরায় দফায় দফায় বৈঠক করেন পুলিশের কর্মকর্তারা। তনু হত্যা মামলার তদন্তের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তারা। এদিকে, তনু হত্যাকাণ্ডের গত ৮ দিন পর মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, সুরতহাল তৈরি ও পুনঃময়নাতদন্ত করতে কবর থেকে লাশ উত্তোলনের আদেশ দিয়েছেন কুমিল্লার একটি আদালত। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি এ কে এম মনজুর আলমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিকালে কুমিল্লার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম জয়নাব বেগম তনুর লাশ কবর থেকে উত্তোলনের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কুমিল্লার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে এ আদেশ দেন। কিন্তু প্রাথমিক সুরতহাল ও লাশের ময়নাতদন্তে কিছু অসঙ্গতি থাকায় মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের পর গতকাল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি এ কে এম মনজুর আলম কুমিল্লার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ভিকটিম সোহাগী জাহান তনুর মৃতদেহে আসামি কর্তৃক সৃষ্ট জখম শনাক্ত, মৃতদেহ থেকে ডিএনএ নমুনা-আলামত সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা, সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতসহ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কবর থেকে পুনরায় লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে এ আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কবর থেকে তনুর লাশ উত্তোলনের অনুমতি দেন। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের সময় তনুর পরিধেয় বস্ত্র ছাড়াও অন্যান্য সামগ্রী ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলে জানা গেছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি এ কে এম মনজুর আলম, মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, সুরতহাল তৈরি ও পুনঃময়নাতদন্ত করতে কবর থেকে লাশ উত্তোলনের আদেশ দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত। দুদিনের মধ্যে লাশ উত্তোলন করা হতে পারে।
এদিকে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তনু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। গতকাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কলেজ থিয়েটার বিক্ষোভ করেছে। এ সময় তারা অবিলম্বে তনু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, যারা মেধাবী ছাত্রীকে হত্যা করেছে আমরা তাদের ফাঁসি চাই। তনু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তারা। এ সময় বক্তব্য রাখেন থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনোয়ার হোসেন আলম, সভাপতি রাশিদুর ইসলাম রাশেদ, সাধারণ সম্পাদক ফারহানা আহমেদ, শেখ জামাল, শাহিন আফরোজ, নাজমুন নাহার প্রমুখ।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকালও তনু হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলন চলছেই। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-
মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, বিচার দাবিতে আন্দোলনের ঝড় চলছে তনুর জন্মস্থান কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। চাঞ্চল্যকর তনু হত্যার বিচার চাই? করতে হবে? আমার মেয়ে ধর্ষিতা কেন? জবাব চাই দিতে হবে? প্রশাসন নীরব কেন? জবাব দাও? দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে তনু রয়েছে। তনু মুরাদনগর উপজেলার মীর্জাপুর গ্রামের ইয়ার হোসেন ও আনোয়ারা বেগমের একমাত্র মেয়ে। তাদের কীভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসায় পাঠাবো? তাদের অভিভাবকরা আতঙ্কে থাকেন। তাদের কোনো নিরাপত্তা নেই? এসব স্লোগানে মুরাদনগর উপজেলার আকাশ-বাতাস ভরি হয়ে উঠেছে। সোহাগী জাহান তনু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে প্রতিদিনই মুরাদনগর উপজেলার স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সকালে মুরাদনগর উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা দ্রুত তনু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তনু হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মধ্য দিয়ে আর যেন কোনো ছাত্রছাত্রীকে এভাবে জীবন দিতে না হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানববন্ধন হয়েছে। সকালে জেলা ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে স্থানীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন হয়। জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আলী হোসাইন জিহাদের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন জেলা সিপিবির সভাপতি শাহরিয়ার মো. ফিরোজ, সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম, ন্যাপ ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম নাঈম প্রমুখ। বক্তারা তনু হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে তনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে জানান, তনু হত্যার বিচারের দাবিতে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রকল্যাণ পরিষদ মানববন্ধন করেছে। দুপুরে কলেজ গেটের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন পালিত হয়। এ সময় ইসতিয়াক আহমেদ শামীম, রফিক, শফিক, মিজানুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান, নোমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগগঞ্জ থেকে জানান, নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানিকগঞ্জে মানববন্ধন হয়েছে। দুপুরে মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাব চত্বরে বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক, সুজন, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম, জেলা কৃষক সমিতি, তারুণ্যের আলো যুব সংগঠন, সামাজিক সংগঠন হাসি এই মানববন্ধনে অংশ নেয়।
স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, তনু হত্যার প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে শ্রীনগর ডিগ্রি কলেজসংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টায় শ্রীনগর-ভাগ্যকুল সড়কে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। শ্রীনগর সরকারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের আয়োজনে এ সময় আমিনুল ইসলাম, জয় সরকার, অন্তর হোসেন, কৃষ্ণ দাস, রাজীব পালসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিলেন।
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, তনুকে পাষবিক নির্যাতন শেষে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। মুখে কালো কাপড় বেঁধে ও হাতে বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড নিয়ে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিতে অংশ নেন।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, তনুকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সকালে ঠাকুরগাঁও চৌরাস্তায় এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলা শাখা। মানববন্ধনে বক্তব্যে বলা হয়, আমরা এ হত্যসহ সব হত্যার বিচার দ্রুত দেখতে চাই। সমাজ থেকে এসব কলঙ্ক দূর হোক এটাই আমাদের কাম্য। মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে ঠাকুরগাঁও জেলার দুই শতাধিক জনগণ মানববন্ধনে অংশ নেন।
চাঁপাই নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, তনু হত্যার বিচারের দাবিতে চাঁপাই নবাবগঞ্জে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে চাঁপাই নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ চত্বরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানান, তনু হত্যার বিচারের দাবিতে একযোগে দল-মত-নির্বিশেষে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন নবীনগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র, ছাত্রী ও শিক্ষকরা। সকালে নবীনগর সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজ, পাইলট মডেল হাইস্কুল, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চার গ্রাম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণপুর ডিএস ফাজিল মাদনাসা একযোগে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে।
নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি জানান, একই দাবিতে নলছিটিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সকাল ১১টায় স্থানীয় মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখের সড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা অবিলম্বে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।
কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, একই দাবিতে পিরোজপুরের কাউখালীতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টায় এসবি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে সারদা সুন্দরী রোডে প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষানুরাগী আবদুল লতিফ খসরুর উদ্যোগে এসবি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে এ কর্মসূচি পালন করে। বক্তারা অবিলম্বে কলেজছাত্রী তনু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা অংশ নেন।
ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, একই দাবিতে ধামরাইয়ের ইসলামপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। মানববন্ধনে আমরা সবাই তনুর ভাই তনুর খুনির ফাঁসি চাই- স্লোগানে প্রকম্পিত হয় রাজপথ।
চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ‘আমরা সবাই তনুর ভাই, তনু হত্যার বিচার চাই’ ও ‘সেনানিবাসে ছাত্রী মরে, সেনারা কী করে?’- এমন স্লোগান উচ্চারণ করে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সচেতন ছাত্রছাত্রী সমাজ। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী সবাই তনুর ধর্ষক ও ঘাতকদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁয়ে মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় মানববন্ধন করেছে হামদার্দ বিশ্ববিদ্যালয়, মেঘনা শিল্পনগরী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মেঘনা আইডিয়াল স্কুল ও মেঘনা এসআর স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীসহ সর্বস্তরের জনগণ। এ সময় বক্তারা তনু হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তারা।