হঠাৎ আগুন। ঘনকালো ধোঁয়া। কিছুক্ষণ পর পর বিস্ফোরণ। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো মার্কেটে। সোমবার রাত পৌনে দু’টার দিকে আগুনের সূত্রপাত। পৌনে এক ঘণ্টার মধ্যেই ধসে পড়ে চারতলা ভবন। ধ্বংসস্তূপের নিচে দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা ধরে পুড়ে ছাই হলো গুলশান-১ এর ডিএনসিসি কাঁচাবাজার মার্কেটের ২৯৫টি দোকান। পুড়েছে সংলগ্ন ডিএনসিসি পাকা মার্কেটের ২৩৪ দোকানের অনেকগুলোও।
এতে পুড়েছে দু’সহস্রাধিক ব্যবসায়ী-কর্মচারীর জীবিকা, সহায়-সম্বল। পুড়েছে তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্ন। একদিনেই নিঃস্ব হয়েছেন অনেক কোটিপতি ব্যবসায়ী। আগুনে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েকশ’ কোটি টাকা ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে লেগে গেছে দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা। তবে রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। ধ্বংসস্তূপের নিচে জ্বলছিল আগুন। আগুনের সূত্রপাতের কারণ জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অন্তত ২৩টি ইউনিট নির্বাপণে অংশ নিয়েছে বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু একই সময়ে ৩ থেকে ৬টির বেশি ইউনিটকে কাজ করতে দেখা যায়নি। তবে আগুন ছড়ানো ও পাশের মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ার জন্য দমকল বাহিনীর অবহেলা ও যথাযথ তৎপরতার অভাবকে দায়ী করে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী পাশের গুলশান শপিং সেন্টারের নিরাপত্তারক্ষী মো. দুলাল মিয়া মানবজমিনকে বলেন, আমি ঘটনাস্থলের বেশ কয়েক গজ দূরে ছিলাম। কাছেই একটি ঝুপরি দোকানে বসে ২ থেকে ৩ জন চা খাচ্ছিল। রাত পৌনে দু’টার দিকে তারা আগুন আগুন বলে চিৎকার করে উঠলো। কাছে গিয়েই দেখি মার্কেটের ভেতরে একটি দোকানে আগুন জ্বলছে। ঘনকালো ধোঁয়া বাইরে আসছে। কিছুক্ষণ পর ওই আগুনের লেলিহান শিখা বাইরেও চলে আসে। কিছুক্ষণ পর পর বিস্ফোরণের শব্দ হচ্ছিল। একপর্যায়ে পুরো মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তখনই আমি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বলার জন্য আমাদের মার্কেটের অপর নিরাপত্তা রক্ষী শহীদকে পাশের ডেসকো (ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড) অফিসের পাঠাই।
তিনি আরো বলেন, ডেসকো কর্মকর্তারা ওই এলাকায় আগুন লাগার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। তারপর তারাই ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেন। এর আধঘণ্টা পর দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। প্রথম আগুন দেখার বিষয়ে তিনি বলেন, কাঁচাবাজার মার্কেটের পূর্ব-দক্ষিণ কর্ণারের দু-তিনটির পর একটি দোকানে প্রথম আগুন দেখা গেলেও কিভাবে আগুন লেগেছে তা বুঝতে পারিনি।
কাঁচাবাজার মার্কেটের ধসে পড়া ভবনের আগুনের দিকে চেয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কাঁদছিলেন মো. মাহবুবুর রহমান। তার কয়টা দোকান আছে জানতে চাইতেই বিলাপ জুড়ে দেন তিনি। বলেন, ভাই আমার ৫টা দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এর মধ্যে ২টা করে ক্রোকারিজ ও রেক্সিন এবং অপর একটি পাপোশের দোকান। আমরা ৪ ভাই ও ১৭ জন কর্মচারী ওই দোকানগুলো চালাতাম। ১৭ বছর ধরে আমি এখানে ব্যবসা করছি। গত ১০ বছর আগে ময়মনসিংহের জমিজমা বিক্রি করে সে টাকা এখানে ইনভেস্ট করেছি। দোকানে আমার অন্তত ২ কোটি টাকার মালামাল ছিল। সব সহায় সম্বল দিয়ে আমি একে একে পাঁচটা দোকানই এই মার্কেটে খুলেছি। বাইরে আর কোথাও কিছু করিনি। এখানে আমার জীবন-যৌবন সবকিছু দিয়েছি। গ্রামে একটা বাড়ি পর্যন্ত করিনি। আমার সব শেষ। মুহূর্তেই আমি ফকির হয়ে গেলাম। তার কান্নার সময় চোখের পানিতে কপোল ভিজে যাচ্ছিল পাশে দাঁড়ানো তার অপর ভাই ও দু’কর্মচারীর। স্বামী ও চাচার দোকান পুড়ে যাওয়ায় অঝোরে কাঁদতে দেখা গেছে শারমিন সুলতানা এবং চাঁদনি আকতারকেও।
ডিএনসিসি দোকান মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এম খায়রুল আলম কান্না জুড়ে দিয়ে বলেন, আমার দুটি দোকানে কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব, দেউলিয়া। ব্যাংকের লাখ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। এ টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো? কেন আমাদের এ ক্ষতি করা হয়েছে? ফায়ার সার্ভিস চেষ্টা করলে মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতো।
তিনি আরো বলেন, আড়াইটার দিকে এসে দেখি ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ি আসলেও পানি ছিটানো হচ্ছিল না। তাদেরকে আরো দুটি গাড়ি দেয়ার অনুরোধ করলেও তখন দেয়নি। তাদের হাতে কোনো আলোও ছিল না। পুরো ভবন ছিল অন্ধকার। ফলে এক পর্যায়ে আগুন কাঁচাবাজার থেকেই আমাদের মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে।
সরজমিন পরিদর্শন ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুলশান-১ এর ডিএনসিসি কাঁচাবাজার মার্কেটটি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। একতলা ভবন হিসেবেই কাঁচাবাজার হিসেবে এর যাত্রা শুরু। পরে ফাউন্ডেশন ছাড়াই ভবনটি দ্বিতল করা হয়। তারও পরে ভবনটিতে তৃতীয় তলার ছাদ উঠে। ৩৪ বছরের পুরোনো ভবনটির কিছু অংশে আবার চতুর্থ তলার ছাদও উঠে। আর পাশের পাকা মার্কেট নামে পরিচিত সংলগ্ন ভবনটি পাকিস্তান আমলে তৈরি। কাঁচাবাজার মার্কেটে প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ২৯৫টি দোকান ছিল। আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরই তা পুরো কাঁচাবাজার মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে। ওই মার্কেটের দোকানগুলো ছিল বিভিন্ন ধরনের। এর মধ্যে রয়েছে কাঁচাবাজার, ফার্নিচার, শিশুখাদ্য, সিরামিক, খেলনা, পাপোস, কাপড়-চোপড়, মুদি, থান কাপড়, কেমিক্যাল, কসমেটিকস, গ্লাস, জুয়েলারি, কাচ, খেলনা, মধ্যে দাহ্য জিনিসপত্রে তা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক দাহ্য পদার্থ ভর্তি পাত্র বিস্ফোরণ হতে থাকে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে আগুন। আর পাশের পাকা মার্কেটের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এই মার্কেটের বৈদ্যুতিকসহ বিভিন্ন ক্যাবল। এসব ক্যাবল দিয়ে দ্রুত আগুন ওই ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে। আর ওই ভবনের সিলিংও দাহ্য হওয়ায় তা ওই মার্কেটে আগুন ও ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়াকে তরান্বিত করে। আগুন লাগার অল্প সময়ের মধ্যে কাঁচাবাজার মার্কেটটি ধসে পড়ে। পুরো ভবনটির চারটি ছাদই একটি অপর টির সঙ্গে লেগে গেছে। ভেঙে পড়া ছাদগুলোর মধ্যে ছিল ভেঙেচুরে যাওয়া জিনিসপত্র। তাতে সারাদিন ধরে আগুন জ্বলতে থাকে। দমকল কর্মীরা আগুন নির্বাপণে অংশ নিলেও একটির উপর অপর ছাদ এসে পড়ায় ভেতরে পানি পৌঁছাতে পারছিল না। কিছু ফাঁক-ফোকর দিয়ে বারবার পানি নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। তবে বাইরে থেকে পানি ছুড়ে প্রায় স্থানে ছিটানোর সুযোগও ছিল না। বাইরে থেকে ভেতরে জ্বলতে থাকা আগুনও খুব একটা দেখার সুযোগ ছিল না। আগুন লাগার পর ভবন ধসে পড়ায় কাঁচাবাজার মার্কেট থেকে কোনো জিনিসপত্র উদ্ধার করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।
দোকানের কাঠামো ও মালামাল ভেঙেচুরে একাকার। অধিকাংশ মালামালই টুকরো টুকরো ও গুঁড়ো হয়ে গেছে। বাইরের দোকানগুলোর কিছু শাকসবজি, প্লাস্টিক, আসবাবপত্র, জিনিসপত্র বাইরে বের হয়ে পড়ছে। সাইনবোর্ডগুলোও ভেঙে চৌচির। এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়েছে ভবনের পিলার ও কলাম। ছাদের বিভিন্ন অংশের রড বেরিয়ে পড়েছে। বিভিন্ন অংশে ভবনের ইট খুলে পড়ে স্তূপে পরিণত হয়ে গেছে।
ধসে পড়া ভবনের ছাদ ধসে পড়ায় এবং দু’পাশ দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার সুযোগ না থাকায় আগুন, তাপ ও ধোঁয়া ক্রমেই পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। ফলে পশ্চিম পাশের সংলগ্ন পাকা মার্কেটে দ্রুত আগুন ও ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া পূর্বপাশের গুলশান শপিং সেন্টারের দিকেও বেশি ধোঁয়া ছড়াতে দেখা গেছে। এদিকে আগুন পাকা মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। এজন্য তারা বারবার দমকল বাহিনীর অবহেলাকে দায়ী করে যাচ্ছিলেন। অন্তত ১৫ ব্যবসায়ীকে অভিযোগ করতে দেখা গেছে যে, দমকম বাহিনীর কর্মীরা প্রথমে এসে আগুন নির্বাপণে কাজ শুরু করতে পারেননি। তাদের গাড়িতে পানি না থাকায় বা পানি আনতে গিয়ে বেশ কয়েক দফায় পানি ছিটানোও বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে রাতে দোকান বন্ধ করে গেলেও আগুন ধরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অধিকাংশ ব্যবসায়ী এই দুর্ঘটনার খবর পান। ওই সময়ের মধ্যেই অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছে। কাঁচাবাজার মার্কেটের মালামাল সরানো না গেলেও এসেই তারা রাত থেকেই ডিএনসিসি পাকা মার্কেটের মালামাল সরাতে শুরু করেন। ওই মার্কেটের ২৩৪টি দোকানের অধিকাংশ ব্যবসায়ীই তাদের মালামাল সরাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে প্রথম দিকে মালামাল সরাতে গিয়ে অনেকের মালামাল হারিয়েও গেছে। ওই মার্কেটের সামনে ও পেছনে ছোট ট্রাক, পিকআপ ও ভ্যানগাড়ি দিয়ে মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পেছনে দরজা ও জানালা এবং গলি ব্যবহার করেও তা সরাতে দেখা গেছে। মই ব্যবহার করে দু’তলার দেয়াল ভেঙেও তা সরানো হয়েছে। তবে দমকল কর্মীরা অনেক দোকানের শাটার কেটে দিলেও মালিক-কর্মচারীরা ধোঁয়ার জন্য ঘেঁষতে না পারায় তা খুলতে পারেননি। কয়েকবার গিয়েও উদ্ধার করতে পারেননি মালামাল।
পাকা মার্কেটের ৩ নম্বর নারী পোশাকের দোকান সূচনার মালিক মো. হাসান বলেন, আমি তিনবার দোকানের কাছে গেছি। শাটারের তালাও খোলা হয়েছে। কিন্তু ধোঁয়ার জন্য কয়েক মিনিটের বেশি অপেক্ষা করা সম্ভব না হওয়ায় কোনো মালামাল উদ্ধার করা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, আমার দোকানের ৭০ লাখ টাকার মালামাল হয়তো পুড়ে গেছে। আমার দোকান পাইকারি হওয়ায় ধসে পড়া মার্কেটের অনেকের কাছে আমার বাকি রয়েছে ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া একটি ব্যাংকের কাছে আমার আরও ২০ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে। আগামী শুক্রবার পণ্য আমদানির জন্য চীনে যাওয়ার কথা থাকলেও পাসপোর্ট ভিসা ও ক্রয় করা ৫ হাজার ডলারও পুড়ে গেছে। একইভাবে অধিকাংশ ব্যবসায়ীই ধার ও ব্যাংক ঋণগ্রস্ত বলে জানিয়েছেন সঙ্গে থাকা আরও ৭ ব্যবসায়ী।
এদিকে আগুন লাগার আধঘণ্টা পর বারিধারা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের একটি ইউনিট প্রথম ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তারপর পৌঁছে তেজগাঁও ইউনিট। এরপর একে একে ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়সহ কুর্মিটোলা, মোহাম্মদপুর, টঙ্গীসহ বেশ কয়েকটি স্টেশনের ২৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নেয়। ট্রেনিং সেন্টারের কর্মীরাও অংশ নেয় আগুন নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া রেডক্রিসেন্ট, যুব রেডক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউট কর্মীরাও আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। এ সময় ব্যাপক পুলিশ সদস্য পুরো এলাকা ঘিরে রাখেন। আর আগুন নিয়ন্ত্রণে নেতৃত্ব দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশনস) মেজর শাকিল নেওয়াজ। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খানও দীর্ঘক্ষণ ঘটনাস্থলে ছিলেন। সকালের দিকে তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন স্টেশনের ২২টি ইউনিট অংশগ্রহণ করেছে। তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. তানহারুল ইসলাম বলেন, সাড়ে তিনটার দিকে পৌঁছি। দুর্বল কাঠামো জন্য ভবনটি ধসে পড়েছে। আগুন নয়, ধোঁয়াই পাশের ভবনগুলোকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন: এদিকে আগুন লাগার বিষয়টি ডেসকোর গুলশান-১ এর স্থানীয় অফিসে জানানোর পর থেকে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। পাশের গুলশান শপিং সেন্টারের নিরাপত্তারক্ষী শহীদ গিয়েই প্রথম সে খবর দেন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে ওই লাইনে পুড়ে যাওয়া দুটি মার্কেটসহ পাকা মার্কেটের পেছনের একটি টাওয়ারে লাইন ছিল। উল্লেখ্য, ব্যক্তিমালিকানাধীন গুলশান শপিং সেন্টারের সংযোগ এক মোবাইল কোর্টের অভিযানে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকে ৮ মাসের বেশি সময় ধরে এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে অন্য এলাকায় বিদ্যুৎসংযোগ স্বাভাবিক ছিল।
ডেসকোর গুলশান বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের ক্লিয়ারেন্স পেলে সংযোগ দেয়া হবে। তবে মার্কেটের কাছের ৬টি ট্রান্সমিটার দৃশ্যত ভালো রয়েছে। তবে কিছু বৈদ্যুতিক তার পুড়েছে।
আশপাশের রাস্তায় মালামালের স্তূপ: ওই মার্কেটের সামনের পার্কিং স্পেস ছাড়িয়ে চার পাশের সড়কে সারাদিন ছিল উদ্ধার করা মালামালের স্তূপ। তবে গুলশান-১ মোড় থেকে শুটিং ক্লাব পর্যন্ত রাস্তাটি সকাল থেকে বন্ধ ছিল। চৌরাস্তার বাকি তিনটিতে যান চলাচল ছিল।
পানির নিচে মার্কেটের পার্কিং স্পেস: আগুন নির্বাপণে ছিটানো পানির নিচে তলিয়ে ছিল উভয় মার্কেটের পার্কিং স্পেস। পায়ের গোড়ালি সমান পানি ভেঙে সারাদিন হাঁটা চলা করেছে ব্যবসায়ী-কর্মচারী ও দমকল কর্মীরা।
ঘটনাস্থলে মেয়র, আইজিপি: গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। তিনি তখন দমকল বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। অগ্নি নির্বাপণের বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন। তখন তিনি বলেন, কোনো নাশকতা নয়, দুর্ঘটনা থেকেই এই আগুন লেগেছে। পরে সেখানে যান পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক।
ডিসিসিআইয়ের সমবেদনা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) মার্কেটে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করা হয়েছে। ডিসিসিআই মনে করে, এ ধরনের ঘটনা একই সঙ্গে দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। এ ঘটনায় শতাধিক দোকান পুড়ে গেছে এবং ব্যবসায়ীরা চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ঢাকা চেম্বার ক্ষতিগ্রস্ত সব ব্যবসায়ীর প্রতিও গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে ও দুঃখ প্রকাশ করছে