সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর, স্বদেশ নিউজ২৪:৮৫ থেকে ৭০ আমার জীবনে সবচেয়ে বড়ো পরিবর্তনটা এসেছিল যখন আমি মা হই। বাচ্চার জন্ম দেওয়ার সাথে সাথে শুধু মানসিক পরিবর্তন নয়, শারীরিক গঠনেও বিরাট একটা পরিবর্তন আসে। প্রেগনেন্সির সময়েই ওজনটা বেড়ে যায় ১৮ কেজি। পরবর্তীতে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজনে আমাকেও বেশি খাওয়া দাওয়া করতে হয়। যার ফলে এবং আমারই কিছু অসচেতনতার কারণে আমার শরীরের মোট ওজন বেড়ে যায় ৩০ কেজি। ফলশ্রুতিতে ৮৫ কেজি ওজনের একটা দানবীতে পরিণত হই আমি। শুরু হয়ে যায় বাড়তি ওজনের আনুষঙ্গিক রোগ-বালাই যেমন হাঁটুতে ব্যথা, ব্যাক পেইন, কোমর ব্যথা, ডিপ্রেশন ইত্যাদি। এভাবে যখন বাড়তি ওজনের কারণে আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলছিলাম, ঠিক তখনই ছোটো ভাই Mashroof Hossain তার কিছু ছবি ভাইবারে আমার কাছে পাঠায় এবং আমাকে জানায় যে, সে মাত্র দু’সপ্তাহে সাত কেজি ওজন কমিয়েছে। আমি পুরোপুরি অবাক হয়ে যাই। কারণ আমি যে ওজন কমানোর চেষ্টা একেবারেই করিনি তা না। কিন্তু দেখা গেছে যে, কোনোরকমে এক কেজি ওজন কমালে আবার দু’কেজি বেড়ে যায়। আমি মাশরুফকে জিজ্ঞেস করি, কিভাবে সে এত ওজন এত অল্প সময়ে কমাতে পারলো। সে আমাকে তার ওয়ার্কআউট এবং ডায়েট প্ল্যানটা জানায় এবং সেই সাথে এও বলে যে, কন্সিস্টেন্সি থাকলে এবং সিসটেমেটিক ওয়েতে চেষ্টা করলে অবশ্যই এভাবে ওজন কমানো সম্ভব। এরই মধ্যে আমার এক কলিগ এবং ছোটো বোন Arpi Sen Gupta কে আমার সঙ্গী হিসেবে পেয়ে যাই। সেও আমার মতোই বাচ্চা হওয়ার পরে অতিরিক্ত ওজন বা ওবেসিটির শিকার হয়। আমরা দুজনে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিই যে, আমরা সিস্টেমেটিক ওয়েতে ওজন কমানোর জন্যে একজন নিউট্রিশনিস্টের কাছে পরামর্শ নেবো। এভাবেই খোঁজ পেয়ে যাই ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান Aysha Siddika আপুর। যেহেতু আমার নানারকম শারীরিক সমস্যা ছিলো, আমি তাঁকে সবকিছুই খুলে বলি। তিনি আমার জন্য ডায়েট প্ল্যান রেডি করার আগে আমাকে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বলেন। সেগুলো করার পরে তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী এবং তাঁর দেওয়া ডায়েট চার্ট অনুযায়ী আমরা আমাদের ওজন কমানোর মিশন শুরু করি। সেই সাথে আয়েশা আপুর পরামর্শমতো হাঁটাহাঁটি এবং অন্যান্য ওয়ার্কআউটও আরম্ভ করি।আয়েশা আপু ভরসা দেন, আমি চেষ্টা করলে অবশ্যই ছয় মাসে ত্রিশ কেজি ওজন কমাতে পারবো। একমাস পরেই বুঝতে পারি পরিবর্তন। আমার ওজন পাঁচ কেজি এবং অর্পির ওজন সাত কেজি কমে যায় প্রথম মাসেই। এরপর আমরা দুজনে সিদ্ধান্ত নিই, আমরা প্রতিদিন ভোরে হাঁটতে যাবো। শুরু হয় হাঁটাহাঁটি। সকাল ৬.১৫ থেকে ৭.৩০ পর্যন্ত। সাথে আমার বাসার ফিক্সড সাইকেলে দিনে এক ঘন্টা সাইক্লিং। ফলাফল, পরবর্তী দু’মাসে আরো দশ কেজি ওজন কমে যাওয়া। smile emoticon গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত তিন মাসে আমার ওজন কমেছে ১৫ কেজি। ৮৫ থেকে ৭০ এ নেমেছি। আশা করি আগামি তিন মাসে আরো পনের কেজি কমিয়ে আমার জন্য আদর্শ ওজন ৫৫ কেজিতে চলে আসতে পারবো। মাশরুফ, তোর কাছে কৃতজ্ঞতা। আমার ওজন কমানোর মিশনে প্রথম ইন্সপিরেশনটা তোরই ছিল। তোর নো কার্ব, নো অয়েল, নো সুগার ডায়েট প্ল্যানটা অনেক কাজে লেগেছে দ্রুত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে। আয়েশা ম্যাম, আপনাকে যত বেশি ধন্যবাদ দিই না কেন, কম হয়। আপনি আমাকে সাহস দিয়েছেন, ভরসা দিয়েছেন, বার বার ফোন করে কতোই না বিরক্ত করেছি, অথচ আপনি এত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাকে সময় দিয়েছেন, বার বার ডায়েট প্ল্যান চেইঞ্জ করে দিয়েছেন আমার প্রয়োজনমতো। অর্পি, তোমাকেও ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা। “কাঁচপোকা যেমন তেলাপোকাকে টানিয়া লইয়া যায়”, ঠিক সেভাবে তুমি আমাকে নিউট্রিশনিস্টের কাছে আর ভোরবেলা ঘুম থেকে তুলে হাঁটতে নিয়ে না গেলে আমি জীবনেও শুকাতাম না। তবে আমার এই জার্নিতে যে নেপথ্য থেকে আমাকে মোটিভেট করেছে, আমার সকল জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করেছে, আমার ডায়েটের জন্য যখন যা দরকার কিনে দিয়েছে, এবং সর্বোপরি, ডায়েটিংজনিত ডিপ্রেশনের খাদ থেকে আক্ষরিক অর্থেই হাত ধরে টেনে তুলেছে, তার ফেসবুক একাউন্ট না থাকায় তাকে ট্যাগ করতে পারছি না। smile emoticon সে আমার একমেবাদ্বিতীয়ম অর্ধাঙ্গ, জনাব মোঃ মিজানুর রহমান। এই মানুষটাকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছোটো করতে চাই না। তার জন্যে এক পৃথিবী ভালোবাসা।