মর্মন্তুদ ঘটনা। একে একে তিন ভাইবোনকে গলাটিপে হত্যা করেছে এক ভাই। শুধু তাই নয়, কুপিয়ে আহত করা হয়েছে অপর বড় ভাইকে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী পূর্বপাড়ায় ঘটে এ মর্মন্তুদ ঘটনা। গতকাল সকালে অভিযুক্ত রুবেল মিয়া (২৩)কে এলাকাবাসী আটক করে পুলিশে দিয়েছে। নিহতরা হলো- মার্জিয়া বেগম (৬), মরিয়ম বেগম (৮) ও ইয়াছিন (১০)। আহত আতিকুর রহমান (২৭)কে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রুবেল পুলিশকে জানায়, সোমবার রুবেলের স্ত্রী ও সন্তান শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যায়। বাবা তৃতীয় ভাই ইসমাইল (১৬)কে নিয়ে নদীতে বাঁশ পরিবহন করতে যায়। ফলে বাড়িতে শুধু মা ও ছোট দুই বোন ছিল।
সন্ধ্যায় রুবেল মাদরাসা থেকে মায়ের কথা বলে ছোট ভাই ইয়াসিনকে ডেকে নিয়ে আসে। ছোট বোন মরিয়মকে নিজ ঘরে ঘুমানোর কথা বলে রাতে মায়ের কাছ থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে দুই ভাইবোনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ দুইজনকে হত্যার পর পাশের রুমে মা কুলসুম বেগমের সঙ্গে ঘুমিয়ে থাকা অপর ছোট বোন মাহিয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
সবশেষ রাত এগারটার দিকে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে রুবেল মাদরাসার শিক্ষক বড় ভাই আতিকুরকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসে। বাড়ির অদূরে পৌঁছলে হঠাৎ পেছন থেকে রুবেল ধারালো অস্ত্র দিয়ে বড় ভাইয়ের মাথায় আঘাত করতে থাকে। এ সময় আতিক চিৎকার শুরু করেন। এলাকাবাসী ছুটে এসে আতিকুরকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে গেলে ভাইবোনদের হত্যার বিষয়টি তাদের নজরে আসে। ঘটনার সময় বাড়ি ও মসজিদের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয় ঘাতক রুবেল।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, স্থানীয় চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার দীপু, জেলা সিআইডি ও পুলিশ ইনভেস্টিগেশন (পিআইবি’র) সহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
ছেলের হাতে শিশু ৩ ছেলেমেয়ের হত্যার ঘটনায় বাকরুদ্ধ মা কুলসুম বেগম। তিনি বলেন, রুবেলই সংসারে তার স্ত্রীর কাজ করা নিয়ে সন্ধ্যায় তার সঙ্গে কথাকাটাকাটি করেছে। কিন্তু ভাইবোনদের মেরে ফেলার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। কারণ ভাইবোনদের সবচেয়ে বেশি আদর করতো রুবেলই।
এ ঘটনায় নিহতদের বাবা আবু কালাম বাদী হয়ে রুবেলের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সে আমার চোখের মণিদের হত্যা করেছে। সে সুযোগ পেলে আমাদেরও মেরে ফেলবে। আমি তার ফাঁসি চাই।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, রুবেল তার স্ত্রী দ্বারা পরিচালিত হতো। তাছাড়া, তার স্ত্রী ক্ষেত খামারে কাজ করতো সেটাও সে পছন্দ করতো না। এ নিয়েই মায়ের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব।
স্থানীয় চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার দীপু বলেন, রুবেল মানসিক প্রতিবন্ধী। নয়তো সে এ ঘটনা ঘটাতে পারতো না। তাছাড়া, রুবেল আলোকবালী উত্তরপাড়া গ্রামের কেরামত শাহ মাজারের ভক্ত ছিল। সে প্রায়ই সেখানে যাওয়া-আসা করতো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহরিয়ার আলম বলেন, নিহতদের লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতের পরিবার ও গ্রেপ্তারকৃতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। যা পাওয়া যাচ্ছে তা খুবই সামান্য বিষয়। এগুলোর জন্য নিজের আপন ভাইবোন খুন করার মতো বিষয় না। ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের জন্য আদালতে তার রিমান্ডের আবেদন করা হবে।