১৯শে জানুয়ারী, ২০১৭ইং তারিখে বিশেষ করে জি বাংলা, স্টার জলসা, স্টার প্লাস এই তিনটি ভারতীয় চ্যানেল বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার রিটের বিষয় মহামান্য হাইকোর্ট রায় দিবেন। আমরা আগ্রহ নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা
১) আপনারা জানেন বাংলাদেশের একটি নিজস্ব সংস্কৃতি ও কৃষ্টি রয়েছে। আছে মজবুত সামাজিক মূল্যবোধ। পারিবারিক ও সামাজিক সম্প্রীতির সার্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আমরা বসবাস করে আসছি। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের জীবন যাপনে নানা পরিবর্তন এসেছে। সেখানে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, কৃষ্টি, মূল্যবোধ গুরুত্ব হারাচ্ছে বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মের কাছে।
২) আমরা অনেক দিন ধরে আকাশ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কোন কথা বলছি না। মনে হতে পারে আকাশ সংস্কৃতি আমাদের জীবন ধারণের সাথে মানিয়ে গেছে। হ্যা, বর্তমান স্যাটেলাইটের যুগে তথ্য প্রযুক্তি সহ বিশে^র খবর জানা আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনের চাহিদা হয়ে দাড়িয়েছে। কেননা বিশে^র প্রতিটি দেশেই আমাদের দেশের মানুষ বসবাস করছেন। এবং নানা ক্ষেত্রে তারা দেশের মুখ উজ্জ্বল করে। দেশের অর্থনীতিতে যে রির্জাভের কথা শুনে থাকি তাদের পাঠানো।
৩) কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে আকাশ সংস্কৃতির ব্যাপক কু-প্রভাব। আমরা দুঃচিন্তার সাথে অনুধাবন করছি পারিবারিক ভালবাসার সাবলিল জায়গাগুলো ধীরে ধীরে অনেকখানিক ক্ষয়ে গেছে। এখনই সময় এই কু-প্রভাব থেকে নিজস্ব সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা করা।
৪) আপনারা সচেতন ভাবে জানেন জি বাংলা, স্টার জলসা, স্টার প্লাস এই চ্যানেলগুলো সিরিয়াল নির্ভর অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে। একটু খেয়াল করলে দেখতে পাই এরা প্রতিটি সিরিয়ালে নারী প্রধান চরিত্র চিত্রায়িত করে থাকে। পুরুষ চরিত্রগুলো সহায়ক হয়ে থাকে। এই চ্যানেলগুলোর উদ্দেশ্য নারী দর্শকদের তাদের সিরিয়াল দেখতে বাধ্য করা। বানিজ্যিক উদ্দেশ্য তাদের অন্যতম লক্ষ্য। আমরা সচেতনভাবে এই অবক্ষয়ের শিকার হতে পারি না। কিছু কুফল নিচে তুলে ধরা হলো।
ক) সংসারের কর্ত্রী সিরিয়াল দ্বারা এতোই প্রভাবিত হয়ে থাকেন যে, সব কাজ পড়ে থাকুক কিন্তু সিরিয়াল দেখা মিস করা যাবে না। এতোটাই নেশাগ্রস্থ থাকেন যে, স্বামীর সাথে কলহ করতে তাদের যুক্তির অভাব হয় না।
খ) সন্তানদের লেখাপড়ার খোঁজ রাখার মত বিষয়ে উদাসীন হয়ে থাকে। মাতৃ¯েœহ থেকে শিশুরা বঞ্চিত হয়ে থাকে। শিক্ষিত মা সন্তানদের লেখাপড়ার কোন ভুমিকা রাখতে পারে না। গৃহশিক্ষকের উপর সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব দিয়ে তারা নিশ্চিত। শিশুরা মায়ের ¯েœহ-মমতার বদলে শাসন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।
গ) মেয়েরা পড়ালেখা ভূলে অনৈতিক শিক্ষা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নানা রকম অবাধ্যতা দেখায়। যা পরিবারের জন্য ভয়ের কারন হয়ে যায়।
ঘ) সিরিয়ালে পুরুষ নারীর বাধ্য থাকে সাধারণত। ফলে নারীর ক্ষমতা সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে এদেশের বিবাহিত নারীরা উপলব্ধিতে আনতে পারে না। তাদের অনেকেই পরোকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। গতকাল বাংলাদেশ শিশু ফাউন্ডেশনের রির্পোটে প্রকাশিত হয়েছে। শিশু নির্যাতনের একটি প্রধান কারণ হিসেবে পরোকীয়া উঠে এসেছে।
ঙ) সিরিয়ালের কারণে পরিবারের রান্না-বান্না, শিশুদের স্কুলে নেয়া ইত্যাদি বাড়ির কাজের মেয়ের উপর ন্যাস্ত থাকে। এতেও শিশুদের মানুসিক বিকাশ ভীষণভাবে বাধা গ্রস্থ হয়। শিশুরা বুয়ার আচরনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। যা খুবই স্পর্শকাতর।
চ) সিরিয়াল কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য গঠনে বিরুপ প্রভাব ফেলে। যৌণজীবন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা তাদের মনে আসন করে নেয়। অনেকই পর্নগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ে। অনেক সময় অবাধ্য আচরণে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে।
ছ) ভারতীয় চ্যানেলের প্রতি টিভি দর্শকরা এতোটাই মোহগ্রস্থ যে দেশীয় টিভি অনুষ্ঠান দেখার রুচিই তাদের নষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে আমাদের টিভি নির্মাতারা পর্যাপ্ত বাজেটের অভাবে ভাল কিছু করতে পারছেন না। টিভিগুলোা বিদেশী সিরিয়াল বাংলায় ডাবিং করে বিজাতীয় সংস্কৃতি দেশী
টিভিতে চালাচ্ছে। ফলে দেশীয় সংস্কৃতি দুর্দিনে পড়েছে। ভারতীয় সিরিয়ালের কারণে বাংলাদেশে আত্মহত্যার মত ঘটনাও ঘটেছে যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এসেছে।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা
আমাদের পরিবার ও সামাজিক জীবনে আকাশ সংস্কৃতি অসুখ বাধিয়ে দিয়েছে। আমরা গভীর ভাবে উপলব্ধি করছি। এই অসুখ থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই ভারতীয় চ্যানেল বিশেষ করে জি বাংলা, স্টার জলসা, স্টার প্লাস সহ অন্যান্য চ্যানেলগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা
আপনারা কষ্ট করে আমাদের সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন এজন্য আপনাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মোঃ আমিনুল ইসলাম বুলু
আহবায়ক
জনস্বার্থ রক্ষা জাতীয় কমিটি
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের দপ্তর সম্পাদক ওয়াসিমুল ইসলাম, শরীয়তপুর ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মোঃ বাচ্চু বেপারী, শেখ কামাল উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ আনোয়ার হোসেন রনি, জনস্বার্থ রক্ষা জাতীয় কমিটির অন্যতম সদস্য প্রখ্যাত বংশীবাদক আলাউদ্দিন আলী খাঁ, মোঃ সাইফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, ইব্রাহীম হাসান মিঠু, মোঃ আফজাল হোসেন, মোঃ জামিল হোসেন, মোঃ সিরাজ, মোঃ জাহিদ প্রমুখ।
নির্মাণ শ্রমিকদের দাবি দিবস পালিত
অদ্য ১৮ জানুয়ারি সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নির্মাণ শ্রমিকদের দাবি দিবস উপলক্ষে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) এর উদ্যোগে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ইনসাবের সভাপতি মোঃ রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ডা: ওয়াজেদুল ইসলাম খান, বিলস এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ, ইনসাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আলী হোসেন, সহ সাধারণ সম্পাদক মোঃ হারুন অর রশীদ, সহ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম খোকন, দপ্তর সম্পাদক মোঃ আজিজুর রহমান আজিজ, অর্থ সম্পাদক মোঃ রেজাউল ইসলাম প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্মাণ শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ঝুকিপূর্ণ কাজ করে প্রতিনিয়তই কর্মস্থলে নিহত ও আহত হচ্ছে। নির্মাণ শ্রমিকদের কর্মস্তলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এলাকা ভিত্তিক সেইফটি কমিটি গঠন এবং পরিদর্শন করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদারকি প্রয়োজন। নির্মাণ শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনার জন্য অবিলম্বে পেনশন স্কীম, বাসস্থান, রেশনিং ব্যবস্থাসহ নি¤েœাক্ত ১২ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দাবিসমূহ: (ক) সরকারী উদ্যোগে রাজধানী ঢাকা শহরে থানা ও ওয়ার্ড ভিত্তিক এবং সারাদেশে জেলা নির্মাণ কলোনী স্থাপন করে সুলভ মূল্যে দীর্ঘমেয়াদী লীজ প্রধানের মাধ্যমে নির্মাণ শ্রমিকদের বাসস্থান নিশ্চিত করতে হবে। (খ) নির্মাণ ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্মপরিবেশ এবং নির্মাণ শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। (গ) শ্রম আইনের আওতায় নির্মাণ শ্রমিকদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পেনশন বীমা স্কীম চালু, দূর্ঘটনায় নিহত শ্রমিক- এর ১০ লক্ষ টাকা এবং আহত শ্রমিক- এর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। (ঘ) নির্মাণ শ্রমিকরা তাদের অধিকার বাস্তবায়নে যাতে সহজে আদালতের ¯œরণাপন্ন হতে পারে সে লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলা/ইজেলায় শ্রম আদালত স্থাপন করতে হবে এবং পাওনাদী অধিকার ৪২ দিনের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে হবে। (ঙ) শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেরশনের তহবিল থেকে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য কল্যাণমুখী কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে। (চ) শ্রম আইন সংশোধনী ২০০৬ এর ৩২৩ ধারা মোতাবেক জাতীয় শিল্প স্বাস্থ্য কাউন্সিল গঠনে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাধেশ (ইনসাব) এর প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। (ছ) নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য সস্তা ও সুলভমূল্যো পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। (জ) কর্মস্থলে নির্মাণ শ্রমিকরা যাতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও সহিংসতার শিকার না হয় তা নিষ্চিত করতে হবে। (ঝ) সরকারীভাবে প্রশিক্ষণ প্রধান করে শুধু সার্ভিস র্চাজ নিয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দিয়ে বিদেশে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং বর্তমানে বিদেশে কর্মরত নির্মাণ শ্রমিকদের হয়রানি ও দূর্ভোগ বন্ধ করতে হবে। (ঞ) সরকারী উদ্যোগে বিভাগীয় শহরে থানা ভিত্তিক এবং জেলা ও উপজেলায় শ্রম ছাউনি নির্মাণ করতে হবে। (ট) নারী নির্মাণ শ্রমিকদের সমকাজে সমমজুরী নিশ্চিত করতে হবে। উপরোক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা জানানো হয়।
সমাবেশ শেষে নির্মাণ শ্রমিকদের এক বিশাল র্যালী প্রেসক্লাব থেকে পল্টন মোড়, জিপিও, জিরো পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবে এসে শেষ হয়।