জঙ্গিবাদের সৃষ্টিকর্তা কারা? পৃথিবীতে জঙ্গিবাদ কারা সৃষ্টি করেছেন? জঙ্গিদের মূল উদ্দেশ্য কি? অনেক প্রশ্ন রয়েছে আমাদের মাঝে এই জঙ্গিদের নিয়ে। পৃথিবীর যেখানেই বর্তমানে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে এদের সবার পেছনে ইসলাম ধর্মের অনুসারী জঙ্গিদের নাম উঠে আসছে। যেমন, আল কায়েদা, তালেবান এবং বর্তমানে আইএস। আমার প্রশ্ন হচ্ছে; জঙ্গিরা কি আসলেই ইসলাম ধর্মের প্রকৃত অনুসারী?
এরা কি পবিত্র কুরআন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজ মাতৃ ভাষায় বুঝে পড়েছেন? এদের কি জানা আছে জিহাদ শব্দের মূল অর্থ কি? জিহাদ মানে কি নিরীহ মানুষদের হত্যা? অবশ্যই না। কিছু ইসলাম বিরোধী মানুষ এবং পশ্চিমা মিডিয়ার অপপ্রচারের কারনেই জিহাদের নামে আজ আইএস নামক এই সন্ত্রাসী জঙ্গি দল সিরিয়া, ইরাক এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিরীহ নারী, পুরুষ এমনকি অবুঝ শিশু পর্যন্ত হত্যা করছেন। এদের ধর্ম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা নাই। যারা বর্তমানে জঙ্গি হামলা করছেন। নিরীহ মানুষ হত্যা করার জন্য শপথ নিয়ে জঙ্গিদের আস্তানায় গিয়ে গোপনে ট্রেনিং নিচ্ছেন এরা কি আসলেই জানেন যে ইসলাম ধর্মে কোন নিরীহ মানুষদের হত্যা করা মহা পাপ? এদের ব্রেন ওয়াস বা মগজ ধোলাই কারা করছেন? কারা জঙ্গিদের পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন? কেন সব জঙ্গিরা ইসলামের নামে মানুষ হত্যা করছেন?
এই পৃথিবীতে আরও অনেক ধর্মের অনুসারী রয়েছেন, খ্রিষ্টান, সনাতন ধর্মের অনুসারী (হিন্দু), বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী, শিখ ধর্মের অনুসারী। সুতরাং এদের মধ্যে জঙ্গি নাই কেন? এইসব ধর্মের অনুসারীদের মধ্যও জঙ্গি গোষ্ঠী রয়েছেন তবে মিডিয়ার কল্যাণে আমাদের কানে ওইসব জঙ্গি গোষ্ঠীর নাম কানে সহসা আসেনা। আমার প্রশ্ন হচ্ছে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের মধ্য থেকে তালেবান, আইএস নামের জঙ্গি গোষ্ঠীর আত্মপ্রকাশ ঘটছে না কেন? তার মানে কি এই ধরে নেওয়া যেতে পারে যে; ইসলাম ধর্মের অনুসারীরাই একমাত্র জঙ্গি মন মানসিকতা নিয়ে পথ চলেন? ইসলাম ধর্মের অনুসারীরাই জঙ্গি? আর অন্য ধর্মের অনুসারীরা শান্তি প্রিয়?
এখন আসি মূল প্রসঙ্গে; আসলে জঙ্গিবাদের সৃষ্টিকর্তা কারা এটা আমাদের ভালো করে জানতে হবে এবং বুঝতে হবে। জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে ইসলাম ধর্মকে কেন টেনে আনা হচ্ছে। আমরা অনেকেই জানি, পশ্চিমা দেশ আমেরিকা এবং ইসরাইল এই দুটি দেশ হচ্ছে শুরু থেকেই বন্ধু প্রতিম দেশ, মানে এই দেশ দুটির মাঝে মানিক জোড় সম্পর্ক রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যর তেল বাণিজ্যের দিকে লোভাতুর দৃষ্টি রয়েছে আমেরিকার সেই পুরাতন কাল থেকেই। এই মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলোর মধ্য রয়েছে ইরাক, কুয়েত, সিরিয়া, লিবিয়া, সৌদি আরব সহ অনেক দেশ। আমেরিকার খুব পারদর্শী গোয়েন্দা সংস্থার নাম হছে সিআইএ (CIA) । আমরা জানি রাশিয়াকে খন্ড বিখন্ড করার জন্য আমেরিকার ভূমিকা রয়েছে। আমেরিকার সৃষ্টি তালেবান, তালেবান দ্বারা রাশিয়ার সৈনিকদের সাথে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেবার পেছনে সম্পূর্ণ হাত রয়েছে এই আমেরিকার এবং তাদের চামচে ইসরাইল রাষ্ট্রের। এই তালেবান যখন আমেরিকার দেওয়া অস্ত্র গোলাবারুধ হাতে পেয়ে একসময় জঙ্গি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হল তখন এই আমেরিকার সরকারই তালেবান নিধনের নাম করে আফগানিস্থানে লাখ লাখ নিরীহ মানুষদের হত্যা করলো। তালেবান তো নিধন হলইনা বরং নিরীহ মানুষ মারা গেল এদের আক্রমনে।
সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার জন্য সিরিয়ার সরকার বিরোধী কিছু মানুষ আন্দোলন করলেন। সিরিয়া একটি স্বাধীন দেশ। এদের রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে আমেরিকার অনেক মাথা ব্যাথা। লিবিয়ার গাদ্দাফি সরকার উৎখাতের পেছনেও আমেরিকার সিআইএ। ইরাকে পারমানুবিক বোমা আছে এই অভিযোগে আমেরিকার বুশ সরকার ইরাকের লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছিলেন, সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এরা শান্তি পাননি বরং এখনো ইরাকে আমেরিকার লেলিয়ে দেওয়া ষড়যন্ত্রের শিকারে রোজ নিরীহ মানুষ নিহত হচ্ছেন।
আমি যদি বলি; আইএস সৃষ্টি করেছে আমেরিকা এবং ইসরাইলের প্রশাসন। তাহলে কি ভুল হবে? অবশ্যই না। আইএস নামক এই জঙ্গি সন্ত্রাসীরা কোন ভাবেই ইসলাম ধর্মের অনুসারী হতে পারেন না। আজ মিডিয়া জঙ্গিদের সাথে মুসলিমদের নাম জড়াচ্ছেন। আমার প্রশ্ন হল, আমি নিজে ইসলাম ধর্মের অনুসারী। তবে কি আমিও জঙ্গি? জঙ্গিরা যদি “আল্লাহু আকবার” বলে নিরীহ মানুষ হত্যা করেন তাহলে আমরা যারা নিরীহ মুসলিম রয়েছি আমাদের এতে কি অপরাধ? অথবা জঙ্গিদের এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে শান্তির ধর্ম ইসলাম কেন কলুষিত হবে? কেন আজ ইসলাম ধর্ম নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে? এর সহজ উত্তর; ইহুদীদের চক্রান্ত। ইহুদীরা এমন এক জাতি এরা কারো উন্নতি সহ্য করতে পারেন না। এরা আজ মুসলিম দেশগুলোর উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমেরিকার সাথে যোগসাজস করে ষড়যন্ত্র বেড়াজাল পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ইসলাম ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করে এরা গোটা পৃথিবীর ইসলামের অনুসারীদেরকে কলঙ্কিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
আসলে, জঙ্গি অথবা আইএস বলি অথবা তালেবান এদের যে নামেই ডাকি না কেন, এদের অন্তরে পবিত্র কুরআন এবং শেষ নবী হজরত মোহাম্মাদ (সাঃ) এর কোন আদর্শই নেই। এরা যদিও যুদ্ধ করছে ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করার কথা বলে, আসলে এদের প্রভু হচ্ছে পশ্চিমা এবং ইহুদী শাসকেরা। আইএস সন্ত্রাসিদের ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে এরা পশ্চিমা অস্ত্র, যানবাহন, হাতিয়ার, মারণাস্ত্র দ্বারা পরিপূর্ণ। আমি আইএস জঙ্গিদের নিয়ে কিছুদিন আগে কয়েকটি প্রামাণ্য চলচিত্র দেখেছিলাম। এদের চাল চলন, ব্যাবহার ইত্যাদি দেখে মনে হয়না এরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য কথিত জিহাদ করছে। এরা আসলে আমেরিকা এবং ইসরাইলের স্বার্থ হাসিল করার উদ্দেশ্য নিয়েই পৃথিবীতে অরাজগতা সৃষ্টি করছে। এদের ধ্বংস করতে আমেরিকার মাত্র কয়েক দিনের ব্যাপার। কিন্তু সেটা তারা করছেনা। ওই যে, তেল বাণিজ্য!
ইসলাম ধর্মকে মানুষের কাছে কলুষিত করার নোংরা উদ্দেশ্য নিয়ে ইসরাইল এবং আমেরিকা আইএস, আল কায়েদা, তালেবানসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন তৈরি করেছেন। এবং তাদের এই নোংরা কার্যকলাপ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে আমি মনে করি। যতদিন ইসরাইল নামক রাষ্ট্র আমেরিকার সাথে থাকবে এদের দ্বারা জঙ্গি সৃষ্টি হতেই থাকবে। এই জঙ্গিদের যারা জন্ম দিচ্ছেন এরাই আবার ঢাকঢোল পিটিয়ে জঙ্গি নিধনের নাম করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করছেন, সে দেশের নিরীহ জনগণদের হত্যা করছেন। জঙ্গি নিধনের কথা বলে এরা সেইসব দেশে খুঁটি গেঁড়ে বসেছেন পাকাপোক্ত ভাবেই।
কয়েকমাস আগে আমাদের বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে (হলি আর্টিসান) জঙ্গি হামলা হল। বাংলাদেশী সহ নিরীহ কিছু বিদেশীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হল। বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ববত এটাই হচ্ছে প্রথম জঙ্গি হামলা। যা আমরা কখনো কল্পনা পর্যন্ত করতে পারিনি। ঢাকার গুলশান-২ এ ৭৯ নাম্বার রোডে অবস্থিত একটি খাবারের রেস্তোরায় অকারণে সন্ত্রাসী হামলা করে নিরীহ বিদেশিদের হত্যা করে একটি বিশেষ মহল বাংলাদেশে আমেরিকার প্রশাসনের হস্তক্ষেপের প্রবেশের সুযোগ করে দেবার ষড়যন্ত্রে পুরোপুরি লিপ্ত। কিছুদিন আগে যেখানে ফ্রান্স এ জঙ্গি হামলা হল আর আইএস থেকে সাথে সাথে জঙ্গিদের সেই হামলার দায় স্বীকার করা হলনা আর বাংলাদেশে হামলার কয়েক ঘণ্টা বাদেই আইএস এর হামলার দায় স্বীকার আমাকে বিস্মিত করে! আমেরিকা বাংলাদেশে কথিত জঙ্গি হামলার পর তাদের দেশ থেকে আমাদের দেশের প্রশাসনকে সহায়তার জন্য তাদের দেশের প্রশাসন থেকে জনবল পাঠাতে চেয়েছিলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের কারনে বাংলাদেশে জঙ্গিরা তাদের নোংরা কার্যকলাপ ঠিকভাবে পরিচালিত করতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। একটি বিশেষ মহল চাইছে, দেশে কথিত জঙ্গি হামলা করে সরকারকে অন্য দিকে ব্যস্ত রাখতে। বিষয়টি তাই নয় কি? আমার ধারনা যদি সঠিক হয়, তাহলে এই জঙ্গিদের সাথে অবশ্যই জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (যারা নিজেদেরকে আইএস জঙ্গি সংগঠনের সদস্য মনে করেন) এবং তাদের গড ফাদার জামাতে ইসলাম সরাসরি জড়িত।
বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর মধ্য অনেক হাইব্রিড নেতা রয়েছেন। যারা নিজেদের গা বাচানোর জন্য জামাইয়াতে ইসলাম এবং বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করেছেন। এরাও কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকারের জন্য বিষ ফোঁড়া! এরা যদি আওয়ামীলীগে থাকেন তবে অচিরেই আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হবে এদের ষড়যন্ত্রের কারনেই। এরা সরকারে থেকে গোপন তথ্য পাচার করবেন রাজনৈতিক দল জামাতে ইসলামের কাছে। আর জামাতে ইসলাম সেই তথ্য জঙ্গিদের সরবরাহ করে বাংলাদেশে নাশকতামুলক কাজ করবেন এতে কোন সন্দেহ নাই। কথায় আছে, সর্ষের ভেতর নাকি ভূত। সুতরাং; আগে সর্ষের ভূত তাড়াতে হবে।
আমাদের সকলের সতর্ক থাকতে হবে, আইএস জঙ্গিদের নামে আমাদের শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশে আর যেন কোন রক্তপাত না ঘটে।
পরিশেষে, আমেরিকা এবং ইসরাইল রাষ্ট্র যতদিন মানিকজোড় হয়ে থাকবে ততদিন জঙ্গি জঙ্গি নাটক আমাদের সবাইকেই দেখে যেতে হবে। আমরা শান্তি চাই, আমরা রক্তপাত দেখতে চাইনা। ধর্ম আমাদের আসল পরিচয় নয় বরং মনুষ্যত্ব এবং মানবতা হচ্ছে আমাদের আসল পরিচয়। এটা যদি আমরা মনে প্রানে বিশ্বাস করি, তবে সমাজে ধর্মের নামে এতো অশান্তি সৃষ্টি হবে না।
– ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।