মৃত শিশুকে জিম্মির অভিযোগ, ৮ জনকে জরিমানা

Jahangir1_BG20160425200940ঢাকা: মৃত শিশুকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর পদ্মা জেনারেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

সোমবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ২৯০, সোনারগাঁও রোডের ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে শিশুর স্বজনরা এ অভিযোগ করেন।

মৃত শিশুর নাম জান্নাতুল নাঈমা নিলুফা (০৯)। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার মুজিবুর রহমানের মেয়ে। মুজিবুর রহমান দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থেকেছেন। বর্তমানে পেশাগত হিসেবে তিনি কিছু করেন না।

র্যা ব-২ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত সোমবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে এলে তারা হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম ও মৃত শিশুকে আইসিইউতে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পান।

এসব অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. দেলোয়ার হোসেনসহ মোট ৮ জনকে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।Jahangir2_BG20160425201454

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পদ্মা জেনারেল হাসপাতালের মালিক অংশীদার মো. দেলোয়ার হোসেন (৫৪), মো. সিরাজুল ইসলাম (৪০), মো. বাহাদুর (৩৫), ডা. সাকিব আল নাহিয়ান (২৭), সঞ্চিতা বিশ্বাস রিয়া (৩৬), নিরালা খাতুন (৪৫), শাহ আলম (২০) ও আবু সালেহ রিপন (৩১)।

র্যাব-২ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন অনিয়ম প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে র্যাব-২ জনস্বাস্থ্য অধিদফতর এবং ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সঙ্গে যৌথভাবে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করছে।

এর ধারাবাহিকতায় সোমবার পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে হাসপাতালটির বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে। আরও একটি বিষয় আমাদের চোখে পড়ে যে, হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) একজন শিশু মারা গেছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এরপরও ওই পরিবারকে কিছুই জানায়নি। শিশুটির অবস্থা ছিলো ক্রিটিক্যাল। এ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও নার্স ছিলেন না। মূলত অবহেলার কারণেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।

র্যাব-২ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দীন বলেন, পদ্মা জেনারেল হাসপাতালের কোনো পেডিয়াট্রিক (শিশু) ডাক্তার ছিলো না। এখানে অনুমোদিত বেডের সংখ্যা ২১টি থাকার কথা। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, এখানে মোট ১২২টি বেড রয়েছে। সেখানে ওই তুলনায় ডাক্তার ও নার্স নেই। একটি ব্ল্যাড ব্যাংক আছে, কিন্তু লাইসেন্স নেই। হাসপাতালটির মালিকানা পরিবর্তনের কোনো কাগজপত্রও নেই।

জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. মনজুর আহমেদ বলেন, অভিযানে হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম পাই। পুরো হাসপাতাল ঘুরে দেখার সময় আইসিউতে গিয়ে দেখতে পাই, একটি শিশু নির্জীব অবস্থায় পরে আছে। প্রাথমিক পরীক্ষা করে আমরা দেখি, শিশুটি মারা গেছে। পরে জানতে পারি যে, মারা যাওয়ার পরও তার পরিবারকে বিষয়টি জানায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মৃত নিলুফার বাবা মুজিবুর রহমান জানান, মুখ দিয়ে ফেনা বের হওয়ায় রোববার সন্ধ্যায় এ হাসপাতালে ভর্তি করেন মেয়েকে। কিন্তু ভর্তির পর কোনো স্বজনকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

‘এমনকি মেয়ের কী অবস্থা তাও জানানো হয়নি। সকালে এখানে র্যাবের কর্মকর্তারা এলে তাদের বিষয়টি জানানো হয়। তাদের কাছে মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি জানান হাসপাতালের লোকজন’।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ হাজার টাকা ভাড়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পদ্মা জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়মের কথা স্বীকার করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, কিছু অনিয়ম আছে। আমাদের হাসপাতালের জনবলও কম রয়েছে। কিন্তু শিশুর মৃত্যুর বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি সঠিক নয়। কারণ, র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রমাণ করতে পারেননি।

দুপুরে আমরা অফিসের কাজেই অনেকটা ব্যস্ত ছিলাম। তাই এ বিষয়টি ঠিকমতো আমরা আমলে নিতে পারিনি বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *