আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন নব্য জামাত’তুল মাজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) শীর্ষ জঙ্গীদের দমনে ২০১৬ সালে সাফল্য উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বাসসকে বলেন, এবছর গোড়ার দিকে আমরা জঙ্গীবাদের উত্থান দেখতে পাই এবং যা বছরের মাঝামাঝি এসে হলি আর্টিসান রেসোরাঁয় হামলা হয়। কিন্তু, হলি আর্টিসানে জঙ্গী হামলার পর দৃশ্যপট সম্পূর্ণভাবে বদলাতে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এরপর একে একে জঙ্গী দমনে বিভিন্ন স্থানে এবং সর্বশেষ আশকোনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালায়। নব্য জেএমবির বিরুদ্ধে অভিযানের সাফল্যের ফলে অনেক সক্রিয় জঙ্গী সংগঠনও ধরা পড়েছে এবং অভিযানে শীর্ষ কয়েক জঙ্গীসহ ৩৫ জঙ্গী নিহত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৬ কে আমরা জঙ্গী দমনের বছর হিসেবে উল্লেখ করতে পারি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিএমপি) মনিরুল ইসলাম বাসসকে বলেন, শীর্ষ জঙ্গীরা ধরা পড়ায় এবং কয়েকজন নিহত হওয়ায় আমরা নব্য জেএমবি-র বিস্তারোধ করতে পেরেছি।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সনেশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান ইসলাম বলেন, শীর্ষ অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে, কেউ আমৃত্যু কারাদন্ড বা বিভিন্ন মেয়াদে দন্ড দেওয়া হয়েছে।র্যাব জানায়, এ বছর বিভিন্ন অভিযানে ৪০ জেএমবি সদস্য নিহত, কয়েকজন আত্মসমর্পন ও কয়েকজন ধরা পড়েছে। অপরদিকে বিভিন্ন মামলায় জেএমবি-র ৬৪ কর্মীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে এবং ১ শ ৫৪ জনকে আমৃত্যু কারাদন্ড এবং ২শ ৪২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জেএমবির ১৭ শ ৯২ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে, ২ হাজার ৪৩ জন চার্জশিটভুক্ত আসামী রয়েছে।মাওলানা শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড-ইন-কমান্ড সিদ্দীকুল ইসলাম বাংলাভাই, মিলিটারি কমান্ডার আতাউর রহমান সানি, অন্যতম প্রধান আবদুল আওয়াল, মজলিশ-ই-সুরা সদস্য খালিদ সাইফুল্লা এবং সালাউদ্দিনের মৃত্যুদন্ডের পর জেএমবি এখন ব্যাপকভাবে পিছু হটেছে।২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশজুড়ে বোমা হামলার পর মোট ১৬১ টি মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে ৬৬০জন জেএমবি সদস্য। এর মধ্যে ১শ ৩ টি মামলা নিষ্পত্তি এবং ৫৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে র্যাবের মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার মুফতি মোহাম্মদ বাসসকে জানান।
মামলায় জেএমবি-র ১৫ সদস্যকে মৃত্যুদন্ড, আমৃত্যু কারাদন্ড ১১৮ জন, বিভিন্ন মেয়াদে ১১৬ জন এবং ১১৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।দেশব্যাপি বোমা হামলায় জেএমবি-র প্রধান মাওলানা শায়খ আবদুর রহমান, হারকাতুল জিহাদ আল ইসলাম, বাংলাদেশ অপারেশনাল চিফ মাওলানা আবদুল হান্নানকেও মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে।গত ১ জুলাই হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় উদ্ধার অভিযানে পাঁচ জেএমবি সদস্য নিহত হয়। গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দেশজুড়ে অভিযান চালায়। এছাড়া ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বড় অভিযানে ৯ জেএমবি সদস্য নিহত হয়।নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় ২৭ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরীসহ জেএমবির তিন সদস্য নিহত হয়। এছাড়া দক্ষিণকানের আশকোনায় ২৪ ডিসেম্বর পুলিশের অভিযানে দুই জেএমবি সদস্য নিহত হয়।এছাড়া গুলশান হামলার প্রশিক্ষক ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলাকারী মেজর (অব.) জাহিদের স্ত্রী ও নব্য জেএমবি নেতা মইন মুসার স্ত্রী দুই সন্তানসহ আত্মসমর্পন করে।
এছাড়া গত ২১ জুলাই জেএমবির দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান মো. মাহমুদুল হাসান ওরফে তানভিরকে চার জেএমবি সদস্যসহ গ্রেপ্তার করা হয়।গত ২৪ আগস্ট জেএমবির অপর শীর্ষ নারী নেতা আকলিমা রহমান ওরফে মনিকে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার সাইনবোর্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার রাজধানীসহ, গাজীপুর ও আশুলিয়া এলাকা এবং টাঙ্গাইল জেলায় র্যাব-পুলিশের অভিযানে জেএমবির ঢাকা বিভাগীয় অপারেশনাল কমান্ডার ফরিদুল ইসলাম ওরফে ইলিয়াসসহ ১২ সদস্য নিহত হয়। পুলিশ জানায়, গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলার পর হামলার মূল হোতা তামিম আহমেদ চৌধুরী গত আগস্টে নারায়ণগঞ্জে এক অভিযানে নিহত হয়। তামিম নব্য জেএমবি-র সমন্বয়ক ছিল।