সেগুনবাগিচার একটি প্রতিষ্ঠানের ১৬ জন ক্যান্টিন বয়ের মধ্যে ১৪ জনই চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত। জ্বরের সঙ্গে তাদের প্রচণ্ড ব্যথা, বমি ও শরীরে উঠেছে র্যাশ। ওদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে চিকুনগুনিয়া জ্বরে ভুগছি, সেই সঙ্গে শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে কি যে ব্যথা, প্রথমে স্ত্রী, তারপর ছেলেমেয়ে ও এখন আমি, সবাই দোয়া করবেন প্লিজ, এ ধরনের
পোস্ট চোখে পড়ছে। রাজধানীর অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে। গত আড়াই মাস ধরে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় নগরবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে এক ধরনের আতঙ্ক। প্রতিদিনই জ্বরে আক্রান্তরা চিকিৎসার জন্য ছুটছেন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। অথচ এ ভাইরাসটি শনাক্তে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় রি-এজেন্ট রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে নেই। ফলে রোগ নির্ণয় ছাড়াই শুধু লক্ষণ দেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গত ৮ই জুন পর্যন্ত ৪৪৯ রোগী চিকুনগুনিয়ার টেস্ট করাতে মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) রক্তের নমুনা জমা দেন। পরীক্ষা করে ৩২৪ জনের শরীরেই চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস পাওয়া যায়। এ হিসাবে ৭২ দশমিক ১৬ শতাংশ জ্বরাক্রান্ত রোগীই চিকুনগুনিয়ায় ভুগছেন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গত আড়াই মাস ধরে চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত রোগীর নমুনা তারা পাচ্ছেন। যাদের দেহে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস পাওয়া গেছে তারা সবাই ঢাকার বাসিন্দা। ঢাকার বাইরের কোনো রোগী তারা পাননি। তবে এ ভাইরাসে আক্রান্তের হার কলাবাগান, কাঁঠালবাগান, বনশ্রী, মহাখালী এলাকায়ই বেশি। আইইডিসিআরের তথ্য মতে, চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত জ্বর যা আক্রান্ত মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। হঠাৎ জ্বর আসার সঙ্গে গিঁটে গিঁটে প্রচণ্ড ব্যথা, মাথাব্যথা, মাংসপেশি ব্যথা, বমিবমি ভাব, চামড়ায় লালচে দানা দেখা যাওয়া এর লক্ষণ। মূলত এডিস মশার কামড়ে এ ভাইরাস ছড়ায়। মশাগুলো সাধারণত দিনেরবেলা কামড়ায়। এ ছাড়া চিকুনগুনিয়া ভাইরাস আক্রান্ত রক্তদাতার রক্ত গ্রহণ এবং ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার সময় অসাবধানতাবশতও এ রোগ ছড়াতে পারে। এ জ্বর তিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত হতে পারে। তবে জ্বর সেরে গেলেও ব্যথা থাকে দীর্ঘ সময়। এ রোগ প্রতিরোধে কোনো ভ্যাকসিন নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হওয়ায় এডিশ মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। মশার উপদ্রব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ। চিকনগুনিয়া আক্রান্তদের প্রচুর পানি, শরবত, স্যালাইন, ডাবের পানি পান করতে হবে। ওষুধ বলতে শুধু প্যারাসিটামল। ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, চলতি বছর হঠাৎ ভারি বর্ষণ হওয়ায় এবার মশার বংশবিস্তারের কারণ। ফলে মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়েছে। তবে এ বিষয়ে গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কাজ করছে। জেলার সিভিল সার্জন ও উপজেলা পর্যায়ে মেডিকেল কর্মকর্তাদেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। র্যালি, স্কুলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা এবং মসজিদের ইমামদের এ বিষয়ে কথাবার্তা বলতে বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, গত কয়েক মাসে প্রাইভেট চেম্বারে তিনি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কয়েক শ’ রোগী পেয়েছেন। রাজধানীতে চিকুনগুনিয়া রোগের প্রকোপ বাড়ছে। আক্রান্তের প্রথমদিন থেকেই রোগীর অনেক বেশি তাপমাত্রায় জ্বর ওঠে, যা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। একই সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, বিশেষ করে হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা দেখা দেয়। চিকুনগুনিয়া আর ডেঙ্গু দুটি রোগের বাহক এডিস মশা। তাই বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সে ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।