গ্যাসের অভাবে চালু হচ্ছে না প্রায় ১ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান। তবে গ্যাস সংযোগ পাওয়া সকল কারখানাতেই পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ রয়েছে। অর্থাৎ কোনো শিল্প কলকারখানাই গ্যাসের অভাবে বন্ধ নেই। গতকাল সংসদে প্রশ্নোত্তর-পর্বে এ তথ্য জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের এমপি একেএম শাহজাহান কামালের প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী জানান, শিল্প কলকারখানার উৎপাদনের চাকা সচল রাখাসহ নতুন নতুন কলকারখানা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমতুল্য এলএনজি আমদানির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা যায়, ২০১৮ সালের প্রথমদিকে এলএনজি আমদানি সম্ভব হবে। একই এমপি’র অপর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী জানান, গ্যাস সরবরাহ অপর্যাপ্ত থাকায় বর্তমানে নতুন কোনো সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে না। তবে বিদ্যমান সিএনজি স্টেশনগুলো এখনই বন্ধ করার বিষয়ে আপাতত সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। গ্যাস সংযোগ প্রসঙ্গে সরকারদলীয় এমপি দিদারুল আলমের প্রশ্নে নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমানে দেশে গ্যাসের মজুত, চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্যান্য খাতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত কমিটির মাধ্যমে শিল্পখাতে সীমিত হারে গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এছাড়া শিল্পখাতে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার ঘোষিত বিশেষ ইকোনমিক জোনে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
পাতাল বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা
দেশে পাতাল বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে এটা করা হবে সিলেটে। এ জন্য পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট আন্ডার সিলেট ডিভিশন নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। গতকাল প্রশ্নোত্তরে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ওই প্রকল্পের আওতায় শুধু সিলেট মহানগরীর উপশহর এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে পাতাল বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পটি গত ৩রা মে একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। এর প্রাক্কলিত বাজেট ১৮৯০ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ৩ বছর। বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পীর প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী জানান, ওই প্রকল্প সফল হলে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য স্থানেও পাতাল বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। নোয়াখালী-২ আসনের এমপি মোরশেদ আলমের প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে সরকারি খাতে ৫ হাজার ৬২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৬টি এবং বেসরকারি খাতে ৩ হাজার ৭৩৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ মোট ৯ হাজার ৩৬১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব কেন্দ্রসমূহ ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে বলে আশা করা যায়। একই বিষয়ে খুলনা-২ আসনের মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তাছাড়া, মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২০২১ সালের মধ্যে ১৯ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সকল অবিদ্যুতায়িত গ্রামগুলো পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছাতে আরো ১ লাখ ৫০ হাজার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণের মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। নসরুল হামিদ জানান, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৭২২ মেগাওয়াট বৃদ্ধি পেয়েছে।