বাণিজ্য ডেস্ক ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম : শুধু জ্বালানি পরিশোধন ও সরবরাহ কার্যক্রম নয়, বরং ব্যবসার সব খাত থেকেই প্রায় ৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করছে সৌদি আরামকো। বিশ্বের বৃহত্তম তেল কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী আমিন নাসের এক সাক্ষাত্কারে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এসব শেয়ারের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ছাড়ার ব্যাপারে বেশ কয়েকটি বিনিয়োগ ব্যাংক ও কনসালট্যান্টের পরামর্শ নেয়া হবে। শিগগিরই তাদের নাম ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান। খবর ব্লুমবার্গ।
নাসের জানান, সৌদি স্টক মার্কেটে শেয়ারগুলো তালিকাভুক্তির পরিকল্পনা করছে সৌদি আরামকো। তবে নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণের কথা উল্লেখ করেননি তিনি। এছাড়া কোম্পানিটি লন্ডন, হংকং ও নিউইয়র্কের শেয়ারবাজারের দিকেও নজর দিচ্ছে বলে তিনি জানান।
জ্বালানির সাম্প্রতিক দরপতনের কারণে সৌদি সরকার বেশ সংকটের মধ্যে রয়েছে। এমন অবস্থায় রাজস্ব বৃদ্ধি ও অর্থনীতি পুনর্গঠনের চেষ্টায় সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিটির ৫ শতাংশের কিছু কম শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটির আয় কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার দাঁড়াতে পারে। ২০১৮ সালের প্রথম দিকেই শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে চায় সরকার।
চলতি বছরের এপ্রিলে সৌদি আরামকোর শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ও সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান। কোম্পানিটির আইপিও বাজারে ছাড়া হলে তা বিশ্বের বৃহত্তম শেয়ার প্রস্তাব হয়ে দাঁড়াবে।
বাহরাইনে সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় নাসের বলেন, ‘তালিকাভুক্তির জন্য আমাদের আরো অনেক কাজ করতে হবে। আমরা শুধু ডাউনস্ট্রিম (জ্বালানি পরিশোধন ও সরবরাহ) খাতের শেয়ার বিক্রি করব না। বরং পুরো কোম্পানিরই অংশবিশেষ তালিকাভুক্ত করব।’ তার মতে, ‘আরামকোর আইপিওর পথে কোনো বাধা নেই। প্রক্রিয়াটি মসৃণগতিতে এগোচ্ছে। আমরা ঠিক পথেই আছি। এখন পর্যন্ত আমরা বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছি। মানুষকে আরামকোর আকার ও জটিলতা বুঝতে হবে।’
বর্তমানে সৌদি আরামকো প্রায় রেকর্ড পরিমাণ জ্বালানি উত্তোলন করছে। ব্লুমবার্গের এক উপাত্তে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটি প্রতিদিন ১ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করেছে।
বুধবার এক ঘোষণায় কোম্পানিটি জানায়, নভেম্বরে এশিয়া ও উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি ছাড়কৃত মূল্যে বিক্রি করা হবে। এছাড়া অন্য অঞ্চলেও বেশির ভাগ গ্রেডের জন্যই দাম কমানো হবে বলে আরামকো জানিয়েছে। বিশ্বজুড়ে জ্বালানির অত্যধিক সরবরাহের এ সময়ে বাজার অংশীদারিত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যেই কোম্পানিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নাসের বলেন, ‘বিশ্বে যে কয়টি কোম্পানি এখনো বিনিয়োগ করছে, তার মধ্যে আমরা অন্যতম। আমরা আমাদের মূল ব্যবসায় বিনিয়োগ অব্যাহত রাখব। আমাদের রিগের সংখ্যার পাশাপাশি সার্বিক কার্যক্রমও বাড়ছে।’
গত সপ্তাহে আলজিয়ার্সের বৈঠকে অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) গত আট বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জ্বালানি উত্পাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনার জন্য ওপেকভুক্ত ও ওপেকবহির্ভূত দেশগুলোর জ্বালানিমন্ত্রীরা আগামী সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে বৈঠকে বসবেন। নাসের বলেন, ‘সৌদি আরামকো এখনো যথেষ্ট সুযোগ দেখছে, যা কাজে লাগিয়ে আমরা ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। বিশেষ করে ডাউনস্ট্রিম (উত্তোলন ও সরবরাহ) ও গ্যাস খাতে, যেখানে আমরা খুব দ্রুত উন্নতি করছি।
সৌদি আরামকো শেল গ্যাসসহ প্রাকৃতিক গ্যাসের সার্বিক উত্পাদন সক্ষমতা বাড়াতে চাইছে। কোম্পানিটি আগামী ১০ বছরে উত্পাদন মাত্রা বর্তমানের ১ হাজার ২০০ ঘনফুট থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে চাইছে।