প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির সঙ্গে সৌদি রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ এইচ এম আল মোতাইরির সৌজন্য সাক্ষাতে ভিসা ট্রেডিংয়ের বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। বলা হয়, ভিসা ট্রেডিংয়ের ফলে সৌদি যেতে বেশি খরচ হয়। এর সঙ্গে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রসঙ্গটিও আলোচনায় স্থান পায়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনে মন্ত্রীর কক্ষে এই সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাতে সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ এবং সাম্প্রতিক ভিসা ইস্যু বিলম্বসহ অন্যান্য বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মন্ত্রীর আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসে ভিসা ইস্যু বিলম্ব ও ভিসা ট্রেডিং বিষয়টি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় বলা হয়, বাংলাদেশস্থ সৌদি দূতাবাসে আরো জনবল বৃদ্ধি করে দ্রুত ভিসা ইস্যুকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সাক্ষাতে যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি ভিসা ট্রেডিংয়ের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়। বলা হয়, ভিসা ট্রেডিং পুরোপুরি বন্ধ হলে সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ে কর্মীরা সৌদি আরবে যেতে পারবেন। এছাড়াও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বিদেশগামীদের ভোগান্তি ও গামকার বিলম্বের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে সাক্ষাতে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত জানান, খুব শিগগিরই তারা গামকার সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেবে। সাক্ষাতে মন্ত্রী বলেন, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সবসময় ভালো ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি বাংলাদেশ থেকে সব সেক্টরে কর্মী নেয়া শুরু হওয়ায় এবং দক্ষ ও আধাদক্ষ কর্মী নেয়ার জন্য সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ দক্ষ কর্মী নেয়ার জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। সৌজন্য সাক্ষাতে আরো উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামছুন নাহার, অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আজহারুল হক, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস, এনডিসি, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. বদরুল আরেফিন, যুগ্ম সচিব মো. মোশাররফ হোসেন, মন্ত্রীর একান্ত সচিব মু. মোহসিন চৌধুরী এবং সৌদি আরবের চিফ অফ কনস্যুলেট ডিভিশনের কাউন্সিলর মি. খালিদ বকস্।
এর আগে মন্ত্রী সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধীন ডিপ্লোম্যাসি ট্রেনিং প্রোগ্রামের (ডিটিপি) নির্বাহী পরিচালক প্যাট্টিক আর্লের সঙ্গে এক সাক্ষাতে মিলিত হন। সাক্ষাৎকালে মন্ত্রী প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্য অভিবাসী বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, দরিদ্র মানুষগুলো ভাগ্য বদলানোর আশায় বিদেশে কাজ করতে যান। কাজেই তাদের অধিকারগুলো যেন লঙ্ঘন না হয় সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যসহ সর্বত্র আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ করা উচিত। পরে মন্ত্রী ডিটিপি’র কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী এ সময় বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে যায় তারা বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ। বিদেশে অনেক সময়েই তাদের সঙ্গে যথাযথ আচরণ করা হয় না। এ ব্যাপারে সবার কাজ করা উচিত। প্যাট্টিক আর্লে বলেন, শান্তিতে নোবেল জয়ী হোসে র্যা মনস হর্তা ১৯৮৯ সালে ডিটিপি প্রতিষ্ঠানটি করেন। ডিটিপি মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিকদের মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বাংলাদেশেও এ কাজটি হচ্ছে।জাতিসংঘের আইন, শ্রম আইন এগুলো কিভাবে প্রবাসীদের অধিকার রক্ষা করতে পারে, ডিটিপি প্রশিক্ষণার্থীদের সেটা শেখাচ্ছে। এ সময় উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রামরু’র সমন্বয়ক সি আর আবরার। তিনি বলেন, দেশে হোক বিদেশে হোক প্রবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।