রাজশাহীর পুঠিয়ায় বোমা তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণে এক যুবকের দুই হাতের কব্জি উড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ডান চোখ। গুরুতর জখম হয়েছে বুক ও মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান। শনিবার রাত সাড়ে ৮টা দিকে উপজেলার তাড়াস বেলপুকুর এলাকার একটি বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। পরে রাতেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহত যুবককে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ। বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রামেক হাসপাতালের ৩১ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত আব্দুল খালেক চারঘাট উপজেলার গোপালপুর গ্রামের আবু বক্করের (৮০) ছেলে এবং চারঘাটের এমএ হাদি ডিগ্রি কলেজের অনিয়মিত ছাত্র। এ ঘটনার পর সেখান থেকে দুইজন পালিয়ে যায়। আব্দুল খালেককে জঙ্গি হিসেবে স্থানীয়রা সন্দেহ করছে। পুলিশও বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে বলে জানানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, একদম সাদা-মাটা ছেলে ছিলেন আব্দুল খালেক। তবে চলাফেরা করতো একাএকা। বাইরে নিজের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকতো। কোন প্রয়োজন হলেই তবে বাড়ির বাইরে বের হতো। তার কাছের বন্ধু ছিলন চাচাতো ভাই লালন। লালন জেএমবির অন্যতম সদস্য। খালেকের বৃদ্ধ পিতা আবু বক্কর তেমন কাজ করতে পারেন না। বাড়ি থেকে কিছু দূরে একটি জমিতে বাড়ি করে থাকেন। আর মাঝেমধ্যে এখানে আসেন। তাঁর ৬ ছেলের মধ্যে একজন বিদেশে থাকে। মাঝেমধ্যে তিনি দেশে আসেন। বৃদ্ধের ঘর ফাঁকা থাকায় আব্দুল খালেক ওই ঘরেই থাকতো। এদিকে বিস্ফোরণের পর রাতভর ঘটনাস্থলের বাড়িতে এবং আহত খালেকের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এসময় খালেকের বাড়ি থেকে টাইমবোমা, ৫টি চাপাতি, দুটি চাইনিজ কুড়াল দুটি প্রেটলবোমা, চারটি জিহাদী বই, কম্পোজ করা দুই পৃষ্ঠা জিহাদী বার্তা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বোমা তৈরি করা ওই বাড়ি থেকে একটি হেলমেট ও বিস্ফোরণে খসে পড়া খালেকের হাতের দুটি আঙ্গুল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্র জানা যায়, শনিবার রাতে উপজেলার তাড়াস বেলপুকুর এলাকায় যে বাড়িতে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে সে বাড়ির মালিকের নাম জাহিদ হোসেন (৩০)। তার বাবার নাম সোহরাব আলী। শনিবার সন্ধ্যার পর জাহিদ হোসেনের আত্মীয় বুলবুলের সঙ্গে আহত খালেকসহ দুই যুবক বাড়িটিতে প্রবেশ করে। পরে বুলবুলের সঙ্গে যাওয়া যুবকদের তার বন্ধু পরিচয় দেয়। এরপর বাড়ির লোকজন তাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানের দাওয়া খেতে যায়। এসময় ওই বাড়িতে তারা (কয়েক যুবক) ছাড়া আর কেউ ছিল না। বুলবুল ও তার দুই বন্ধু মিলে শ্যালক জাহিদের ঘরে বোমা তৈরি করতে গিয়ে এ বিস্ফোরণ ঘটে। বিকট শব্দ শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসলে বুলবুল বেরিয়ে এসে তাদের জানায়, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে। এই বলে তারা সেখান থেকে সটকে পড়ে। পরে স্থানীয় লোকজন ঘরে ঢুকে আব্দুল খালেককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে আব্দুল খালেককে আহত অবস্থায় আটক করে প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপেপ্লক্সে ও পরে রামেক হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় বুলবুল ও তার বন্ধুও আহত হয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আব্দুল খালেকসহ পালাতক অপর দুই যুবকের জঙ্গি সংশ্লি¬ষ্টতা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান। ওসি বলেন, আমরা ধারণা করছি তারা জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বা ধর্মীয় উগ্রবাদী কোনো জঙ্গীগোষ্ঠির সদস্য। আর জাহিদের বাড়িতে সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো বলে আমাদের নিকট তথ্য রয়েছে। প্রয়োজনীয় বিস্ফোরকদ্রব্যও তৈরি করা হতো এখানে। তবে অভিযানের সময় বাড়িতে কাউকেই পাওয়া যায়নি। তাই কাউকে আটকও করা যায়নি।