পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম ইস্যুতে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামপ। তবে সংঘর্ষের চেয়ে কূটনৈতিক সমাধানই চাচ্ছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘সম্ভাবনা আছে যে আমরা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বড় বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পরতে পারি।’ তবে তিনি এটাও বলেছেন যে, পূর্বের বেশ ক’জন প্রেসিডেন্টকে ভুগিয়েছে এমন একটি সমস্যার সমাধান তিনি শান্তিপূর্ণভাবে করতে চাইছেন। আর সেজন্য তিনি ও তার প্রশাসন বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তৈরি করছেন। তবে, সামরিক শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা একেবারে বাদ দিয়ে দিচ্ছেন না। তিনি বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই চাই কূটনৈতিকভাবে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে, তবে এটা বেশ কঠিন।’
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ট্রামপ চান দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপনাস্ত্র-বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাডের খরচ পরিশোধ করুক। তার ধারণা মতে সে খরচ প্রায় ১০০ কোটি ডলার। এ ছাড়াও সিউলের সঙ্গে গভীর বাণিজ্য ঘাটতি ঘটার কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি পুনর্বিবেচনা বা বাদ দিতে চান তিনি। তিনি কখন এই চুক্তি পুনর্বিবেচনার ঘোষণা দেয়ার কথা ভাবছেন, সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খুব শিগগির।’
তিনি আগামী মাসে নির্ধারিত ইউরোপ সফরের পাশাপাশি ইসরায়েল ও সৌদি আরবেও যেতে চান। ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে শান্তি দেখতে চান বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। এ সময় সৌদি আরবের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ তোলেন যে দেশটি মার্কিন প্রতিরক্ষার জন্য ন্যায্য খরচ দিচ্ছিলেন না। জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস নিয়ে তিনি বলেন, জঙ্গিদের অবশ্যই পরাজিত করতে হবে।
উত্তর কোরিয়ার লাগাম টেনে ধরতে চীনের অবদান সমপর্কে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি খুব চেষ্টা করছেন। তিনি অবশ্যই গোলযোগ আর মৃত্যু দেখতে চান না। তিনি খুবই ভালো একজন মানুষ। তিনি চীনকে ভালোবাসেন, চীনের মানুষকে ভালোবাসেন। আমি জানি তিনি চাইবেন কিছু একটা করতে। হয়তোবা তিনি করতে পারছেন না।’ রয়টার্সের সঙ্গে ৪২ মিনিটের ওই সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো জানান, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আবার কথা বলতে তার কোনো সমস্যা নেই। যদিও তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার প্রথম ফোনালাপে চীন ক্ষুব্ধ হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমার সমস্যা হচ্ছে আমি প্রেসিডেন্ট শি-র সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে একটি ঘনিষ্ঠ সমপর্ক তৈরি হয়েছে। আর আমার পুরোপুরিভাবে মনে হয় যে তিনি আমাদেরকে এই কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্য করার জন্য তার ক্ষমতাবলে যতটুকু করা যায় তার সবটুকুই করছেন। আমি চাইবো না তার জন্যে এখন কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে। তাই আমি অবশ্যই তার সঙ্গে আগে কথা বলবো।’
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনকে বিচারবুদ্ধিসমপন্ন মানুষ হিসেবে দেখেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রামপ বলেন, তিনি বিচারবুদ্ধিম্পন্ন কিনা সে বিষয়ে তার কোনো অভিমত নেই। তবে তিনি আশা করেন কিম একজন বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ হবেন। তিনি এটাও বলেন যে কিম জং উন খুব অল্প বয়সে দেশ শাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন।
উত্তর কোরিয়াকে নিজের সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন ট্রামপ। ইতিমধ্যে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কায় একটি সাবমেরিন পাঠানো হয়েছে কোরীয় উপসাগরে। যাত্রাপথে রয়েছে বিধ্বংসী শক্তিসমপন্ন রণতরী কার্ল ভিনসন। এ ছাড়া নতুন করে উত্তর কোরিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কঠোর করার চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার ডনাল্ড ট্রামপ তার ওয়ান-পেজ ট্যাক্স পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। তার এই পরিকল্পনা বাণিজ্য ঘাটতি বাড়াবে বলে তুমুল সমালোচনার সম্মুখীন হয়। সে বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এমন সব বাণিজ্য চুক্তি করবো যা এই বাণিজ্য ঘাটতির বেশির ভাগই পূরণ করে দিবে। আমরা যেসব বাণিজ্য চুক্তি করবো সেগুলো হবে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি ভালো।’