বিশেষ প্রতিনিধি : পুলিশ দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত নড়াইল ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে “নড়াইল সদর থানার অধিনে সাব-থানা চালু” শিরোনামে বিডি খবর পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের ফলে পত্রিকাটির প্রকাশক ও সম্পাদক লিটন দত্ত এবং নির্বাহী সম্পাদক ও জিটিভি’র জেলা প্রতিনিধি মির্জা মাহমুদ রন্টুকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোসহ হত্যার হুমকি দিয়েছে সদর থানার দুই এসআই শেখর ও ভবতোষ। গত ১৮ জুলাই সোমবার প্রকাশ্যে দিবালোকে নড়াইল হাসপাতাল মার্কেটের সামনে এসআই শেখর বিডি খবর পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক লিটন দত্ত কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছিস, তোর এতো বড় সাহস। তুই পুলিশের বিরুদ্ধে লাগিস। আমি তোকে নাশকতা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে ঢোকাবো। তোকে গুলি করে মেরে ইনকাউন্টার বলে চালিয়ে দিবো। দেখি কে বাঁচায়। আমার নাম শেখর, তোর যা করার তুই করেছিস এবার দেখ আমি কি করি। সাথে থাকা আরেক এসআই ভবতোষ বলেন, আমি ওসি মতিয়ার না যে এইট পাশ বলে কিছুই করতে পারব না। আমি ঐ পত্রিকা আর চালাতে দিবো না। দেখি কি করে পত্রিকা চালাস।
এছাড়া ঐদিন রাত্রে শহরের রূপগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন মানুষের সামনে বিডি খবরের নির্বাহী সম্পাদক ও জিটিভি’র জেলা প্রতিনিধি মির্জা মাহমুদ রন্টুকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং দেখে নেওয়ারও হুমকি দেয়। কিন্তু এসময় মির্জা রন্টু উপস্থিত ছিলেন না।
এসআই ভবতোষ ও এসআই শেখরের অত্যাচারে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নড়াইলের সাধারণ মানুষ। অভিযোগ আছে নাশকতা ও জঙ্গী মামলায় গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। নাশকতা, জঙ্গীসহ বিভিন্ন মামলার প্রকৃত আসামীদের মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে গ্রেফতার না করে সাধারণ মানুষদের হয়রানি করছেন বলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
অভিযোগ রয়েছে এসআই শেখর দীর্ঘদিন সদর থানায় থাকার কারনে কাউকে তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন বলে। বিভিন্ন অপরাধীদের সাথে গড়ে উঠেছে তার সখ্যতা। তিনি ঐসব অপরাধীদের নিয়ে শহর এলাকার বাইবে বিভিন্ন চায়ের দোকানে বসে রাতের বেলায় ঘুষের টাকা ভাগ বাটোয়ারা করেন বলেও একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া সদর উপজেলার সনাতন বিশ্বাসের ৬০মন মুসুড়ি ও ৬০ মন পাট জব্দ করে সরকারের ঘরে রাখার নামে বিক্রয় করে দেয় এসআই শেখর। দুই পক্ষকে থানায় ডেকে মিমাংশা করে মুসুড়ি ফেরত দেবে বলে। মুসুড়ীর আবাদ করেও শেষ পর্যন্ত ভোগ করতে পারল না সনাতন বিশ্বাস। মুসুড়ি ফেরত চাইলে সনাতন বিশ্বাস কে এসআই শেখর বলেন, মুসুড়ির কথা না ভেবে নিজের জীবনের কথা ভাব। না হলে রাতে আধাঁরে ইন্ডিয়ায় পাচার করে দিবো।
এদিকে ঘুষ বানিজ্যে পিছিয়ে নেই এসআই ভবতোষ। বিভিন্ন মামলার বিষয়ে বাদী-বিবাদী দুই পক্ষের থেকেই ঘুষ বানিজ্যে চালিয়ে থাকেন তিনি। মামলা এন্ট্রি, আসামীদের ধরতে বাদী পক্ষের থেকে এবং প্রকৃত আসামীদের না ধরতে বিবাদী পক্ষের থেকে মোটা অংকের অর্থ নেন এসআই ভবতোষ।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলামের সাথে গত ১৮ জুলাই সোমবার যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন এর প্রতিকার আমি করবো। কিন্তু দুই দিন পার হলেও এ বিষয়ে তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি বলে জানা গেছে।
—————————————————————————–
যে সংবাদ প্রকাশের জন্য হুমকি
নড়াইলে সদর থানার অধিনে সাব-থানা চালু:
এ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শন্তু লাল ঘোষ
পুলিশ দূর্নীতিতে বিপর্যস্ত নড়াইল। পর্ব-০১
বিশেষ প্রতিবেদক : নড়াইল সদর থানার অধিনে সাব-থানা চালু করেছেন সদর থানার ওসি সুবাস বিশ্বাস। তিনি সাব থানা বসিয়ে ধুমছে ঘুষ দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। টাকা নিয়ে সম্পূর্ণ সত্যকে মিথ্যা আর ডাহা মিথ্যা অভিযোগকে সত্য বানানো, মামলা থেকে আসামীকে বাদ দেয়া নতুনভাবে মামলা ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকিসহ নানা ধরণের ভয়-ভীতি দেখিয়ে নড়াইলের বিভিন্ন এলাকার নিরিহ লোকজনকে নানাভাবে হয়রানির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির ওসি সুবাস বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। সুবাস বিশ্বাসের আশীর্বাদ পুষ্ট কয়েকজন দারোগা ওই সাব-থানা পরিচালনা করেন। জেলার আপামর জনতা এখন ওই সাব থানা চেনে। গ্রেফতার বাণিজ্য থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ মামলার দেন দরবার ওই থানাতেই হয়। সচেতন ও বিশেষ লোকজনদের নজর এড়াতে নড়াইল শহরের রূপগঞ্জ বাজরের বইঘর নামক লাইব্রেরিতে বসানো হয়েছে এ থানা। বইয়ের ব্যবসা বাদ দিয়ে দোকানি শন্তু ঘোষ সাব থানার ওসি’র দ্বায়িত্ব পালন করছেন। এই নিয়ন্ত্রকের অধিনেই চলে সব ধরনের কারবার। ওসি সুবাস বিশ্বাসের অত্যন্ত আস্থাভাজন এসআই কিশোর, এসআই শেখর, এসআই ভবতোষ সাব থানায় নিয়মিত বসেন। সেখানে বসে ঘুষ দুর্ণীতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেন। ভোর ৬ টা হতে রাত ১২ টা অবধি এ সাব থানা খোলা থাকে। রাত দিন চলে বিভিন্ন রকমের ছোট বড় মামলার দেন দরবার। অনেক দাগি আসামিকে দেখা যায় এই সাব থানায় বসে ওইসব পুলিশ অফিসারদের সাথে বসে নাস্তা করতে ও খোশগল্প করতে। লোক দেখানো বই ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘ দিন ধরে শন্তু ঘোষ পুলিশ ও অপরাধীদের সেবা করে আসছেন বলেও ঐ এলাকার একটি সূত্র জানায়। অবশ্য এ কাজ করে তিনি কোটি টাকার মালিকও হয়েছেন। আর এই থানার ওপর ভর করে বহাল তবিয়তে আছেন ওসি সুবাস। চলনে বলনে নিরেট ভদ্র। তবে ঘুষ দুর্ণীতিতে একেবারে সিদ্ধহস্ত। মাঠে ময়দানে ওসি সুবাসকে বেশি দেখা যায় না। থানায় বসে নিরবে বাদী বিবাদীর নিকট হতে উৎকোচ নেন। আর বইঘর নামক সাব থানার দারোগাদের দেয়া নগদ নারায়নে তুষ্ট হন।
এদিকে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, নড়াইলের মানুষের কাছে ওসি সুবাস বিশ্বাস এখন এক আতঙ্কের নাম হিসেবে পরিচিত। সদর থানার এই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবাস বিশ্বাসের চাঁদাবাজি আর নির্যাতনে এলাকার সাধারন মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। সুবাস বিশ্বাস ও তার অনুসারী কতিপয় পুলিশের সদস্যের বিরুদ্ধে মামলার ভয় দেখিয়ে সাধারন মানুষদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে এমন অভিযোগ রয়েছে। তারা এতোটাই ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে যে ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে কোন দপ্তরে অভিযোগও করতে ভয় পাচ্ছে। তবে তারা মুখ খুলছেন সাংবাদিকদের কাছে। জেলা পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবাস বিশ্বাস পূর্বে লোহাগড়া থানায় থাকা অবস্থায় থানা ও বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় তার চাঁদাবাজি ও নির্যাতনে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল সাধারণ মানুষ। এমন অভিযোগে তাকে লোহাগড়া থেকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়।
সব ধরনের ঘটনায় পুলিশের মামলা নেওয়ার বিধান থাকা সত্ত্বেও, সুবাস বিশ্বাস ভূক্তভোগিদের মামলা না নিয়ে শুধুমাত্র অভিযোগ নেন। এরপর তার আশির্বাদপুষ্ট এসআই কিশোর, ভবতোষ ও শেখর কে দিয়ে ঘটনাটির তদন্ত করিয়ে দুই পক্ষকে থানায় ডেকে সালিশ বোর্ড বসিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মিমাংশা করেন তিনি। এতে প্রকৃত অপরাধীরা অপরাধ করেও বহাল তবিয়তে পার পেয়ে যায়। কিন্তু এতে সাধারন মানুষ নিঃস্ব হলেও পকেট ভারী হয় এই গুটি কয়েক অসাধু কর্মকর্তার।
নড়াইলের সুযোগ্য পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করে সাধারণ জনগনকে সঙ্গে নিয়ে নড়াইলকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবাস বিশ্বাস ও তার আশির্বাদপুষ্ট এসআইগণ আসামীদের ধরা ছাড়ার দেন-দরবারে ব্যস্ত আছেন।
জানা যায়, সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তিন এসআইয়ের বিরুদ্ধে ডুমুরতলা-ঘোড়াখালী পুলিশের উপর হামলা মামলা, নাশকতা ও বরাশুলা শিবিরকর্মী গ্রেফতার মামলায় সাধারণ মানুষকে আটকের ভয় দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মোটা অংকের টাকা না দিলে ওই সব মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলেও এমন হুমকি দেয় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার আশির্বাদপুষ্ট এসআইগন। এসব মামলা থেকে রেহাই পেতে এবং সম্মান হারানোর ভয়ে অনেকেই তাকে চাহিদা মতো চাঁদা দিতে বাধ্য হন। বিডি খবর পত্রিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রায়াত বিএনপি নেতা আশরাফের অস্ত্র ভান্ডার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত ১৩ জুলাই বুধবার থানা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক, প্রয়াত শীর্ষ বিএনপি নেতা আশরাফের ভাগ্নি জামাই ও সাবেক কাউন্সিলর টপ সন্ত্রাসী তেলায়েত হোসেন বাবুকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু সেখানেও অস্ত্র উদ্ধারের কোন তথ্য না দিয়ে ওসি’র নেতৃত্বে চলে তাকে ছেড়ে দেওয়ার দেন-দরবার। চাহিদার অর্ধেক টাকা হাতে নিয়ে তাকে চালান দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে আসামীর স্বজনদের কাছ থেকে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, থানায় প্রতিটি মামলা করতে প্রায় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লাগে ভূক্ত ভূগীদের। জিডি করতে টাকা লাগেনা কিন্তু ডিউটি অফিসারদের পান, সিগারেট ও মিষ্টি থাওয়ার জন্য ২ থেকে ৪’শ টাকা গুনতে হয় সাধারণ মানুষদের। এছাড়া উপজেলার প্রায় সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে ঈদ খরচ বাবদ ১০ হাজার করে টাকা নেন ওসি সুবাস বিশ্বাস। মাইজপাড়া পশুর হাট থেকে ৩টি বিশালাকার খাসীও নেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবাস বিশ্বাস সারাদিন অফিসের চেয়ারেই বসে থাকেন। বিশেষ বিশেষ কাজ ছাড়া তিনি বের হন না। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আসামীর মহিলা স্বজনদের ও মহিলা কনস্টেবলদের সরকারের বরাদ্দকৃত তার নিজস্ব বাসায় নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। থানার বাইরে সব ধরনের দেন-দরবার কাজ কর্ম করে তার তিন অনুসারী এসআই কিশোর, ভবতোষ ও শেখর। অভিযোগ আছে এসআই ভবতোষ ও শেখর এখনও ব্যাচেলার। তাদের জন্য থানা ভবনে ভিআইপি রুম বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও তারা নিজেরা বাসা ভাড়া করে থাকে এবং সেই ভাড়াকৃত বাসায় চলে দেন-দরবার এবং অনৈতিক কার্যক্রম।