বাহুবলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক কিশোরী ধর্ষিতাকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে শাহজালাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে চলতি বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারায় ওই শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে। চলতি বছরের ১৯ জুলাই ভোরে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ওই কিশোরীকে অপহরণ করে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। এ ব্যাপারে ধর্ষিতার পিতা বাহুবল মডেল থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ দুই অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার ও আদালতে প্রতিবেদন প্রদান করে। কিন্তু ধর্ষক পলাতক রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের চিচিরকোট গ্রামের হরিধন চক্রবর্তীর মেয়ে শান্তা চক্রবর্তী নিকটবর্তী নতুনবাজার শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণীতে পড়ালেখা করতো। গরীব শ্রমজীবী পরিবারের ওই ছাত্রীদের বাড়িতে পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে প্রায়ই আসা-যাওয়া করতো পার্শ্ববর্তী হিমারগাঁও গ্রামের সিদ্দিক আলীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম (২৩)। সে ওই ছাত্রীকে ঢাকায় নিয়ে ভাল বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখায়। গত ১৯ জুলাই ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ওই ছাত্রীকে ফুসলিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসে ফাতেমা বেগম। পরে তাকে যশপাল গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে জাহির হোসেন (৩৫) ও একই গ্রামের আজগর আলীর ছেলে সামছুদ্দিন প্রকাশ সামছু ও সমশের উদ্দিনের (৩২) হাতে তুলে দেয়। তাঁরা সারা দিন একটি পিকআপ ভ্যানে করে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজারে সানি ফার্নিচার মাট নামক দোকানে রাত্রী যাপন করে। সেখানে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। পরদিন ওই ছাত্রীকে অন্যত্র পাচারের চেষ্টাকালে বাজারের পাহারাদারের হাতে আটক হয়।
ধর্ষিতার বাবা জানান, ঘটনার পর আমি আমার মেয়েকে বিদ্যালয়ে প্রেরণ করতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ূব আলী আপাতত বিদ্যালয়ে না পাঠানোর পরামর্শ দেন। পরে মুরুব্বীসহ স্থানীয় লোকজন এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করলে প্রধান শিক্ষক একই পরামর্শ দেন। প্রধান শিক্ষকের পরামর্শ মতে আমি আমার মেয়েকে ঘটনার পর থেকে প্রাইভেট শিক্ষকের মাধ্যমে বাড়িতেই লেখাপড়া করিয়েছি। বার্ষিক পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসায় আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে জানান, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি আমার মেয়েকে ছাত্রপত্র দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দিতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে স্থানীয় মুরুব্বী অরুন চক্রবর্তী জানান, ধর্ষিতাকে স্কুলে লেখাপড়া ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার জন্য আমি স্থানীয় মুরুব্বীদের নিয়ে বিদ্যালয়ে যোগযোগ করেছি। প্রধান শিক্ষক আমাদের বলেছেন, ধর্ষিতা ছাত্রীটিকে বিদ্যালয়ে যেতে দেয়া হলে এর প্রভাব অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের উপর পড়বে। তাই বৃহত্তর স্বার্থে তাকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী মোবাইল ফোনে জানান, ঘটনার পরপরই বিদ্যালয়ের বৃহত্তরে স্বার্থে ম্যানেজিং কমিটি ওই ছাত্রীটিকে ছাত্রপত্র দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই তাকে ২৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া যায়নি।