সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর, স্বদেশ নিউজ২৪: আমার কাছে সকল প্রকার দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসা আছে কিন্তু একত্বতার ঝাকিটা কম । আমি হলফ করে বলতে পারি এদেশে আনুমানিক ৭৫% মানুষ দিবসের সাথে একত্বতা শিকার করলেও এর সামাজিকতা সাথে তাল মেলাতে পুরাপুরি ব্যার্থ । আমি যদি আমার সৃতীকে সচল করে দেখিতাইলে কয়েক টা বিষয় আমাকে খুব নাড়া দিয়ে যায় । ঘটনা নং:১ তখন আমার বয়স আনুমানিক ১৫-১৬ বছর বৈশাখের প্রথম দিন । আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসায় দেখি আম্মু পান্তা আর শুকনো মরিচ তেলদিয়ে ভেজে রেখেছেন সাথে আলুন ভর্তা আর ইলিশ । আমরা বড়লোক না হলেও আব্বু আমাদের বিশেষ দিন গুলোতে একটু বেশি খুশি রাখবার চেস্টা করতেন । যাই হোক তখনও খাইনি আমি হুট করেই পাশের বাড়ি থেকে কয়েক জনের চিল্লা- চিল্লির শব্দ । আমি দৌড়ে বাহিরে বের হয়ে দেখলাম আমার এক প্রতিবেশির ঘরের টিন একটার পর একটা খুলে নিচে ফেলে দেওয়া হচ্ছে । আর এটা করছে সমিতির লোকেরা । যার ঘরের টিন খুলছেন সে খুব অসহায় হয়ে তাকিয়ে আছে তাঁর চোখের পানি টলমল করছে দুইটা বাচ্চা একবার বাবার কাছে যাচ্ছে একবার মা এর পাশে দাঁড়িয়ে আচঁল ধরে দুচোখ এর নিচ দিয়ে অশ্রু ঝড়াচ্ছে । বাবা /মা না পারছে বাচ্চাদের কে সান্তনা দিতে না পারছে কোলে নিয়ে আদর করতে । একটা সময় আমি সহ গ্রামের কয়েকজন বড় ভাই মিলে তা হতে দিইনি । আর এসব কষ্টের কাহিনী দেখে কি আর পান্তা ইলিশকে সাধুবাদ জানাতে ইচ্ছে করে ?? করে না তখনও চিন্তে হয়েছিল আমার সত্যিই সমাজে এক শ্রেনীর মানুষ কতটা অসহায় । এদের কোন দিবস নেই । নেই কোন ক্ষমতার বাহাদুরি । এই সমাজ কবে যে পরিবর্তন হবে । আজকেও খবর নিয়েছি আম্মুকে ফোন করে বাসায় তবে এরকম কোন ঘটনা না ঘটলেও গ্রামের ৮০% মানুষ বৈশাখ কে গ্রহন করলেও ইলিশ কিনতে পারেনাই । আর পান্তা সে তো তাঁদের নিত্যদিনের আয়োজন । প্রায় প্রতিদিনিই পান্তা আর মরিচ মেখে লাল করে খায় আমার গ্রামের সোনার মানুষ গুলো ।এখন প্রশ্ন হল তাইলে এই বৈশাখ কাদের ?
ঘটনা নং:২ আমি তখন দশম শ্রেণীর বিদায়ি ছাত্র মানে ২০০৬ সালের কথা । আমি স্কুল হোস্টেলে থাকি । পহেলা বৈশাখে বরাবরের মত স্কুল থেকে একটা বিশাল রেলি আমরা বের করতাম । আর বরাবরের মতই আমি এই রেলিটার স্টুডেন্ট লিডারি করছি । এটা শুরু হত আমার স্কুল থেকে উপজেলা চত্তর পর্যন্ত । আমরা উপজেলা চত্তরে গিয়ে অনেক গুনীজনের এই দিনটি সম্পর্ক ২-৪ লাইন উপদেশ শুনতাম বা বক্তব্য শুনি । উপজেলা নিবার্হী অফিসার ,উপজেলা চেয়ারম্যান , সম্ভব হলে মাননীয় এমপি মহদয় থাকতেন তার বানী শেষে গুনী শিক্ষকরা কিছু বলতেন। কেউ তাদের কথা শুনত আবার কেউ আড্ডাবাজিতে মসগুল আবার একটা মহল প্রেম নিয়ে ব্যাস্ত আবার কেউ মারামারি মানে উপজেলার আশেপাশের ছেলেদের ক্ষমতার বাহাদুরি। তবে আমার সব দলের ছেলেদের সাথে পরিচয় ছিল । গুনীজনের উপদেশ বানীর পর একটা সাংকৃতিক প্রোগ্রাম হত উপজেলা চত্তরে আর এখানে প্রায় সক বিদ্যালয়েক গুটিকয়েক ছেলে –মেয়ে গান করতেন আমিও তাদের একজন। সেদিনও প্রোগ্রাম শেষ করে ছেলেমিয়েরা দলে দলে বাড়ি ফিরছে । আমারা বন্ধুরা সহ কয়েক জন একসাথে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি প্রথমে উপজেলা চেপাই মানে দুই বিল্ডিংএর মাঝের গলিতে দেখি স্কুল ড্রেস পড়া একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দুই মাথা এক করে চুমাচুমি করছে । হায় কপাল আমার বৈশাখ উজ্জাপন হচ্ছে তাও আবার স্কুল ড্রেস পড়ে যাই হক একটা ছোট আওয়াজ দিয়ে আমরা আমাদের মত চলে গেলাম ওরাও লজ্জাভরা চখ নিয়ে দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেল । এর পর বাজারে আসতেই একটা বড় ধরনেও গোলমাল কি হয়েছে ? দৌড়ে গিয়ে দেখি এক মাঝ বয়সই মানুষের সাটের কলার ধরে টানছেন ৩-৪জনের একটা দল। ওরা আমার অনেক আগে থেকেই চেনা আর বয়সে কয়েক বছরের বড় । এলাকার অনেকেই ওদের ভাংপাটি বলেই চেনে । আমাদের পুরো ব্যাপারটা আংকেলের মুখে শুনে খুব কষ্ট লেগেছিল মাথা হেট হয়েছিল ছি এটা কিআমাদের সমাজের ছেলেরা করতে পারে? ঘটনাটা এ রকম আংকেল তার মেয়েকে নিয়ে ছাইকেল চালিয়ে উপজেলা থেকে বাড়ি যাচ্ছে আর এই ভাংপাটিরা আংকেলের সাইকেলের পিছনের বসে থাকা মায়াবী মেয়েটাকে বাজে ভাবে টন করেছে । সাভাবিক কোন বাবাই তা মেনে দিতে পারে না । আমার বাবা তাঁদের বাবা আপনার বাবা কেউ কি পারবে এটা মেনে দিতে ? তাই মুরুব্বি প্রতিবাদ জানায় সাইকেল থামিয়ে আর এটা ওদের মাইন্ডে লেগেছিল বলে মুরুব্বির কলার ধরে টানাটানি করছে তাঁও আবার মেয়ের সামনে । কোন মেয়েটা এটা মেনে নিবে ? এটা কি আমাদের বৈশাখ উজ্জাপন ? তবে সেদিন এর শেষটা দেখেই বাড়ি ফিরেছিলাম আমরা । ভিষন মারামারি ভাংপাটির সাথে একটা সময় আমার হাতে রক্তের ছাপ দেখতে পেলাম । আর ওদের তুলনাই আমাদের শরিরের খতিটা অনেক কমই হয়েছিল । সেদিনের মারামারিটার রেশ অনেক দিন ধরে বহমান থাকলেও এর জয় নামক পাল্লার ভারটা আমদের দলেরই ছিল । আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি আল্লাহ পাক এসব অত্যাচারিদের কোন দিনই সহয্য করে না । সেদিনের বৈশাখের দিনটা কে আমি বা আমাদের ঘটনার সাথে যারা জরিত তারা কিভাবে নিয়েছিল ? একটা বাবা তার মেয়ের সামনে ,,,,,ছি ।সে মেয়ে আর বাবার জীবনের কাছে বৈশাখ ছুরে দিয়েছি এখনও সেই দিনটিকে ভুলতে পারিনা । আমরা কি এসব থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি আজও ? ঘটনা নং:৩ গতবছর ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাংলা নববর্ষের উৎসবের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে ভিড়ের মধ্যে একদল যুবক নারীদের ওপর অত্যাচার করল । শত শত মানুষের সামনে এমন বাজে একটা ঘটনা ঘটালো অথচ এর কোন বিচার আমরা পেলাম না । প্রথমে পুলিশ ঘটনাটি এড়াতে চাইলেও বিভিন্ন ছাত্র ও নাগরিক সংগঠনের দাবির মুখে এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলা এবং তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর ১৭ মে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও থেকে আট নিপীড়কের ছবি পাওয়ার যায় আর পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক তাদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেবে বলে ঘোষণা ছুরে দিলেন । পরে দুইজন সন্দেহ ভাজন ব্যাক্তিকে ধরে এর হদিস মেলেনি শুধু বিচার চলমান রয়েছে । কিন্তু এই চলমান বিচার এর শেষ কোথায় ? এক বৈশাখে শেষ হয় আর এক বৈশাখ শুরুহয় এভাবে চলতে থাকবে কিন্তু এর বিচার শেষ হবে বলে মনে হয় না।আমি মানুষ আমার কাছে আইন এর আগে বিবেক । যদি বিবেক বান মানুষ হতাম তাইলে সবার সামনে একটা মেয়েকে এভাবে উলঙ্গকরে যৌন হইরানি করতাম না ।একদল এটা করছে আর এক দল তা চেয়ে চেয়ে দেখছে ছি ,,,,,,,,এটা কি মোনুষের বিবেক? কি এমন অপরাধ ছিল সেই মেয়েটির ? আমারা সবায় সমাজে বাস করি মেয়ে বলতে আমরা মা/বোন/খালা/ফুফি কিংবা রক্তের যারা তাঁদের হয়ত বুঝি ।কিন্তু সমাজে আর সব মেয়েরা আমাদের কেউ না ? যদি এই সব মেয়েদের কে একটু পরিবারের কারো সাথে মিলিয়ে দেখি তাইলে আমার মনে হয় এমন ঘটনা আর ঘটবে না । আমরা ৭১-এ হানাদার দের নির্যাতন এর কথা কেউ শুনেছি আবার বেউ পড়েছি কিন্তু স্বাধীনতার পর এসব কেবা কারা করছে ? অনেকেই কথায় কথায় বলে আমাদের মেয়েরা উলটো-পাল্টা ঘোরাঘুকি করে । হুম এটা একটা মুল্যবান কথা । তাদের কিছু জাক-জমক তাক লাগানো পোশাক আর নিজেকে জাহির করার যে কৌশল তাতে হয়ত একটু শরীরে নাড়া দিতে বাধ্য তাই বলে এই নাযে আপনি রাস্তাতে এর ভোগ মিছিলের সৃষ্টি করবেন । আমাদের সমাজে পোশাকের তেমন কোন জরুলি আইন নেই কিন্তু ইপটিজিং এর আইন কিন্তু খুব কড়া । আমরা বিবেক এর দরজায় প্লিজ নাড়া দেই ।তাইলে বৈশাখে আর কাউকেই লাঙ্চনার শিকার হতে হবে না । কেননা যে মেয়েটিকে এমন করেছে সে হয়ত শাশ্তি পায়নি কিন্তু মেয়েটি কি আর তাঁর মনের সুন্দর শহরে আস্থানিয়ে চলতে পারছে । আমি সতভাগ শিউর হয়ে বলতে পারি আজকে রাতেও মেয়েটা বারবার ঘুম থেকে জেগে উঠে হু হু করে কেঁদেছে । তার বাবা/মা আত্বীয় স্বজন…. এই সমাজে বৈশাখ কি ভাবে শতশত বছর খরে থাকবে? থাকবে নামমাত্র কিন্তু এর সঠিক ইতিহাস দাঁড়ে দাঁড়ে কাঁদবে আর হাহাকার করবে ।তাই আসুন আমরা নিজেরা সবাই একটা সুন্দর বাংলাদেশ কে আরো আরো সুন্দর করতে সমাজে যারা সঠিক ক্ষমতাকে ব্যাবহার করছে তাঁদের সাহায্য করি । আমরা সবাই সরকারের সাথে একত্ততা শিকার করি যে কোন অপ্রতিকর ঘটনা যেখানেই ঘটুক না কেন আমরা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহায্য করি । আমার ভাবনার সাথে অনেকেই মিল খুজেপেয়েছেনে আবার যাদের চিন্তের সাথে অমিল হয়েছে প্লিজ আপনার একটা সুন্দর সমাজ গড়ার জন্য এগিয়ে আসুন ।আমাদের প্রতিদিনই অনেক অপ্রতিকর ঘটনার শিকার করতে হয় কিংবা দেখতে হয় বা পড়তে হয় । আর না হয় এসব না করি । কয়েদ দিনের বেঁচে থাকার অর্থটা যেন লাঙ্চনা আর বঙ্চনা না হয় ।