মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) রাজধানীর গুলশান হামলার ওপর একটি নতুন ভিডিও প্রকাশ করেছে। ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গির কথাবার্তা, হামলার ঘটনা এবং আইএসের কর্মকা- সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরা হয় বাংলা ভাষায় তৈরি এই ভিডিওতে।
১৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে আরবির পাশাপাশি বাংলাতেও বক্তব্য রাখা হয়েছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি তৎপরতা নজরদারি সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স আইএসের কথিত সংবাদ সংস্থা আমাকের বরাত দিয়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে এ ভিডিও প্রকাশের তথ্য জানিয়েছে।
ভিডিওটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, কয়েকজন ধর্মীয় নেতাসহ বেশ কয়েকজনের সমালোচনা করে বক্তব্য দেয়া হয়েছে।
বাংলা এই ভিডিওতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনসহ বিশ্বনেতাদের ‘কাফের’ হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়, মুসলিমদের তাদের প্রতি কঠোর হতে হবে।
গুলশানে হামলার কারণ প্রসঙ্গে ভিডিওতে বলা হয়েছে, মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুদের রক্তে রঞ্জিত ক্রুসেডাররা মুসলিমদের প্রতি চরম উপহাস হিসেবে তাদের ভূমি বাংলাকে মনোরঞ্জনের স্থান হিসেবে বেছে নেয়। তারা ভেবেছিল আল্লাহর আজাব থেকে পালিয়ে বাঁচবে। কিন্তু না, তাদের ওপর আল্লাহর আজাব এলো এমন জায়গা থেকে যার কল্পনাও তারা করেনি। দওলাতুল ইসলামে তাদের মুসলিম ভাই-বোনদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে ঢাকার গুলশানে আল্লাহর পাঁচ মুজাহিদ বান্দা ঝাঁপিয়ে পড়েন অপবিত্র ক্রুসেডরদের ওপর।
গুলশান হামলার প্রায় তিন মাসের কাছাকাছি সময় এসে হামলাকারী সন্দেহভাজন জঙ্গিদের মৃতদেহ গত বৃহস্পতিবার দাফন করা হয়। এরপর এই ভিডিও প্রকাশ করে আইএস ভিডিওতে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন ধর্মীয় নেতার কথা বলা হয়েছে। যেমন শোলাকিয়া ঈদ জামাতের ইমাম ফরিদউদ্দিন মাসুদকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, তিনি আসলে সরকারপক্ষের লোক। এ ছাড়া শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া দুজনকেই উদ্দেশ করে ভিডিওতে বলা হয়েছে, তারা তাগুদ বা ইসলামের শত্রু।
ভিডিওটির দ্বিতীয় অংশে গুলশান হামলার ঘটনায় নিহত পাঁচজন জঙ্গি কালো পাঞ্জাবি এবং মাথায় বিশেষ ধরনের স্কার্প পরে আইএসের পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। এ ধরনের স্থিরচিত্র আগে প্রকাশ হয়েছিল। এখন ভিডিওতে তারা কথা বলছেন। তারা একজন করে কথা বলছেন, তখন তাদের হাতে একে ৪৭ রাইফেল এবং ছুরি দেখা যায়। তারা কোরআন-হাদিস থেকে বিভিন্ন উদ্ধৃতি তুলে ধরেন। গুলশানে রেস্তোরাঁয় হামলা করার পক্ষে তারা তাদের যুক্তিও তুলে ধরেন।
নিহত হওয়ার পর এই ৫ জঙ্গির যে নাম বা পরিচয় সবাই জেনেছে ভিডিওতে সেই নাম ছিল না। ব্যবহার করা হয় পোশাকি নাম।
গত ১ জুলাই রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ২০ জন নিহত হন। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে অংশ নেয়া দুই পুলিশ কর্মকর্তাও এ ঘটনায় নিহত হন। পরদিন সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে ৫ জঙ্গিসহ ৬ জন নিহত হন। সূত্র: বিবিসি।
কিন্তু গুলশান হামলার ঘটনার প্রায় তিনমাস পর এসে কেন এই ভিডিও প্রকাশ করা হলো, এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে_ এসব প্রশ্নে সাংবাদিক তাসনিম খলিল বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আইএসের এবং এ ধরনের জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের কোনো সদস্য কোথাও হামলা করে নিহত হলে, নিহতদের দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে থাকে। গুলশানে হামলাকারী জঙ্গিদের ক্ষেত্রেও তাই করা হলো। তাদের মৃতদেহ দাফন হওয়ার পর ভিডিও প্রকাশ হলো।’
তিনি আরো উল্লেখ করেন, এরা সাধারণত কোনো জঙ্গি তৎপরতা বা হামলা চালানোর আগে কিছু বার্তা ভিডিও করে রাখে। গুলশান হামলাকারীরাও বাংলাদেশের কোনো গ্রাম থেকে ভিডিও করেছিল বলে এটি দেখে তার ধারণা হয়েছে। বাচ্চাদের চিৎকার, গরু-বাছুরের ডাকের আওয়াজ শোনা গেছে।
গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনার ছবিও ভিডিওতে আছে, সে ব্যাপারে তাসনিম খলিল বলেন, ‘গুলশানে জঙ্গি হামলায় নিহতদের মৃতদেহ পড়ে আছে। এমন ছোট একটা দৃশ্য ভিডিওতে দেখা যায়। এতে আমি একটু অবাকই হয়েছি। কারণ এই ভিডিওটার ব্যাপারে আইএসের একসেস থাকার কথা না। এ ধরনের ভিডিও সাধারণত বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনী করে এমন ঘটনাগুলোর পরে। তো সেটা আইএসের ভিডিওতে কীভাবে এলো, এটা একটা রহস্য।
এ ধরনের একটি ভিডিও দেয়া হবে বলে আইএসের বাংলা এক ওয়েবসাইটে প্রথমে ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরবি ভাষায় একটি ওয়েবসাইটে এটি প্রথম রিলিজ করা হয়।