কয়েক বছর আগেও নতুন জামা কাপড়ের সঙ্গে বিভিন্ন শিল্পীর অ্যালবামের জন্য ঈদে অপেক্ষা করেছেন শ্রোতা-দর্শক। কখন প্রিয় শিল্পীর অ্যালবাম ঈদ উপলক্ষে শুনবেন তার জন্য অনেক আগে থেকেই ছিল অধির আগ্রহে অপেক্ষা। আর শ্রোতাদের কথা মাথায় রেখে অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোও সাজতো অন্যরকম রঙে। বিভিন্ন শিল্পীর একাধিক একক, দ্বৈত ও মিশ্র অ্যালবাম প্রকাশ করতো তারা। আর সেটি নিয়ে চলতো জোর প্রচারণা। অ্যালবামের পোস্টারে ছেয়ে যেত পুরো দেশ। কিন্তু সেই অবস্থা এখন আর নেই। সময়ের সঙ্গে পাল্টে গেছে অবস্থা। ঈদের অ্যালবামের সেই আমেজ আর নেই। থাকবে কিভাবে! দেশের বেশিরভাগ সিডির দোকানই বন্ধ হয়ে গেছে। সবাই গান শুনছে মোবাইল কিংবা ইউটিউবে। আর গত বছর থেকে অনেকটাই ঝড়ের মতো চিত্রপট পরিবর্তন হয়েছে অডিও ইন্ডাস্ট্রির। এই সময়ে সিডি মাধ্যম অনেকটাই বিলুপ্ত হয়েছে। বর্তমানে বেশিরভাগ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ফিজিক্যাল সিডি প্রকাশ বন্ধ রেখেছে। কারণ ফিজিক্যাল সিডি বিক্রি হয় না বললেই চলে। সবাই গান প্রকাশ করছে ডিজিটালি। গত বছর ডিজিটালি অনেক অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে। এই ধারা অব্যহত ছিল চলতি বছরের ভালোবাসা দিবস পর্যন্ত। কিন্তু গত দুই মাসে অবস্থা আরো পাল্টেছে। ফিজিক্যালিতো বটেই, এখন ডিজিটালিও পূর্ণ অ্যালবাম প্রকাশ প্রায় বন্ধ। কারণ এর পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে সিঙ্গেল। কেউ কেউ তিন গান নিয়ে ইপি প্রকাশ করছেন। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবথেকে বেশি প্রকাশ হচ্ছে সিঙ্গেল। একটি গান প্রকাশ হচ্ছে অডিও কিংবা ভিডিওর মাধ্যমে। আর সেটা নিয়েই চলছে
প্রচারণা। আর এমন অবস্থার মধ্যে দিয়েই চলছে রোজার ঈদ বাজারের প্রস্তুতি। এই বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও আছে। অনেকেই ডিজিটালি সিঙ্গেল প্রকাশকে মনে করছেন বিশ্বায়নের প্রভাব ও যুগের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া। আবার অনেকে অ্যালাবামের পক্ষেও মত দিয়েছেন। বলছেন সিঙ্গেল- এ সেই স্বাদ নেই যেটা অ্যালবামে রয়েছে। একজন শিল্পীর পরিচিতিই হচ্ছে একটি অডিও অ্যালবাম। এ বিষয়ে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী বলেন, অ্যালবাম হলো একজন শিল্পীর পরিচয়। একজন শিল্পীর সম্মান। সেটার আবেদন কখনই অন্য কিছু দিতে পারবে না। যদিও এখন সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে। অ্যালবামের বদলে সিঙ্গেল প্রকাশ হচ্ছে বেশি। তবে আমি চাইবো এর পাশাপাশি ফিজিক্যালি ও ডিজিটালি অ্যালবাম প্রকাশও যেন হয় সেটার দিকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজর দিতে। এ বিষয়ে আরেক জনপ্রিয় শিল্পী রবি চৌধুরী বলেন, দেখবেন একটা গানের সিডি হাতে নিলেই কিন্তু খুব ভালো লাগে। সেটার বিকল্প কিছু হতে পারে না। সিঙ্গেল হোক তাতে আপত্তি নেই। তবে অ্যালবাম কিছু হলেও প্রকাশের ট্রেন্ডটা যেন চালু থাকে সেটাই চাইবো। এদিকে আসছে ঈদে থাকবে সিঙ্গেলের জোয়ার। প্রায় দেড়শ সিঙ্গেল প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। থাকছে হাতে গোনা কিছু ইপি অ্যালবাম। সিনিয়র শিল্পীদের মধ্যে কুমার বিশ্বজিৎ, সামিনা চৌধুরী, ফাহমিদা নবী, পলাশ, রবি চৌধুরী, এসডি রুবেল ও আসিফ আকবরের কণ্ঠে শোনা যাবে ঈদের নতুন গান। তবে বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে এবার সব থেকে বেশি প্রকাশ হবে তরুণদের গান। তাই এবারের ঈদ বাজারকে তারণ্যনির্ভর বললে ভুল হবে না। এই ঈদে সর্বোচ্চ সংখ্যক অ্যালবাম ও গান প্রকাশ হচ্ছে হালের মিউজিক ক্রেজ ইমরানের। অ্যাডবক্স, সিডি চয়েজ ও সংগীতার ব্যানারে তিনটি ইপি ও অন্যান্য কোম্পনি থেকে কয়েকটি সিঙ্গেলস প্রকাশ হবে তার। এছাড়া কমপক্ষে দুটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশ হবে এ শিল্পীর। আরেক জনপ্রিয় শিল্পী ন্যান্সির কয়েকটি নতুন গান প্রকাশ হবে মিশ্র অ্যালবামে। আর কনার সিঙ্গেল ‘মেঘ গেলো’ প্রকাশ হয়েছে সংগীতার ব্যানারে। মাই সাউন্ড থেকে প্রকাশের কথা রয়েছে আরফিন রুমির নতুন সিঙ্গেল। অন্যদিকে কাজী শুভর ইপি প্রকাশ হবে লেজারভিশনের ব্যানারে। একই ব্যানার থেকে প্রকাশ হবে ঐশীর সিঙ্গেল ‘নীলিমা’। সাউন্ডটেক ও লেজারভিশন প্রকাশ করছে সালমার একটি করে সিঙ্গেল। জিসান মাল্টিমিডিয়া থেকে প্রকাশ হবে আতিক হাসানের ‘কন্যা’ এবং বিউটির ‘পাষান বন্ধু’ শীর্ষক ইপি অ্যালবাম। এছাড়াও তাহসান, মিনার, তানজীব সারোয়ার, পূজা, বেলাল খান, মিলন, মোহনা, নদী, ঝিলিক, পুলকসহ এই প্রজন্মের আরো বেশ কিছু শিল্পীর সিঙ্গেল ও ইপি অ্যালবাম প্রকাশ হবে। এসব গানের মাধ্যমে অডিও ইন্ডাস্ট্রি ঈদে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে বেশ কঠিন অবস্থায় পড়বে পুরো ইন্ডাস্ট্রি, এমনটাই মনে করছেন সংগীতবোদ্ধারা।