মামুনুর রশীদ রাজ, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান, স্বদেশ নিউজ২৪.কম : আজ  শুক্রবার দেওয়ানবাগ শরীফের বাবে রহমতে আয়োজিত সাপ্তাহিক বিশেষ আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিল উপলক্ষে সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী) হুজুর আশেকে রাসূল ও মুক্তিকামী মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন,সারাবিশ্বে একই তারিখে ঈদ পালন সম্ভব।

তিনি বলেন,মুসলিম বিশ্বে একই তারিখে ঈদ একই তারিখে রোজা হওয়া উচিত। একদিন আগে বা একদিন পর এভাবে ঈদ করা বা রোজা করা ঠিক না। রোজার দিন ঈদ করা ঈদের দিন রোজা থাকা এটা নিষিদ্ধ। কিন্তু আমরা যেভাবে পালন করছি এটা আসলে আল্লাহর ইচ্ছায় হচ্ছে না। এই বারের কথাই ধরুন আমরা কুরবানী করলাম মঙ্গলবার আর হজ্ব হয়েছে রবিবার। ইসলামের বিধান মতে হজ্বের পরের দিন কুরবানী। তাহলে আমাদের দেশে সোমবারে কুরবানী হওয়ার কথা ছিল। অথচ আমরা করেছি মঙ্গলবার তথা একদিন পরে।

দেওয়ানবাগী বলেন, শুক্রবারের জুমার নামাজ যদি আমরা সবাই শনিবার পড়ি নামাজটা হবে? আমরা প্রতি বছরই রোজা এবং ঈদ অসময় করছি। নির্দিষ্ট সময় করছি না। বর্তমানে বিজ্ঞানের উন্নত যুগ। একেক দেশে একেক সময় একেক জায়গায় ঈদও করছে, রোজাও করছে। আমাদের দেশেই ধরুন এবার সোমবারেও ঈদ হয়েছে, মঙ্গলবারও ঈদ হয়েছে। সোমবারে হয়ত সংখ্যায় কম কয়েকটা জেলার লোক উদযাপন করছে।

তিনি বলেন,অসময় ধর্ম পালন করা নিষ্ফল। ইসলাম বিজ্ঞান সম্মত ধর্ম। অথচ আমরা যেভাবে পালন করছি এই ইসলাম তো আমাদের মুক্তি দিতে পারে না। যে কারণে ফেতনা ফাসাদ মারামারি চলছে। শান্তির ইসলাম আমরা হারিয়ে ফেলেছি। হজ্বের দিন যারা আরাফাতের মাঠে জমায়েত হয় তাদের সাথে একাত্ম হয়ে হজ্বের দিন ফজর থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার’ পড়ে তাকবিরে তাশরিক দিতে হয়। প্রতি ফরজ নামাজের পরে এই তাকবীর দেয়া ওয়াজিব। আমাদের ওয়াজিব গেল কোথায়? সারাদেশের মানুষ একদিনে ওয়াজিবটা আদায় করতে পারে না। তাকবির দিতে পারে নাই। আমাদের দেশের মানুষ তাকবীর দেয়া শুরু করছিল মঙ্গলবার। কিন্তু সোমবারে তাকবিরের কথা ছিল। এভাবে প্রতি বছরই ভুলটা আমাদের হচ্ছে।

তিনি বলেন, সারা পৃথিবীর জন্য চাঁদ একটা, চাঁদ দুটা না। পৃথিবীর যে কোন দেশে চাঁদ দেখে সারা বিশ্বের জন্য এটা চাঁদের তারিখ।আমরা সারা বিশ্বের মুসলমানরা তো কালেমা দু রকম পড়ি না। একই কালেমা। আমাদের সব কাজ সময়ের উপরে হয়। অফিস আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য ঘড়ি ধরে সময়ের উপর। এই ঈদ আসলেই কেন সারা বিশ্বে বিশৃঙ্খলা। সারা বছর যে মাস গণনা করে শুধু ঈদের সময়টা ছাড়া অন্য সময় ব্যবধান হয় না। সব ঠিক ঠাক। শুধু রমজান মাস আর কুরবানির ঈদ এই দুইটা সময় প্যাচ লাগিয়ে দেয়।আমরা যদি নির্দিষ্ট সময়ে ধর্ম পালন করতে না পারি তাহলে আমরাই ক্ষতিগ্রস্থ এবং সেটার ফজিলত থেকে বঞ্চিত। তাই সবাই মিলে চেষ্টা করেন আমরা যেন একসাথে ধর্মীয় উত্সব করতে পারি। একসাথে করতে পারলে বিষয়টা সুন্দর হবে।

দেওয়ানবাগী বলেন, ঈদ সমস্যার সমাধান কিতাব আমি ১৯৭৮ সালে লিখেছিলাম,”সারাবিশ্বে কি ভাবে একই তারিখে ঈদ করা যায়?” পরে সেটা ইংরেজিতে, আরবিতে ট্রান্সলেট হয়েছে সারাবিশ্বে জানাতে। কিন্তু আলেম সমাজ তো একমত হয় না। এটা এই কারনে কার্যকারী হয় না। আমরা আপাতত সৌদি আরবের সাথে রোজা-ঈদ শুরু করতে পারি। সারা বিশ্বে সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবধান হলো ১১.৩০ঘন্টা। জাপান থেকে আমেরিকা পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান ১১.৩০ ঘন্টা। আর একটা দিন হয়, একটা তারিখ হয় ২৪ ঘন্টায়। ২৪ ঘন্টার ভিতরেই তো সারে ১১ ঘণ্টা পরে। তো এটা তো কোন চিন্তার বিষয় না। ওরা বলে একদিনে। একদিনে তো না যখন আমাদের দিনটা আসে তখন আমরা পড়ব। যেমন যখন শুক্রবার আসে তখন ওরা শুক্রবারটা পালন করে। সুতরাং আপনারা চিন্তা ভাবনা করেন যেন আমরা সুষ্ঠুভাবে এই ঈদ সমস্যার সমাধান করতে পারি।

তিনি বলেন,ইসলামিক ফাউন্ডেশন যেটা বলে সেটাই ঠিক।’ কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশন তো আর কথা বলে না, বলে তো ব্যক্তি। প্রতি বছর আমরা রমজান মাসের ক্যালেন্ডারটা বানিয়ে দেই যাতে করে ঠিকমত রোজাটা পালন করতে পারে এবং ঈদ করতে পারে। এ বছর আমরা দিয়েছি ক্যালেন্ডার। আমরা ক্যালেন্ডারে প্রনয়ণ করেছি চাঁদ বাংলাদেশে কবে দেখা যাবে সেই অনুযায়ী। সময় টিভিতে বলেছিল চাঁদ দেখা গেছে। আমরা তো দুই মাস আগেই বলে দিয়েছি চাঁদ কবে দেখা যাবে সময় টিভিতে বলছে বগুড়া আর ফেনীতে চাঁদ দেখা গেছে। কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশন তো এটা মানে নাই। অযোগ্য লোক থাকলে যাহা হয় তাই।

দেওয়ানবাগী বলেন, ১০ই মহররম আশুরা। দেখবেন এটা ঠেলে নিয়া যাবে ১১ই মহররমে। ঐ চাঁদের হিসাব করে বলবে আমাদের দেশে চাঁদ উঠে নাই। সবাই চেষ্টা করেন যার যার মত, যেন আমরা একটু এগোতে পারি। আমাদের দেশে তো ধর্ম এসেছে অলী-আল্লাহদের মাধ্যমে। অলী-আল্লাহরা ধর্ম সম্বন্ধে জানে। হুজুররা তো ধর্ম আনেনি, বরং ধর্মে বাঁধা সৃষ্টি করছে।

আখেরী মুনাজাতের মাধমে মাহফিল পরিসমাপ্ত হয়।