ধর্ম একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান। ধর্ম হচ্ছে সুষ্ঠুভাবে সমাজ নিয়ন্ত্রণের মোক্ষম হাতিয়ার। যার মাঝে ধর্মীয় বিশ্বাস নেই, সে অনেকটা মানসিক বিকারগ্রস্ত রোগীর মতো জীবনযাপন করে। কারণ একজন মানুষের জীবনে যে অসীম চাহিদা ও ইচ্ছা থাকে, তার সবটুকু এই স্বল্প জীবনের মধ্যে পূরণ করা সম্ভব হয় না। এর ফলে সে হতাশায় ভুগতে থাকে। আর এই হতাশার প্রতিক্রিয়া সে নানা ধরনের সমাজবিরুদ্ধ কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করে।
অপরদিকে একজন ধর্মীয় বিশ্বাসবোধসম্পন্ন মানুষ, যে কি না পরকালে বিশ্বাসী হয়, তার অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সবকিছু যদিও এই স্বল্পস্থায়ী দুনিয়াতে পূরণ নাও হয়, তারপরেও সে আশার মাঝে থেকে একধরনের নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে জীবনযাপন করে। কারণ সে বিশ্বাস করে তার জন্য আরেকটি দুনিয়া অপেক্ষা করছে, যেখানে তার অপূর্ণ ইচ্ছা ও চাহিদাগুলো পূরণ হবে। ফলে সে চিন্তা করে এখানে, অর্থাৎ এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতে তার সব আশা-আকাঙ্ক্ষার বস্তু না পেলেও চলবে।
ধর্মীয় বিশ্বাস ও অপরাধ
মানুষ সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, প্রত্যেকটি মানুষই একধরনের অপরাধসুলভ স্বভাব নিয়ে জন্মায়; অর্থাৎ জন্মগতভাবেই তার মধ্যে একধরনের অপরাধ করার প্রবণতা থাকে, ফলে সে সুযোগ পেলেই নিজেকে অপরাধের মধ্যে সম্পৃক্ত করে। আর যেটুকু সময় সে ভালো থাকে, অর্থাৎ অপরাধমুক্ত থাকে ওইটুকু সময় সে নিজকে সমাজে ভালো প্রমাণ করার জন্য একধরনের অভিনয় করে, নিজের অস্তিত্ব রক্ষার্থে আই মিন বেঁচে থাকার তাগিদে একধরনের ড্রামা করে। কিন্তু আমরা জানি একজন অভিনেতা সারাক্ষণ অভিনয় করেন না, অভিনয় করা সম্ভবও না আর বাস্তবসম্মতও নয়, তখন সে এই অপরাধ থেকে কীভাবে বাঁচবেন?
একটা বড় প্রশ্ন থেকে যায় কিন্তু…। খুব সহজ উত্তর, সর্বদা আল্লাহ্কে (সৃষ্টিকর্তাকে) স্মরণ করুন, আল্লাহ্র ভয় নিজের মাঝে রাখুন, সৃষ্টিকর্তা আপনাকে প্রত্যেকটি মুহূর্ত দেখছে, পরকালের পুরস্কারের আশা নিজের মাঝে গেঁথে ফেলুন, তখন আর আপনাকে ভালো থাকার জন্য এত অভিনয় করা লাগবে না, তখন মহাকাশে গিয়েও আপনি অপরাধ করার সাহস পাবেন না, কারণ একটাই, কেউ দেখুক বা না দেখুক সৃষ্টিকর্তা দেখছে।
অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, যখন একজন মানুষের দ্বারা যখন কোনো অপরাধ সংঘটিত হয় তখন তার মাঝে ওই সংঘটিত অপরাধের জন্য আইনের মাধ্যমে যে শাস্তির বিধান আছে, তা আর কাজ করে না অথবা মানুষের তৈরি আইন ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে যেকোনো মুহূর্তে পরিবর্তন করা যায়, ফলে চাইলেই রায় তার পক্ষে নিয়ে যেতে পারে অথবা সে চিন্তা করে কীভাবে অপরাধটি করলে আইনের চোখ ফাঁকি দেওয়া যাবে অথবা সে অপরাধটি করার পর ঘুষ দিয়ে কিংবা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পার পাওয়ার চিন্তা করে কিন্তু তখন যদি তার মাঝে মৃত্যুর ভয় কিংবা পরকালের কঠিন শাস্তির ভয় থাকে অথবা সৃষ্টিকর্তার ভয় থাকে, তাহলে সে অপরাধ করবে না, কারণ এই ভয় তাকে সর্বদা তাড়িয়ে বেড়ায়, কারণ তার প্রতিটি অপরাধের জন্য আল্লাহ্র কাছে জবাবদিহি করতে হবে, যা মনুষ্যসৃষ্ট কোনো ভয়ের মাধ্যমে সম্ভব নয়।
একজন অবিশ্বাসী মানুষ, যার চিন্তার ব্যাপ্তি হচ্ছে এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে কেন্দ্র করে, যার চাহিদা হচ্ছে এই পৃথিবীর ভোগের সামগ্রীগুলোই এবং দ্বিতীয় কোনো চান্স তার সামনে নেই, কারণ সে পরকালের জীবনকে অস্বীকার করে, ফলে সে যেকোনো মূল্যে এই পৃথিবীর জীবনকে উপভোগ্য করে তুলতে চাইবে বৈধ কিংবা অবৈধ—যেকোনো উপায়েই হোক না কেন। যেহেতু সে পরকালে সৃষ্টিকর্তার সম্মুখে দাঁড়ানোর ভয় নেই, আল্লাহ্র কাছে জবাবদিহিতার চিন্তা তার অন্তরে নেই, ফলে সে তার চাহিদা পূরণ করার জন্য যেকোনো অপরাধ করার জন্য প্রস্তুত থাকে, কারণ সে মনে করে, যদি কোনোরকমে এই অপরাধ থেকে মুক্ত হওয়া যায় তাহলে আর তার কোনো ভয় থাকবে না, কিন্তু একজন মুমিন বান্দা, যে বিশ্বাস করে যদিও বা কোনো অপরাধ করে এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতে পার পাওয়া যায় কিন্তু শেষ বিচারের দিন মহান বিচারক আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে, যেখানে এক যাররা (একটি ধূলিকণার ৭০ ভাগের এক ভাগকে বলা হয় এক যাররা) পরিমাণ অপরাধ করেও কেউ মাফ পাবে না। তাহলে এইবার আপনিই বিচার করুন কে সমাজের জন্য বিপজ্জনক—একজন ধার্মিক লোক নাকি একজন অবিশ্বাসী লোক?
আশা করি উত্তর পেয়ে গেছেন। আবার একজন ধার্মিক লোক বিশ্বাস করে, সে যদি এই দুনিয়াতে অপরাধ থেকে বেঁচে থাকতে পারে, তাহলে পরকালে তার জন্য অনেক পুরস্কার অপেক্ষা করছে, ফলে একজন ধার্মিক লোক পুরস্কারের আশায় হলেও সে অপরাধ থেকে বিরত থাকে কিন্তু একজন অধার্মিক মহাশয় কিসের আসায় নিজেকে অপরাধ থেকে নিবৃত্ত করবেন?
অবিশ্বাসীদের হাতে নারী নির্যাতনের সংখ্যা ধার্মিকদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি—সমকামিতা, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, আই মিন লিভ টুগেদার তো পান্তা ভাত! অথচ এই বিষয়ে মুমিনদেরকে আল্লাহ্ কঠিন থেকে কঠিনতর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, পরকালে ভয়াবহ আজাবের ব্যবস্থা রেখেছেন, ফলে মুমিনরা বরাবরই এই বিষয় থেকে দূরে থাকে, পক্ষান্তরে অবিশ্বাসীদের এই ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের ফলে সমাজের স্বাভাবিক ভারসাম্য চরমভাবে ব্যাহত হয়।
মানুষ যখন প্রতিদিন মসজিদে অর্থাৎ ধর্মীয় উপাসনালয়ে যায়, তখন সমাজের অন্যান্যদের সঙ্গে দেখা হয়, এতে করে নিজেদের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়, যার ফলশ্রুতিতে সমাজের অন্যান্য মানুষদের প্রতিও দায়িত্ববোধ তৈরি হয়, যার দরুন অপরের ক্ষতি থেকে বিরত থাকে। এভাবে যুক্তি-তর্কের মধ্য দিয়েই আমাদের সমাজটা এগিয়ে যাবে বলে আশা রাখি।