ইউরো কাপ শুরুর আগে শঙ্কা ছিল জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলা নিয়ে। তাদের রুখতে পুলিশি মহড়াও হয় ঘটা করে। কিন্তু ইউরোপের সবচেয়ে বড় এ ফুটবল আসর শুরুর দ্বিতীয় দিনেই তুমুল গণ্ডগোল দেখা গেল সমর্থকদের মধ্যে। পৃথিবীর দুই পরাশক্তির ফুটবল লড়াইয়ে হার-জিত না হলেও খানিকটা পিছিয়ে ইংলিশ সমর্থকরাই। ফ্রান্সের বন্দরনগরী মার্সেইর রাস্তা আরো দুদিন আগে থেকেই উত্তেজনায় ভরা ছিল। আর খেলার শেষ মুহূর্তে রাশিয়া সমতাসূচক গোল দিলে তাদের সমর্থকরা ইংলিশ সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে। মাঠের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে উল্লাস করতে থাকে তারা। এরপর মাঠ থেকে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে গণ্ডগোল। রাশিয়া ও ইংল্যান্ডের সমর্থকরা পরস্পরের প্রতি আক্রমণ করতে থাকে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হন বলে স্থানীয় পুলিশ জানায়। এ সময় দুই দেশ ছাড়াও ফ্রান্স, জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার অন্তত ১০ জনকে আটক করে পুলিশ। মার্সেইয়ের ভিয়েক্স-পোর্ট জেলার প্রায় ১২০০ পুলিশ সমর্থকদের থামাতে হিমশিম খায়। তারা কাঁদুনে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মার্সেইতে ইংলিশ সমর্থকদের সঙ্গে সেই ১৯৯৮ বিশ্বকাপের সময় তিউনিসিয়ার সমর্থকদের সঙ্গেও তুমুল হাঙ্গামা হয়েছিল। একজন সমর্থক খেলার সময় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, রাত ৯টা খেলা শুরুর জন্য সঠিক সময় নয়। ওই সময়ের মধ্যে প্রত্যেক সমর্থক বিয়ার পানে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে।
ইউয়েফা এই গণ্ডগোলের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ইউয়েফা মার্সেই ঘটনার কঠোর নিন্দা করে এবং যেসব মানুষ এরকম গণ্ডগোল করে ফুটবলে তাদের কোনো স্থান নেই। ইংল্যান্ডের ফুটবল এসোসিয়েশনও শনিবারের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংস্থার মুখপাত্র মার্ক হইটল ইংল্যান্ড সমর্থকদের ভদ্রজনোচিত আচরণের আহ্বান জানান। তিনি এফএ সমর্থকদের ভয়ানক আচরণে হতাশ এবং এর নিন্দা জানান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার- কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা বের করা এবং দ্রুত ও যথাযথভাবে এর একটা বিহিত করা।
ফরাসি পুলিশ এ ঘটনায় আরো উদ্বিগ্ন। বৃহস্পতিবার প্যারিসে বিপুল সংখ্যায় নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হবে বলে জানান তারা। ওইদিন জার্মানি আর পোল্যান্ড পরস্পরের মুখোমুখি হবে। এছাড়া তারা ইংল্যান্ড বনাম ওয়েলস ও ইউক্রেন বনাম পোল্যান্ড ম্যাচ নিয়েও কড়া সতর্ক আছে। এ হাঙ্গামা ২০১৮-তে রাশিয়ায় অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবলের পরিস্থিতি নিয়েও সংশয় সৃষ্টি করেছে।
শাস্তি হতে পারে রাশিয়ার
ইউরো কাপের খেলা শেষে সমর্থকদের তাণ্ডবের জেরে রাশিয়া ফুটবল ফেডারেশনকে খেসারত দিতে হতে পারে। শনিবার ফ্রান্সের মার্সেইতে ইউরো কাপের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা শেষে সমর্থকদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। খেলার শেষ মুহূর্তে রাশিয়া সমতাসূচক গোল করে। এর পরপরই রাশিয়ার গ্যালারিতে আতশবাজি শুরু হয়। তারা ইংলিশ সমর্থকদের ধাওয়া দিলে সংঘর্ষ বাধে। এরপর পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করে। ইউরোপিয়ান ফুটবল এসোসিয়েশন (ইউয়েফা) জানিয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে গোলযোগ শুরুর অভিযোগ আনা হবে। মঙ্গলবার সংস্থাটির শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ নিয়ে আলোচনা হবে। তবে জানা গেছে, তারা এ বিষয়ে ইংল্যান্ডকে কোনো দোষ দিচ্ছে না। একজন ইংরেজ সমর্থক জানায় প্রায় ১০০ জনের রাশিয়ান সমর্থক দল তাদের ওপর অতর্কিতে চড়াও হয়।
মৃত্যুর মুখে ইংলিশ সমর্থক
শনিবার রাতের হাঙ্গামার পর এক ইংলিশ সমর্থক এখন মৃত্যুর শঙ্কায়। তাকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার মাথায়ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই সমর্থককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওদিকে শনিবার রাতে ফুটবল সমর্থকদের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে নিস শহরেও। ভূমধ্যসাগরের উপকূলের ওই শহরে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সমর্থকদের সঙ্গে স্থানীয় যুবকদের গণ্ডগোল বাধে। পুলিশ জানায়, এতে অন্তত ৭ জন আহত হন, যাদের মধ্যে একজনের মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে।
ভার্ডির স্ত্রী কাঁদানে গ্যাসের কবলে
ইংল্যান্ডের সাড়া জাগানো স্ট্রাইকার জেমি ভার্ডির স্ত্রী শনিবার রাতে মার্সেইতে গণ্ডগোলের মধ্যে পড়েছিলেন। লেস্টারের এ তারকার স্ত্রী রেবেকা ভার্ডি তার টুইটারে লিখেন, তিনি রাশিয়ার বিপক্ষে খেলার সময় খাঁচায় বন্দী ছিলেন এবং গ্যাসের কবলে পড়েন। তিনি ওই পরিস্থিতিকে ভীতিকর বলে বর্ণনা করেন। কোনো কারণ ছাড়াই টিয়ারগ্যাস হজম করাকে তিনি অমানবিক এবং এরকম অভিজ্ঞতা তার এই প্রথম বলে জানান।