‘৪ বলে ৯২’ ও ‘৭ বলে ৬৯’ রান দেয়ার অভিযোগে দুই বোলারকে নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দুই দলের কোচ ও ম্যানেজারকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ৫ বছরের জন্য। দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব লালমাাটিয়া ও ফিয়ার ফাইটাইর্সকেও চির নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল বিসিবি’র আম্পায়ার্স ও শৃঙ্খলা কমিটির চেয়ারম্যান শেখ সোহেল বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তাকে এই দুই ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছিল। কমিটিতে সদস্য ছিলেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস। তারা ক্রিকেটার, কোচ, ক্লাব কর্মকর্তা ও আম্পায়ারদের শুনানি ও তদন্ত শেষে এই সিদ্ধান্ত নেন। শেখ সোহেল বলেন, ‘দেশের ক্রিকেটকে যারা ধ্বংস করতে চায় তাদের আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছি। দুই ক্লাব লালমাটিয়া ও ফিয়ার ফাইটার্সকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দুই বোলার সুজন মাহমুদ ও তাসনিম হাসানকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই দুই ম্যাচে যে সকল আম্পায়ার ম্যাচ পরিচালনা করেছেন তাদেরও ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর দুই কোচ ও ম্যানেজারদের ৫ বছর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
গত ৭ই এপ্রিল সিটি ক্লাব মাঠে এক্সিওম ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে সুজনের দেয়া ৪ বলে ৯২ রান নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়। ক্রিকেটার ও ক্লাবের পক্ষ থেকে বলা হয় মাঠে আম্পায়ারদের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। বিদেশি নানা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এই খবর। এতেই বেশ ভালোভাবে নড়েচড়ে বসে বিসিবি। এ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আগের দিন ইন্দিরা রোড ক্রীড়াচক্রের বিপক্ষে ফিয়ার ফাইটার্সের বোলার তাসনিম হাসানের ৭ বলে ৬৯ রান দেয়ার ঘটনাও। এক সপ্তাহ তদন্ত শেষে তিন সদস্যের কমিটি ঘটনার সত্যতা খুঁজে পায়। তবে যে আম্পায়ারদের বিপক্ষে প্রতিবাদ করতে গিয়ে এই ঘটনার জন্ম সেই আম্পায়াররা শাস্তি পেয়েছে মাত্র ছয় মাস করে। ফিয়ার ফাইটার্সের কোচ আনোয়ার মোস্তাকিন নিজের শাস্তির কথা শুনে বিস্মিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মাঠে বোলারদের আমিতো কোন নির্দেশ দেইনি। যখন বোলার এমন করে তখন তাকে থামানোর কথা মাঠে আম্পায়ারের। তারা কেন সেই সময় বোলারকে থামায়নি। ক্রিকেটের নিয়মেতো মাঠে আম্পায়ারই সব। আমাকে কেন শাস্তি দেয়া হলো জানি না। তবে এখনও আমি কোন অফিসিয়াল লেটার বিসিবি’র কাছ থেকে পাইনি। যখন পাবো তখন অনুষ্ঠানিকভাবে আমার করণীয় ঠিক করবো। আম্পায়ারদের শাস্তির বিষয়ে শেখ সোহেল বলেন, ‘আম্পায়াররা খেলা ঠিকমতো পরিচালনা করতে পারেননি। তারা ছয় মাস করে নিষিদ্ধ হয়েছেন।’
অন্যদিকে ক্লাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি কোনোভাবেই মানতে পারছেন না কর্মকর্তারা। ৪০ বছরের পুরনো লালমাটিয়া ক্রিকেট ক্লাব। ক্লাবটির ক্রিকেট সম্পাদক আদনান রহমান দিপনও পাঁচ বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিষিদ্ধ। বিসিবি’র এমন সিদ্ধান্তে হতাশ ও বিস্মিত তিনি। তিনি বলেন, ‘আমিও মানছি যা ঘটেছে তা ক্রিকেটের জন্য গ্লানির। দেশের ক্রিকেটের সুনাম-সুখ্যাতিতে একটা কালো দাগ। আমিও দুঃখিত। লজ্জিত। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, ঘটনাটি ঘটিয়েছে ক্রিকেটাররা। এবং সেটা আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে। ওই ঘটনার সঙ্গে ক্লাবের কোনোই সম্পৃক্ততা ছিল না।’ ক্লাবকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে তিনি বলেন, ‘৪০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আজীবনের নিষিদ্ধ করার যৌক্তিকতা খুঁজে পাই না আমি। ক্লাবের এখানে কি দোষ! আর আমাকেই বা ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো কেন? আমি তো মাঠেই ছিলাম না। আমার অনুপস্থিতিতে একটা ঘটনা ঘটেছে, যারা ঘটিয়েছে, তারাই বলেছে আমি কিছুই জানি না। তারপরও আমাকে নিষিদ্ধ করা কেন? আমি কিছুই বুঝলাম না।’
অন্যদিকে ফিয়ার ফাইটার্সের যুগ্ম সম্পাদক খোকন বলেন, ‘আসলে এখনই আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কারণ কোনো কাগজই হাতে পাইনি। বিসিবি আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে পরে সিদ্ধান্ত নিবো কি করণীয়। তবে আমি বিস্মিত যে ঘটনার সঙ্গে ক্লাব জড়িত নয় সেখানে কেন ক্লাবকে নিষিদ্ধ করা হলো?’ তবে ফেয়ারফাইটার্সের এক কমকর্তা না প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিসিবি কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাগজ পেলে আমরা হয়তো আইনিভাবে যেতে পারি। তবে ক্লাবের সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেবো আমাদের পরবর্তী করণীয় কী হবে?’
প্রতিবাদ হয়েছিল গত বছরও
মাঠে খেলা শুরুর পর থেকে গোটা দায়িত্বই আম্পায়ারদের ওপর। ভালো-মন্দ সবকিছুরই সিদ্ধান্ত নেন তারা। এমনকি তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই ম্যাচ রেফারিরা শাস্তি দিয়ে থাকেন। তাই ৪ বলে ৯২ দেয়ার সময় কেন বোলারকে থামাননি আম্পায়ার? খেলায় বিসিবি বা সিসিডিএমের কোনো কর্মকর্তা কি ছিলেন না? তার ভূমিকা কী ছিল? সেই প্রশ্ন এখন নিষিদ্ধ হওয়া ক্লাব কর্মকর্তা ও কোচদের। দুই বোলারকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি কোচ, ম্যানেজার ও ক্লাবকেও নিষিদ্ধ করেছে বিসিবি ঘোষিত তদন্ত কমিটি। সেখানে যে বাজে আম্পায়ারিংয়ের কারণে এ ঘটনার জন্ম তাদেরই শাস্তি মাত্র ছয় মাস! যদিও ক্লাবগুলোর পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ ছিল না বলে জানা গেছে। কিন্তু ফিয়ারফাইটার্সের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি ঠিক নয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিবাদ করে আসছি। গত বছর আমরা প্রতিবাদ করেছি উইকেটে শুয়ে। তখনো তো ঘটনাটি বিসিবি জানতো। সেবারও আম্পায়ারদের বিপক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এবার নেয়া হলো তা মাত্র ছয় মাস! আমরা আসলে আর কিভাবে প্রতিবাদ করবো। এমন চলতে থাকলে দেশের ক্রিকেটের ১২টা বাজতে খুব একটা বাকি নেই।’