1. ccadminrafi@gmail.com : Writer Admin : Writer Admin
  2. 123junayedahmed@gmail.com : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর
  3. swadesh.tv24@gmail.com : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম
  4. swadeshnews24@gmail.com : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর: : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর:
  5. hamim_ovi@gmail.com : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  6. skhshadi@gmail.com : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান: : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান:
  7. srahmanbd@gmail.com : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  8. sumaiyaislamtisha19@gmail.com : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান
রোহিঙ্গাদের মুখে গণহত্যার বিভীষিকা - Swadeshnews24.com
শিরোনাম
কক্সবাজার জেলায় কত রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট সিনেমা হলে দেওয়া হচ্ছে টিকিটের সঙ্গে ফ্রি বিরিয়ানি ঢাকায় বড় জমায়েত করতে চায় বিএনপি ১৫ বছর পর নতুন গানে জেনস সুমন যশোরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেলের জয়লাভ গোবিন্দগঞ্জে অটোচালক দুলা হত্যার মূল আসামি আটক চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু পলাশবাড়ীতে উপজেলা নির্বাচনে অনলাইন মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেই বিএনপি বলে বিরোধীদল দমন’ এবার বুবলী-শাকিবের ‘কোয়ালিটি টাইম’ নিয়ে মুখ খুললেন অপু বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মতো: সিপিডির রেহমান সোবহান চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে যা বললেন নিপুণ তালিকা দিতে না পারলে ফখরুলকে ক্ষমা চাইতে বললেন ওবায়দুল কাদের প্রকাশিত হলো দিদারের ‘বৈশাখ এলো রে এলো বৈশাখ’

রোহিঙ্গাদের মুখে গণহত্যার বিভীষিকা

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬
  • ২৪২ Time View

44548_f1নাফ নদী যদি কথা বলতে পারতো, তাহলে কোন বিভীষিকার গল্প সে আগে বলতো? অপ্রশস্ত এই নদীপথ মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্ত নির্দেশ করে। এর পশ্চিম তীরে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ। আর পূর্বে বার্মার আরাকান রাজ্য। এটা রাখাইন নামেও পরিচিত। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আবাস এখানে। মুসলিম সংখ্যালঘু এ গোষ্ঠীটি বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রহীন, বন্ধুহীন আর বিস্মৃত। কিন্তু নদীটি যদি তাদের গল্প মনে রাখতে পারতো, তাহলে হয়তো কথা বলে উঠতো। উদাহরণস্বরূপ, নভেম্বরের শেষদিকে এক রাত্রে ২৫ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারী আরাফা নিজের ৫ সন্তান নিয়ে এ নদীর পানিতে ভেলা ভাসায়। আগে তার সন্তান ছিল ছয়জন। নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে অস্থায়ী একটি শরণার্থী শিবিরে কুঁড়েঘরের দরজার মুখে বসে কথা বলছিলেন আরাফা। চারপাশে তার অল্পবয়সী মেয়ে আর এক ছেলে। উৎসুক আর চঞ্চল ছেলেপুলের এক দল। কিছুটা লাজুকও বটে। কখনো মায়ের পেছনে গিয়ে লুকাচ্ছে। পর মুহূর্তে ঘরের ভেতর-বাইরে দৌড়াচ্ছে। তার আরেক ছেলের ভাগ্যে কী জুটেছিল, সে কথা বলছিলেন আরাফা। ছেলেটির বয়স ছিল ৮। ২২শে নভেম্বরের আশপাশে কোনো একদিন তাদের গ্রামে হানা দেয় বার্মিজ নিরাপত্তা বাহিনী। দেশটিতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখা হয় রোহিঙ্গাদের। তাদের নাগরিকত্বের অধিকার প্রত্যাখ্যান করেছে রাষ্ট্র। দীর্ঘদিন ধরে এ গোষ্ঠীটি বৌদ্ধ জঙ্গি আর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী উভয়ের হাতেই ভয়ভীতি, দমন-পীড়ন ও সহিংসতার শিকার। সর্বশেষ বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক সংঘাত ঘটে ২০১২ সালে। সেবার আরাকানি বৌদ্ধ আর রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যকার দ্বন্দ্বে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল কমপক্ষে ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ। মানবাধিকার কর্মীরা নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল যে, তারা সহিসংতা ছড়িয়ে যাওয়ার সময় নির্বিকার দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে অথবা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে।
আরাফা বললেন, এ দফায় আর্মির আগ্রাসন ভিন্নরকম অনুভূত হয়েছে। এবারে রোহিঙ্গাদের শাস্তি দেয়ার জন্য নিরাপত্তা সদস্যদের আরো বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, আরো বেশি উদ্বুদ্ধ বলে মনে হয়েছে। তাদের পছন্দের অস্ত্র ছিল আগুন। আরাফা জানান, আর্মি তাদের গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। তার বাড়িতে যখন আগুন লাগে তখন ৬ সন্তানকে নিয়ে কোনোমতে পালাতে সক্ষম হন তিনি। পালাতে গিয়ে বার্মিজ এক সেনার সামনে পড়ে যান। ৮ বছরের ছেলেটিকে পাকড়ে ধরে তার ভাইবোনের কাছ থেকে আলাদা করে জলন্ত অগ্নিকাণ্ডে ছুড়ে ফেলে ওই সেনা। এই হট্টগোলের মধ্যে আরাফা তার স্বামীকে হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু পেছনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। স্বামীকে পেছনে ফেলেই এগিয়ে যেতে হয় তাকে। পুড়ে কয়লা হওয়া ছেলের লাশ ফেলে রেখেই চলতে হয় তাকে। পালাতে থাকা অবস্থাতেই শোক আর বিলাপ করতে হয় তাকে। টাইম ম্যাগাজিনকে আরাফা বলেন, ‘আমার অপর সন্তানদের বাঁচানোটাই ছিল মুখ্য। আমাদের বার্মা থেকে পালানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। ওরা সবকিছু পুড়িয়ে দিয়েছে।’
নাফ নদীর বার্মিজ অংশে জঙ্গলের মধ্যে দুদিন লুকিয়ে ছিলেন আরাফা ও তার সন্তানেরা। সেনাদের চোখ এড়াতে ঘাপটি মেরে পড়ে থেকেছেন। পরে জরাজীর্ণ এক নৌকায় উঠে পড়েন, যা তাদের নাফ নদীর অপর পাশে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যায়।
তারা একা নন। গত দুই মাসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া আনুমানিক ২১ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে আরাফার পরিবার একটি। বার্মিজ বাহিনীর বর্বর অভিযান থেকে তারা পালিয়ে এসেছেন। শরণার্থীদের বিবরণ, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সংগৃহীত উপগ্রহ থেকে ধারণ করা চিত্র আর আরাকানের ভেতর থেকে ফাঁস হওয়া ছবি ও ভিডিও সাক্ষ্য দিচ্ছে, ১০ লক্ষাধিক মুসলিম সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে বীভৎস রক্তাক্ত অভিযান চালানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক সমস্যা শুরু হয়েছে অক্টোবরের শুরুতে। পুলিশ বলছে, তিনটি সীমান্ত চৌকিতে ইসলামপন্থি জঙ্গিরা হামলা চালায়। এতে ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হয়। সরকার বলছে, হামলাকারীরা আকামুল মুজাহিদিন গ্রুপের সদস্য। বার্মিজ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাদের ‘রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন’ সংশ্লিষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়। এই ‘জঙ্গি’ গোষ্ঠীটি অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হতো। আর এসব দাবির একমাত্র প্রমাণ হলো সরকারের ভাষ্য।
এরপরে যা ঘটেছে তা বার্মিজ কর্তৃপক্ষের ভাষ্যে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এটাকে ‘সমষ্টিগতভাবে শাস্তি প্রদানের’ অভিযান আখ্যা দিয়েছে: গোটা একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিহিংসার নিষ্ঠুর অভিযান। রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে অগ্নিসংযোগ ছাড়াও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ এবং মুসলিমদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ এসেছে। রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে অগ্নিসংযোগ করতে ব্যবহার করা হয়েছে হেলিকপ্টার গানশিপ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রকাশিত উপগ্রহ চিত্র থেকে দেখা গেছে, ১০-১৮ই নভেম্বরের মধ্যে ৫টি ভিন্ন রোহিঙ্গা গ্রামের ৮০০টিরও বেশি বাড়ি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। এর আগে ২২শে অক্টোবর থেকে ১০ই নভেম্বর পর্যন্ত ধারণকৃত উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছিল ৪০০ বাড়ি ধ্বংস হওয়ার প্রমাণ। সংস্থাটি বলছে, এলাকাটি ঘন বনাঞ্চলঘেরা হওয়ায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘরের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।
সেখানকার প্রকৃত চিত্র যাচাই করা অসম্ভব। কেননা, বার্মা আক্রান্ত এলাকায় প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে জাতিসংঘের মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ের ইয়াংঘি লি বলছেন, যে খবর আসছে তাতে ইঙ্গিত মিলছে সেখানকার পরিস্থিতি ‘আমরা যেটাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে একমত, তার খুব কাছাকাছি।’
টাইমকে তিনি বলেন, ‘আমি দেশটির ভেতর এবং আশপাশের স্থান থেকেও খবর পাচ্ছি। তাতে মনে হচ্ছে, সরকার যেভাবে পরিস্থিতির বর্ণনা করছে বাস্তবতা তা নয়। অত্যন্ত নৃশংস আর নির্মম ছবি আর ভিডিও ক্লিপ আমরা দেখেছি।’ স্বতন্ত্রভাবে এসব ফুটেজ যাচাই করা সম্ভব না হলেও তিনি বলেন, ‘আমরা ধর্ষণ আর যৌন সহিংসতার খবর পাচ্ছি। এমনকি ছোট্ট শিশুদের পুড়িয়ে দেয়া মরদেহ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। কতজনকে হত্যা করা হয়েছে সে সংখ্যা যাচাই করতে পারছি না আমরা।’ নভেম্বরের শুরুর দিকে মিয়ানমার সরকারের তত্ত্বাবধানে আক্রান্ত এলাকায় বিদেশি কূটনীতিক ও জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের এক সফর নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে লি বলেন, ‘এ সফর নিয়ে কারোরই সন্তুষ্ট হওয়া উচিত নয়। এটা ছিল একটা ‘গাইডেড টুর’। নিরাপত্তা সদস্যদের ভারি উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও মানুষজন বেরিয়ে এসে প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে। আর পরে আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার খবরও পেয়েছি। খুঁজে বের করে এদের ওপর নিপীড়ন চালানো হয়েছে।’
৯ই ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ ১৪টি কূটনৈতিক মিশন মিয়ানমার সরকারের প্রতি উত্তর আরাকানে মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে ‘পূর্ণাঙ্গ এবং অবাধ প্রবেশাধিকার’ দেয়ার আহ্বান জানায়। তারা আক্রান্ত এলাকায় হাজার হাজার মানুষের জরুরি ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজনের কথা তুলে ধরেন। এদের মধ্যে রয়েছে মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা। অনেকে প্রায় দুই মাস ধরে অনাহারে রয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের জবাবে মিয়ানমার আনুষ্ঠানিকভাবে সবকিছু প্রত্যাখ্যান করে আসছে। অনেক বার্মিজ রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে নিচু ধারণা পোষণ করেন তারই প্রতিফলন এই উদাসীন অস্বীকৃতি। বার্মিজ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে বিবিসির করা এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় এক রাজনীতিক এবং অক্টোবরে সীমান্ত চৌকিতে হামলার ঘটনায় সরকারি তদন্তের চেয়ারম্যান অং উইন ক্যামেরার সামনে স্বাভাবিক চেহারাই ধরে রাখতে পারলেন না। নির্লজ্জ হাসি নিয়ে তিনি বললেন, সেনারা রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণই করবে না। কেননা, ‘তারা অত্যন্ত নোংরা। তাদের জীবনধারার মান অত্যন্ত নিচু আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নয়।’ অং এও বলেন, ‘রোহিঙ্গা নারীরা আকর্ষণীয় নয়। কাজেই স্থানীয় বৌদ্ধ পুরুষ বা সেনা কেউই তাদের ওপর আগ্রহী নয়।’
এদিকে, দেশের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তি সিনিয়র জেনারেল মিন অং হলেইং রোহিঙ্গাদের দুর্দশার জন্য তাদেরই দুষলেন। তাদের ‘বেঙ্গলি’ (এ শব্দ দিয়ে বোঝানো হয় রোহিঙ্গারা নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশের) আখ্যা দিয়ে ৬ই ডিসেম্বর নিজের ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘উত্তর রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত বেঙ্গলি সমস্যার কারণ হলো বেঙ্গলিরা মিয়ানমারের বিদ্যমান আইন অনুসরণ করতে ব্যর্থ।’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে বার্মিজ কর্মকর্তারা তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিলেও ওই পোস্টে আগে ভাগেই যেন তদন্তের ফল জানান দেয়া হলো; তিনি লিখেছেন, ‘মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী কখনই অবৈধ হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মতো কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায়নি।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্ত কর্মকর্তা লি বললেন, ‘মনে হচ্ছে বার্মিজ কর্তৃপক্ষের তরফে সেই একই পুরনো গল্প যে, এই মানুষেরা নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে।
সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে সম্প্রতি সফর করা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক গবেষক  পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান যে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার প্রশ্নে পালিয়ে আসা সব রোহিঙ্গার ভাষ্য অভিন্ন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও এমন কাউকে পাইনি যে বলেছে সেনাবাহিনী ছাড়া অন্য কেউ আগুন দিয়েছে।’
চলমান এই সংকটের মধ্যে একটি কণ্ঠ বহুলাংশে নীরব। তিনি হলেন- শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সূচি। ২০১৫ সালের নভেম্বরে তার ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেটি নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করে। ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অর্ধ শতকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশটিতে সামরিক স্বৈরশাসন থেকে বেসামরিক নেতৃত্বাধীন প্রশাসনে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। সামরিক বাহিনী-প্রণীত নতুন এক সংবিধান সূচির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আর জেনারেলরা দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন। কিন্তু দেশের কার্যত নেতা তিনিই। প্রধানমন্ত্রীর মতো একটি পদে বার্মার সেস্ট কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
মিয়ানমারের স্বৈরশাসন চলাকালে সামরিক বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করতে সূচির আপসহীন দৃঢ়সংকল্প, ব্যক্তিগতভাবে নানা ত্যাগ স্বীকার এবং দেশে গণতন্ত্র আনতে বছরের পর ধরে রাজনৈতিক বন্দিদশা ভোগ করার ফলে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের আইকনে রূপান্তর হয়েছে তার ভাবমূর্তি। কিন্তু উত্তর আরাকান যখন জ্বলছে, তখন বহির্বিশ্বকে কম সমালোচনামূলক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নিরস মন্তব্য করেছেন তিনি। তার ভাষ্য মতে, প্রয়োজন হলো ওই অঞ্চলের জাতিগত বিভক্তি নিয়ে আরো ভালো ধ্যান-ধারণা থাকা। এ মাসের শুরুতে সিঙ্গাপুরের চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পরিস্থিতি উস্কে দেয়ার অভিযোগ তুলে উল্টো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই দুষছেন তিনি।
টাইম ম্যাগাজিনে কন্ট্রিবিউটর লেখক এবং মিয়ানমারে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ফ্রান্সিস ওয়েইড বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে সমালোচনা করার ক্ষেত্রে স্পষ্টতই তিনি অনিচ্ছুক। কেননা, তার মধ্যে ভয় রয়েছে যেকোনো ধরনের বিরোধিতা তদের কাছ থেকে আরো বলপ্রয়োগ উস্কে দিতে পারে।’ মিয়ানমারে মুসলিম-বিরোধী সহিংসতা এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিয়ে ফ্রান্সিসের লেখা একটি বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। ফ্রান্সিস আরো বলেন, ‘সামরিক বাহিনী যদি মনে করে যে তারা বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হারাচ্ছে কারণ সরকার তাদের সমালোচনা করছে এবং তাদের ওপর লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছে তাহলে তারা আরো শ্রেষ্ঠত্ব আরোপের চেষ্টা করতে পারে।’
বেসামরিক সরকার এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যকার এই পরিস্থিতিতে সূচির অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনা উস্কে দিয়েছে। মি. লি বলেন, ‘আমার মনে হয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বার্মাকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখছে। নির্বাচিত বেসামরিক একটি সরকার, ক্ষমতায় আসার পর এক বছরও হয়নি, তাদের কিছুটা সময় ও সুযোগ দেয়া যাক। এমন একটা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।’ কিন্তু সময় যত যাচ্ছে এই দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। লি বলেন, ‘কৌশলী রাষ্ট্রপরিচালনায় সূচির আরো সময় লাগতে পারে। কিন্তু তার সময় মাত্র ৫ বছর (নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ) যার এক বছর ইতিমধ্যেই চলে যাচ্ছে।’
মি. ওয়েইড বলেন, ‘বেসামরিক সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্কটা জটিল- ঠিক আছে। কিন্তু এ মুহূর্তে বেসামরিক সরকার সামরিক বাহিনীকে তাদের মর্জি মতো চলার সুযোগ করে দিচ্ছে।’
বার্মায় মুসলিমদের দিয়ে দীর্ঘদিনের হতাশাব্যঞ্জক অবস্থানের মধ্যে সূচির বর্তমান অবস্থান অতি সাম্প্রতিক মাত্র। নভেম্বরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৩০ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শরণার্থী ইউনূস বলেন, ‘আমাদের রক্ষায় তিনি কিছুই করছেন না। আমরা ভেবেছিলাম পরিবর্তন হবে। কিন্তু তিনিও আর সবার মতোই।’
এর পরিণতি হতে পারে সুদূরপ্রসারী। ওয়েইড বলেন, ‘ঐতিহ্যগতভাবে সশস্ত্র সংঘাতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সমর্থন দেখা গেছে খুবই কম। ৭০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ৯০-এর দশকের শুরু পর্যন্ত যখন কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী সক্রিয় ছিল তখনো তাদের জন্য পর্যাপ্ত সমর্থন ছিল না। ফলে তারা দ্রুতই মারা গেছে।’ ওয়েইড ব্যাখ্যা করে বললেন, বার্মিজ সরকারকে উস্কে দেয়ার বিষয়ে সতর্ক রোহিঙ্গারা: ‘অনেক আগেই এটা তাদের ভেতরে ঢুকে গেছে যে, কোনো প্রকার সশস্ত্র আন্দোলনের অর্থ হবে গণআত্মহত্যার শামিল।’
তবে, উত্তর আরাকানে অবনতিক্রম পরিস্থিতি আরো সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক ড্যানিয়েল রাসেল। ৩রা ডিসেম্বর বার্তা সংস্থা এপিকে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি জঙ্গিবাদ উস্কে দিতে পারে যা ইতিমধ্যে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশগুলোকে ভুগিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের জন্য সংকট বার্মিজ অংশেই শেষ হয় না। ইউসুফ, আরাফা এবং তাদের পরিবার বার্মিজ ও বাংলাদেশি বাহিনীর চোখ এড়িয়ে বাংলাদেশের মাটিতে পালাতে সক্ষম হয়েছেন বটে। তবে, বার্মা সংলগ্ন সীমান্তে টহলদারি জোরদার করেছে বাংলাদেশ। ফলে ইতিমধ্যে নিপীড়িত এক জনগোষ্ঠী অতিরিক্ত চাপে পড়েছে। নদীতে নৌকা ডুবে যাওয়ার পর অনেক শরণার্থী এখনো নিখোঁজ।
রোহিঙ্গারা এবারই প্রথম নাফ নদীর এপারে আশ্রয় খুঁজছে তা নয়। বিগত দশকগুলোতে নিজেদের ভূখণ্ডে সহিংসতা থেকে পালিয়ে ৫ লক্ষাধিক অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে তাদের জীবন খুঁজে নিয়েছে। ৩০ সহস্রাধিক নিবন্ধিত শরণার্থী সীমান্তবর্তী ক্যাম্পে বাস করেন। বাংলাদেশ এখন বলছে, আমরা আর বেশি মানুষকে আশ্রয় দিতে পারবো না।
বিজিবি’র ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল কর্নেল এম. এম. আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমার দেশ একটি বাড়ি। যদি সব মানুষ আমার বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করে তাহলে কি ঘটবে? আমি সবাইকে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারি না।’
প্রায় এক দশক আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এক রোহিঙ্গা শরণার্থী দুদু মিয়া বলেন, ‘বিশ্বকে উপলব্ধি করতে হবে যে, আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।’ তার জনগোষ্ঠীর কোনো দেশ নেই। বার্মিজ সেনারা তাদের পালানো আটকাতে চেষ্টা করছে। বাংলাদেশি বাহিনী তাদের পুশব্যাক করছে। তাদের থাকার বলতে আছে ওই নাফ নদী। আর নাফ নদী এখন পর্যন্ত নীরব।

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর আগ্রাসনে বাংলাদেশে গত দুই মাসে আনুমানিক ২১ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা এই অভিযানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সমতুল্য বলে আখ্যা দিয়েছেন। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে করা টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন, যেখানে বিভীষিকার আসল চিত্রের ছিটেফোঁটা উঠে আসছে মাত্র।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 SwadeshNews24
Site Customized By NewsTech.Com