জাতীয় দলের ক্রিকেটার আল আমিন হোসেন ও সাব্বির রহমানকে বড় অংকের জরিমানা করা হয়েছে। তারা ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছে বলেই বিপিএলের চুক্তি থেকে সাব্বিরের ৩০ ও আল আমিনের ৫০ শতাংশ অর্থ কেটে নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আর বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটির কাছে অপরাধ স্বীকার করে নেয়ায় জরিমানায় পার পেলেন সাব্বির ও আল আমিন। কিন্তু কি সেই অপরাধ! বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল তা গোপন করতে চাইলেও সম্ভব হয়নি। নারী কেলেঙ্কারি ঘটিয়েই এই দুই ক্রিকেটার শাস্তি পেলেন। জানা গেছে, চট্টগ্রামে টিম হোটেলে মেয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি ঘটনার কারণেই বিসিবি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। টিম হোটেলে এ ধরনের ঘটনাকে অ্যালার্মিং বলেও শিকার করে নিয়েছেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ও বিসিবি পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক। তিনি বলেন, ‘অ্যালার্মিং দেখেই তো অ্যাকশন নিয়েছি। যেন আমাদের ইয়াং খেলোয়াড়দের মধ্যে এটা ছড়িয়ে না পড়ে বা এই খেলোয়াড়রাও যেন আর বিপথে না যায়। আমাদের সভাপতির একটা অর্ডার সব সময় আছে, যেটা এখনো বলবত আছে। সেটা শুধু বিপিএল না, বিসিএল হোক, এনসিএল হোক, কোনো জায়গায় যদি শৃঙ্খলাজনিত কিছু হয়ে থাকে আমরা কোনো সিদ্ধান্তেই পিছপা হইনি। এবারও যখনই আমাদের নজরে এসেছে আমরা দ্রুত হেয়ারিং করে সিদ্ধান্ত দিয়েছি।’ বিসিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কিছু পরিষ্কার করেনি। গতকাল ইসমাইল হায়দার মল্লিকও পরিষ্কার কিছু বললেন না- কি ঘটনায় তাদের শাস্তি। তবে সবাইকে জানিয়ে দেন, এটি ফিক্সিংজনিত কিছু নয়। তিনি বলেন, ‘দেখুন বিসিবিতে আমাদের কড়া নির্দেশ আছে বিসিবি সভাপতির যে, ডিসিপ্লিনের ব্যাপারো আমরা কোনো সময় কোনো ছাড় দিতে পারবো না। আপনাদের মনে একটা কনফিউশন আসতে পারে এটা কি শৃঙ্খলা ইস্যু নাকি ফিক্সিং ইস্যু? আমি পরিষ্কার করে বলছি এটা ফিক্সিং সংক্রান্ত কোনো ঘটনা না। এটা পুরোপুরি একটা ইনডিসিপ্লিনারি ঘটনা ছিল। প্রত্যেকটা হোটেলে আমাদের দুই-তিনটা টিম কাজ করে। আমাদের অ্যান্টি করাপশন ইউনিট আছে, ইনটেলিজেন্স ইউনিট আছে অ্যান্টি করাপশনের আন্ডারে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করে দেখেছি এবং দুই ক্রিকেটারের হেয়ারিং হয়েছে। এরপর এই অ্যাকশনটা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
সাব্বির ও আল আমিনের শাস্তির পর আগের অনেক বিষয়ই এখন উঠে আসছে সামনে। এই দু’জনকে নিয়ে এমন শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ছিল আগেও। তাই জাতীয় দলই নয় দেশের সব ক্রিকেটারকে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন মল্লিক বিসিবির পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই পরিষ্কার যেই অন্যায় করবে সেটা খুব অল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত করে আমরা তাকে শাস্তি দিব। প্লেয়াররাও কিন্তু অনেক রেক্টিফাই হয়েছে। আপনি যদি দেখেন আগের তুলনায় অনেক বেশি শৃঙ্খলাপরায়ণ হয়েছে তারা। দুই একটি ইনসিডেন্স হবেই। তাহলে আমরা অ্যাকশন নিচ্ছি কিনা এবং সেই খেলোয়াড় রেক্টিফাই করছে কিনা এটা গুরুত্বপূর্ণ। দু’জনের সঙ্গেই ইতিমধ্যে আমাদের অ্যান্টি করাপশন, সিইও বসেছেন। তারা স্বীকারও করেছে। আমার ধারণা ভবিষ্যতে এই কাজ তারা আর করবে না। আমাদের আর সব যে খেলোয়াড় আছে তারাও এমন কিছু করবে না যেটা আমাদের সবার জন্য অসম্মানের হয়।’
বিপিএলেই নয়, সব জায়গাতেই দল জিতলে পার্টির অয়োজন করা হয়। এই সব পার্টির বেশির ভাগই হয় রাতে। তাই এ সব পার্টিতে ক্রিকেটাররা শৃঙ্খলা ভঙ্গের কিছু করলে তা প্রতিরোধ করাও কঠিন। তবে এই জন্য বিসিবি সজাগ আছে বলে জানিয়েছেন মল্লিক। তিনি বলেন, পার্টি কালচারটা কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটকে ঘিরে সব সময়ই, সব দেশেই বিদ্যমান। বাংলাদেশেও একটা ম্যাচ শেষ হয় রাত ১০টায়। টিম হোটেলে যেতে যেতে ১২টা। কেউ জিতলে ১২টার পর সেলিব্রেশন করে, কেউ হারলেও খেলোয়াড়দের চাঙ্গা রাখতে সেলিব্রেশন করে। পার্টি বন্ধ বা পার্টির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব নেই আমার। সেটা যেন উচ্ছৃঙ্খল না হয় বা আমাদের কোনো খেলোয়াড় উচ্ছৃঙ্খল কাজের সঙ্গে জড়িত না হয় তার জন্য প্রতিটা টিম হোটেলে আমাদের অ্যান্টি করাপশন অ্যান্ড ইনটেলিজেন্স ইউনিট আছে।