না-ফেরার দেশে পুরোধা বর্ষীয়ান রাজনীতিক অজয় রায়—তার ইচ্ছা অনুযায়ী তিনি মিশে থাকবেন এ বাংলার মাটির সঙ্গে।
সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চের সমন্বয়ক এবং দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম এ পুরোধা সোমবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ধানমন্ডিতে নিজের বাসায় মারা যান। বর্তমানে তার মরদেহ বারডেম হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
৮৯ বছর বয়সী এই বাম নেতা দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্য জনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন।
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, অনেক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন অজয় রায় গত সপ্তাহে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল থেকে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। আজ সকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আনার কথা ছিল। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তার শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এরপরও তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানকার চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, আগামী বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অজয় রায়ের প্রতি নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হবে। সেখানে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের মরদেহ রাখা হবে। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে থাকেন। তাদের মধ্যে দুজন ফিরলেই বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
পরিবারের সদস্যদের অজয় রায় বলে গেছেন, মৃত্যুর পর তিনি এই বাংলার মাটির সঙ্গে মিশে থাকতে চান। তাই তার মরদেহ দাহ না করে সমাধিস্থ করা হবে। নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলির পর তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই তাকে সমাধিস্থ করা হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সিপিবির সঙ্গে ছিলেন অজয় রায়। তার মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক জানাচ্ছি। কমিউনিস্ট পার্টি ও মেহনতি মানুষের জন্য নানাভাবে অবদান রেখেছেন তিনি।
গত শতকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও স্বাধিকার আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা অজয় রায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকায় ছিলেন। পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভূমিকা রেখে গেছেন আজীবন।
১৯২৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে জন্ম নেন অজয় রায়। ভারতের বারানসিতে থাকাকালে স্কুলজীবনেই বাম নেতাদের সংস্পর্শে এসে যুক্ত হন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে।
আইনজীবী বাবার মৃত্যুীর পর ১৯৪৪ সালে বাংলাদেশে ফিরে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি নেন অজয়। এরপর কিশোরগঞ্জের বনগ্রামে দাদার বাড়িতে ফিরে কমিউনিস্ট পার্টির কাজে সক্রিয় হন।
পঞ্চাশের দশকে কমিউনিস্ট নেতা নগেন সরকার, ওয়ালী নেওয়াজ খান, মণি সিংহের সান্নিধ্যে আসেন অজয় রায়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।
সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্যা রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, ১৯৯৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টিতে ভাঙনের পর রূপান্তরিত কমিউনিস্ট পার্টি হয়ে অজয় রায় ও ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান গঠন করেন কমিউনিস্ট কেন্দ্র।
তবে সে সংগঠনও টেকেনি। ২০১০ সালের পর ‘সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তার নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম এ পুরোধা ব্যতক্তি।
অজয় রায় সংবাদপত্রের কলাম লেখার পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিভিন্ন আন্দোলন এবং ভূমি ব্যরবস্থাপনা নিয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখে গেছেন।